শিরোনাম
বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কোথাও কেউ নেই জাতীয় পার্টির

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

আজ দেশের ২৩৪ পৌরসভায় ভোট। অথচ সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি অংশ নিচ্ছে মাত্র ৭৬টিতে। ভোটের দিন দেশে থাকছেন না পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। গতকাল থাইল্যান্ডের উদ্দেশে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেছেন তিনি। পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু পিতার শারীরিক অসুস্থতার কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। জিয়াউদ্দিন বাবলুর পিতাকে দেখতে থাইল্যান্ডে গেছেন এরশাদ। ভারপ্রাপ্তের দায়িত্বে চেয়ারম্যান, মহাসচিব কেউ নেই। অভিভাবকহীন জাতীয় পার্টি। নির্বাচন মনিটরিংয়ের জন্য কার্যকর কোনো সেল নেই। কেন্দ্রীয় কার্যালয় অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে। পার্টির ৪২ প্রেসিডিয়ামের কোনো সদস্য প্রার্থীদের জন্য প্রচারণায় যাননি। মাঠে নানা অনিয়ম হলেও কেন্দ্রে পার্টির চেয়ারম্যান ছাড়া কাউকে অবহিত করতে পারেননি প্রার্থীরা। এ যেন প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি কোথাও না থাকা। জানা যায়, পৌরসভা নির্বাচনে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা মাঠে হিমশিম খাচ্ছেন। সারা দেশে প্রার্থী নির্ধারণ থেকেই শুরু এ অবস্থার। এখন ২৩৪ পৌরসভার মধ্যে মাত্র ৭৬টিতে মেয়র পদে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মাঠে থাকলেও অধিকাংশ প্রার্থী মাঠে দাঁড়াতেই পারেননি। জাপা প্রার্থীদের অভিযোগ, সরকারি দলের প্রার্থীরা তাদের প্রচারণায় বাধা দিচ্ছেন। প্রশাসনের কাছে নালিশ করার জন্য পার্টির কোনো কেন্দ্রীয় নেতাকে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি কেন্দ্র থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে না। ফলে মাঠে হিমশিম খাচ্ছেন প্রধান বিরোধী দলের প্রার্থীরা। কেউ কেউ বলছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো পৌর নির্বাচনে ভরাডুবিতে পড়তে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি। তবে সবাই মিলে চেষ্টা করলে বেশ কয়েকটি পৌরসভায় ভালো ফল করা যেত। জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা ৯৩টি পৌরসভায় মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে পাঁচজন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বাকিদের বাতিল হয়েছে। জানা যায়, নামকাওয়াস্তে একটি নির্বাচন সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রধান সমন্বয়ক দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা কোনো দিন মিটিংও করেননি। পার্টির ৪২ জন প্রেসিডিয়ামের একজনও কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেননি। দলের অধিকাংশ সংসদ সদস্য এলাকায় প্রার্থী দিতে পারেননি। এমনকি কোনো কোনো এমপি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু তার পিতার অসুস্থতার কারণে বিদেশে অবস্থান করছেন। এরশাদ সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে দলীয় সমাবেশে পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে নানা অনিয়মের কথা বলেছেন। তিনি ইতিমধ্যে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতোই সকাল ৯টায় পৌরসভা নির্বাচন শেষ হয়ে যাবে। তিনি এও বলেছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ড নেই। জানা যায়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচনের আমেজ লক্ষ্য করা গেলেও জাপা সমর্থকদের মধ্যে হতাশা। কারণ তারা মনের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী আমেজ জমাতে পারেননি। পার্টির প্রার্থীরা সবাই হতাশায়। কাকরাইলের পার্টি অফিস শূন্য। প্রতিনিয়ত প্রার্থীরা কেন্দ্রে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কাউকে পাশে পাচ্ছেন না। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বাধা পাচ্ছেন। হিমশিম খাওয়ার কারণ হিসেবে দলটির সাংগঠনিক দুর্বলতার কথাও বলছেন অনেকে। তা ছাড়া দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এ নির্বাচন নিয়ে কোনো ভূমিকাও রাখছেন না। তবে জাতীয় পার্টি রাজধানীতে সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছে। সম্প্রতি বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সম্মেলন করেছে। ঢাকা-৪ আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ঢাকা-৮ আসনে রয়েছেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ। এ ছাড়া ঢাকা-৫ আসনে মাঠ গোছাচ্ছেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদ, ঢাকা-৯ আসনে প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, ঢাকা-৮ আসনে জহিরুল আলম রুবেলসহ প্রায় প্রতিটি আসনে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

জাপার তৃণমূলের একাধিক নেতা জানান, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সাবেক বিরোধী দল বিএনপি তাদের প্রার্থীদের পক্ষে প্রতিদিন কেন্দ্রীয়ভাবে বিভিন্ন সমস্যা গণমাধ্যম ও দলীয় নেতা-কর্মীদের জানালেও জাপার প্রার্থীরা এই ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট ও কেন্দ্রের কোনো দিকনির্দেশনা পাচ্ছেন না। জাপার একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, বিরোধী দলের আসনে থাকা জাপার শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সমন্বয় নেই।

সর্বশেষ খবর