শিরোনাম
বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

অনিয়ম হলে স্থানীয়ভাবে সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে

নিজস্ব প্রতিবেদক

অনিয়ম হলে স্থানীয়ভাবে সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে

সৈয়দ আবুল মকসুদ

প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে সারা দেশে ২৩৪ পৌরসভায় নির্বাচন ‘সুষ্ঠু’ ও ‘সুন্দর’ হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন বিশিষ্ট কলামিস্ট ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ। তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনে যদি কোনো কারচুপি বা অনিয়ম হয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের পছন্দের যোগ্য প্রার্থীকে যদি ভোটাররা নির্বাচিত করতে না পারেন, তাহলে স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিহিংসা ও সংঘাতের রাজনীতি দেখা দিতে পারে। তাই আশা করব, নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য ইসিকে সব রাজনৈতিক দলের ও নাগরিক সমাজের উচিত হবে পূর্ণ সহায়তা দেওয়া। এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে বলেই আশা করছে জাতি। গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন বিশিষ্ট এই লেখক। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের আচরণ থেকে আমরা আশঙ্কা করছি, সাধারণ ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কি-না। এই মুহূর্তে আজকে আমাদের দাবি, জনগণ যেন শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। এ জন্য সব ধরনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত থাকতে হবে। কোনো রকমের সহিংসতার মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সুতরাং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে।’ সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘দলীয় প্রতীকে এবং একসঙ্গে বহু পৌরসভায় হওয়ায় জাতীয় নির্বাচনের একটি আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। যত ছোট জায়গাতেই হোক, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ চায় একজন ভালো প্রার্থী নির্বাচিত হোক। নির্দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হলে সেই সুযোগটিই বেশি থাকে। দলীয় প্রতীকে এবারের পৌর নির্বাচন হচ্ছে। এতে স্বাভাবিকভাবে সরকারি দলের আধিপত্য থাকবেই।’ তার মতে, ‘বর্তমান পৌর-নির্বাচনে সরকারি দল যে আধিপত্য বিস্তার করতে চাইবে তা এর মধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে। কয়েকজন পৌর মেয়র ও কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন বলে ঘোষিত হয়েছে। এটা নজিরবিহীন। বর্তমান আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থায় সর্বজনশ্রদ্ধেয় মানুষ কোথাও আছে বলে কেউ বিশ্বাস করে না। সরকারের উচিত, এই নির্বাচনটিকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সহায়তা করা। অবশ্য আমাদের দেশে সেই সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি।’

পৌর নির্বাচনে সব দল অংশ নেওয়ার প্রশংসা করে বিশিষ্ট এই কলামিস্ট বলেন, ‘নির্বাচনে সবগুলো বড় দলই অংশ নিচ্ছে— এটা ভালো দিক। ভোটাররাও প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ পাবেন। তবে সেই সুযোগের সত্ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়ার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তারা যদি সবাইকে সেই ব্যবস্থা না করে দিতে পারেন, তাহলে তা হবে তাদের জন্য বিরাট ব্যর্থতা। সেই ব্যর্থতার দায় জাতিকে বহন করতে হবে। মানুষ স্থানীয় পর্যায়েও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলবে। যার পরিণতি হবে খুবই অশুভ।’

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থার কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজ অব্যাহতভাবে এই কমিশন সম্পর্কে বিরূপ ধারণা পোষণ করছে। তাদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের এই নির্বাচন একটি সুবর্ণ সুযোগ। এই নির্বাচনে যদি দেখাতে পারেন যে তারা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ এবং দক্ষ তাহলে এই কমিশন যদি নাও থাকে তাহলেও পরবর্তী যে সাধারণ নির্বাচনটি হবে সেই নির্বাচন সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হবে। তাতে একটি ভালো গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির নির্বাচনের সুযোগ আসবে। এখন মানুষ নির্বাচন ও গণতন্ত্র সম্পর্কে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে। সেই মনোভাব দূর করতে এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর আস্থা আনতে এই পৌরসভা নির্বাচনগুলো একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে।’

সর্বশেষ খবর