বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কেন্দ্র দখল হলে বয়কট-হরতাল প্রস্তুতি স্থানীয় বিএনপির

শফিউল আলম দোলন

কেন্দ্র দখল হলে বয়কট-হরতাল প্রস্তুতি স্থানীয় বিএনপির

আজকের নির্বাচনে ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারি দলের পক্ষ থেকে জোর-জবরদস্তি বা কেন্দ্র দখল করে নিলে সংশ্লিষ্ট পৌরসভার বিএনপি দলীয় প্রার্থীর পক্ষ থেকে সঙ্গে সংঙ্গেই নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে স্থানীয় বিএনপির পক্ষ থেকে সেখানে এক থেকে টানা দুই দিনের হরতাল কর্মসূচি ঘোষণারও প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন দলটির মনোনীত প্রার্থীরা। গতকাল রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলে বিভিন্ন এলাকার প্রার্থী ও দলীয় নেতারা টেলিফোন করে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তবে পৌর নির্বাচনে ভোট কারচুপি বা জোর-জবরদস্তির মতো ঘটনার অভিযোগ উঠলে তার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয়ভাবে হরতালের মতো কোনো কর্মসূচি ঘোষণার পরিকল্পনা আপাতত বিএনপির নেই বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, কেন্দ্রীয়ভাবে হরতাল বা কোনো ধরনের কর্মসূচির পরিকল্পনা নেই। স্থানীয়ভাবে নেতারা কোন এলাকায় কী সিদ্ধান্ত নেবেন তা জানি না। তবে কেন্দ্রে যদি বিএনপি প্রার্থীদের লোকজনকে থাকতে না দেওয়া হয়, দাঁড়াতে দেওয়া না হয়— তাহলে নির্বাচন করা আর না করা তো সমান কথা। সেক্ষেত্রে বয়কটের ঘোষণা কিংবা কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচি তো সংশ্লিষ্ট প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা দিতেই পারেন। এটা তো অস্বাভাবিক কিছু নয়। গতকালও বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি প্রার্থীদের নির্বাচনী এজেন্টদের নামে একাধিক মামলা দিয়ে গ্রেফতারে অভিযান চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। কেন্দ্রীয় বিএনপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, তারা ইতিমধ্যেই দেশের প্রায় ৫০টি পৌরসভাকে অতীব ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট অনুষ্ঠিত হলে সরকারি দলের প্রার্থীরা প্রশাসনের সহায়তায় কেন্দ্র দখলসহ ফলাফল কেড়ে নেওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। এ ছাড়াও আরও অনেক পৌরসভা আছে যেগুলোর অনেক কেন্দ্রেই দখল করে নেওয়া হতে পারে। এসব এলাকায় নেতা-কর্মীদের আগে থেকেই তা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে প্রশাসন ও পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায় ভোট কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটলে সেসব স্থানে নির্বাচন বয়কট ও হরতালের মতো কর্মসূচি ঘোষণাসহ তা পালনের জন্য স্থানীয় বিএনপির পক্ষ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ময়মনসিংহ, জামালপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বরগুনা, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, নাটোর, জয়পুরহাট, লালমনিরহাট, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, নওগাঁ, বগুড়া, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, যশোর, খুলনা জেলার প্রায় অর্ধশত পৌরসভাকে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে স্থানীয় বিএনপির পক্ষ থেকে। এ ছাড়া উল্লিখিত জেলাসমূহের বিভিন্ন পৌর এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে— বরগুনা : ২৭টি কেন্দ্রের ২৭টিই, পাবনা : ১০৭টির সবগুলোই, বাগেরহাট : ২৪টির মধ্যে ২৩টি, সিরাজগঞ্জ : ১৩৬টির মধ্যে ৪৯টি, জামালপুর : ৯৯টির মধ্যে ৯৬টি, গাইবান্ধা : ৫২টির মধ্যে ৪৭টি, নাটোর : ৭১টির ৪০টি, কুমিল্লা : ৮৫টির মধ্যে ৬৬টি, লালমনিরহাট : ২৭টির মধ্যে ১৫টি, জয়পুরহাট : ৩৮টির মধ্যে ২৮টি, রাজশাহী : ১৩৮টির মধ্যে ৩৯টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ : ৮৯টির মধ্যে ২৪টি, চুয়াডাঙ্গা : ৭২টির মধ্যে ৪৭টি, দিনাজপুর : ৯৩টির মধ্যে ৭৪টি, নীলফামারী : ৪২টির মধ্যে ২৭টি, ময়মনসিংহ : ৯৬টির মধ্যে ৬৪টি, লক্ষ্মীপুর : ৩৯টির মধ্যে ২৬টি, মৌলভীবাজার : ৪১টির মধ্যে ২৮টি, নওগাঁ : ৪৯টির মধ্যে ৩৯টি, বগুড়া : ১৭৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭৫টি, যশোর : ১২৬টির মধ্যে ৮৬টি, পটুয়াখালী : ৭টি। এসব কেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে বিএনপি।

সর্বশেষ খবর