শিরোনাম
বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

রাতেই সিল মারার অভিযোগ

রাজশাহীতে বিজিবির গাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচনের আগের রাতে ভোট কেন্দ্র দখল করে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের একটি কেন্দ্রে ব্যালটবক্সে সিল মারার অভিযোগ উঠেছে। রাজশাহীর কাঁটাখালী পৌরসভার হরিয়ানে টহলরত অবস্থায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) গাড়ি লক্ষ্য করে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন স্থানে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। ভোট কেন্দ্র দখলের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অধিকাংশ বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।

অনেক স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপির নেতা-কর্মীদের মারধর ও গ্রেফতারের অভিযোগ উঠেছে। গোপালগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন প্রার্থীর এজেন্টদের হুমকি-ধমকি দেওয়ার তথ্যও পাওয়া গেছে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

বিজিবির গাড়ি লক্ষ্য করে ককটেল হামলা : নিজস্ব প্রতিবেদক রাজশাহী জানান, রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠ কাঁটাখালী পৌর এলাকার হরিয়ানে টহলরত অবস্থায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) গাড়ি লক্ষ্য করে ককটেল বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। গাড়িটি ওই এলাকায় নির্বাচনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ককটেলটি গাড়িতে লাগার আগেই বিস্ফোরণ ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিজিবির গাড়িটি কাঁটাখালী থেকে হরিয়ানের দিকে যাচ্ছিল। পথে গাড়িটিকে লক্ষ্য করে ককটেল হামলা চালানো হয়। তবে ককটেলটি গাড়ির পাশে বিস্ফোরিত হয়। এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য ১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের সঙ্গে বেশ কয়েকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে সিল মারার অভিযোগ : আমাদের কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গতকাল রাত ৮টার দিকে বাজিতপুরের নিতারকান্দি এলাকায় বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে সিল মারার অভিযোগ ওঠে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেন মাস্টার, মোস্তফা কামালসহ দলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী কেন্দ্রে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সামনেই ব্যালট পেপারে সিল মারতে থাকেন। এ সময় তারা ছিলেন নির্বিকার। পরে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে জানান, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কেন্দ্র দেখতে এসেছেন। এ সময় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন আশরাফ, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী শওকত আকবর ও বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী এহেসান কুফিয়ার সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। এতে উভয় পক্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল থেকে আওয়ামী লীগের দুই সমর্থককে আটক করা হয়। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী শওকত আকবর অভিযোগ করেছেন, সংসদ সদস্য আফজাল হোসেনের নেতৃত্বে আজ সারা দিন মোটর শোভাযাত্রাসহ কেন্দ্রে কেন্দ্রে গিয়ে জনগণের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিরোধী পক্ষরাই কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করেছিল।

মেয়র প্রার্থীর চার পোলিং এজেন্ট আটক : পাবনা প্রতিনিধি জানান, সাঁথিয়ায় বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর চার পোলিং এজেন্টকে আটক করেছে পুলিশ। রাত ৯টার দিকে পুলিশ পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের আটক করে। বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ, নির্বাচনে তাকে হয়রানি করতেই তাদের পুলিশ আটক করেছে। পুলিশ দাবি করে, একজনের বিরুদ্ধে নাশকতা মামলা ও তিনজনকে নির্বাচনে টাকা লেনদেনের সময় স্থানীয়রা ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে আমাকে হয়রানি করতেই আমার পেলিং এজেন্টদের আটক করা হচ্ছে। টাকা লেনদেনের কোনো বিষয় এখানে নেই। নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই আমাদের লোকজনের ওপর পুলিশ প্রশাসন দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। তবে ওসি বিষয়টি অস্বীকার করেন।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গোপালগঞ্জ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জানে আলম সিকদার কমেট ও কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আল আমিনের সমর্থকদের মধ্যে হেলিপ্যাড এলাকায় গতকাল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় গ্রুপের অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দুজনকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জানা যায়, দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা প্রথমে কথা কাটাকাটি ও পরে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, নলছিটি পৌরসভায় বিভিন্ন অনিয়মের কথা তুলে ধরে জেলা বিএনপি গতকাল দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে। এ সময় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বলেন,  বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবুর রহমানের কর্মী, সমর্থক ও এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি, হুমকি ও নির্বাচনী কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োজিত এজেন্টরা এখন ঘরছাড়া। এদিকে রাত সাড়ে ১১টায় নলছিটি পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী খান জামাল হোসেন ও দেলোয়ার হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। এ সময় দেলোয়ার হোসেনের সমর্থক মো. শামীমকে মাথায় আঘাত করে প্রতিপক্ষের সমর্থকরা। পরে তাকে নলছিটি উপজেলা হাসপাতাল কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। দুজনই আওয়ামী লীগ সমর্থক।  বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, নির্বাচনকে ঘিরে লামা পৌর এলাকায় চকরিয়া, কক্সবাজার ও লোহাগাড়া উপজেলার বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়েছে। এদের মধ্যে অনেকে খুনি, পলাতক আসামি ও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী। বহিরাগত অনেক উপজাতি বেড়াতে আসার বাহানা দেখিয়ে অবস্থান করছে। অপরদিকে লামা পৌর শহরের আবাসিক হোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে পর্যটক সেজে বহিরাগত লোকজন অবস্থান করছে। যাদের অনেককে রাতে লামা পৌর শহরের অলিগলি ও গ্রাম-গঞ্জে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। হঠাত্ করে পৌর শহরে বহিরাগত ও অপরিচিত লোকজনের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় লোকজন ও ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।  মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, কালকিনি পৌর নির্বাচনে বিভিন্ন অভিযোগ এনে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এনায়েত হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ, মো. লোকমান সরদার ও মশিউর রহমান সবুজ। কালকিনি প্রেসক্লাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট কেন্দ্র দখল, জালভোট প্রদান, তাদের  কর্মীদের বাধা প্রদান, ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করা হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এনায়েত হোসেন শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা একত্রিত হয়ে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।  নিজস্ব প্রতিবেদক বরিশাল জানান, নির্বাচনে নাশকতা সৃষ্টির আশঙ্কায় গৌরনদী পৌর বিএনপির সভাপতি এস এম মনিরুজ্জামান মনিরকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে কোনো ধরনের মামলা, জিডি এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকার পরও নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বিএনপি নেতা মনিরকে আটকের ঘটনায় নির্বাচন কমিশন, রেঞ্জ ডিআইজি এবং জেলা পুলিশ সুপারের কাছে মৌখিক নালিশ করেছে কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় বিএনপি। তাদের দাবি, নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে মনিরকে আটক করা হয়েছে।

সাভারে কেন্দ্র দখলের চেষ্টা : সাভার প্রতিনিধি জানান, সাভারের একটি ভোট কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সিল মারার চেষ্টা করেছে একদল সন্ত্রাসী। রাত সাড়ে ৮টার দিকে পৌরসভার রাজাসন এলাকার আল হেরা স্কুল ভোট কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে বলে রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহ আলম জানান। পরে র্যাব ও বিজিবি গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় বলে জানিয়েছেন তিনি। রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্রটি রিমোট এরিয়ায় হওয়ায় দুর্বৃত্তরা এটি দখল করে ব্যালট পেপারে সিল মারার চেষ্টা করছিল। এ সময় অতিরিক্ত র্যাব, বিজিবি ও ম্যাজিস্ট্রেট গেলে তারা পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর ওই কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর