বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মোস্ট ওয়ান্টেড দুর্ধর্ষ জঙ্গি ফারদিন

গাজীপুরে পরিচয় মেলেনি নিহতদের চবিতে তিনজনের ছাত্রত্ব বাতিল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম

মোস্ট ওয়ান্টেড দুর্ধর্ষ জঙ্গি ফারদিন

নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) চট্টগ্রামের আঞ্চলিক কমান্ডার ফারদিনকে হন্যে হয়ে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কখনো ব্যবসায়ী, কখনো ছাত্র পরিচয় দেওয়া ফারদিন স্থানভেদে ব্যবহার করেন ছদ্মনাম। চট্টগ্রামের ট্রিপল মার্ডার, ডবল মার্ডারসহ আলোচিত কয়েকটি ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ফারদিনের নেতৃত্বে চলছে জেএমবির চট্টগ্রাম বিভাগের কার্যক্রম। চট্টগ্রাম বিমান ও নৌ বন্দরসহ স্পর্শকাতর কয়েকটি স্থাপনায় নাশকতা পরিকল্পনাও করেছেন আলোচিত এ ফারদিন। এ কমান্ডারকে গ্রেফতার করা গেলে বের হয়ে আসবে জেএমবির অজানা অনেক তথ্য। তাই ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ দুর্ধর্ষ জঙ্গি ফারদিনকে গ্রেফতারের জন্য ঘুম হারাম হয়ে গেছে চট্টগ্রাম প্রশাসনের। চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর-পশ্চিম) বাবুল আকতার বলেন, ‘ফারদিন বিভিন্ন স্থানে তার বিভিন্ন নাম ব্যবহার করেন। তার বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য নেই আমাদের কাছে। ফারদিনকে গ্রেফতার করা গেলে জেএমবির কার্যক্রম বিষয়ে অনেক তথ্য জানা যাবে। তাই তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ফারদিনের রাজনীতির হাতেখড়ি ছাত্রশিবিরের রাজনীতির মাধ্যমে। পরে জড়িয়ে পড়েন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের সঙ্গে। হিযবুত তাহ্রীরের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়েন। পরে জড়িয়ে পড়েন জেএমবির কার্যক্রমে। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে হয়ে ওঠেন জেএমবির অন্যতম পরিকল্পনারী এবং নিযুক্ত হন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমান্ডার পদে। বিভাগের দায়িত্ব পাওয়ার পর ফারদিন নিজেকে কখনো ব্যবসায়ী, কখনো চাকরিজীবী, কখনো ছাত্র বলে পরিচয় দিতেন। প্রশাসনের অনুসন্ধানে ফারদিনের কমপক্ষে ১০টি ছদ্মনামের সন্ধান মিলেছে। তার মধ্যে নোমান, ফুয়াদ, পিয়াস, নাফিজ অন্যতম। চট্টগ্রাম বিভাগের নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ফারদিন একজন বোমা বিশেষজ্ঞও। জেএমবির নাশকতার জন্য তৈরি করা বোমার পিন স্থাপন করেন ফারদিনই। গত ২৩ মার্চ নগরীর আকবর শাহ থানায় গ্রেফতার হওয়া জেএমবির চট্টগ্রাম জেলা কমান্ডার এরশাদ হোসেন মামুনের জবানবন্দিতে প্রথম উঠে আসে ফারদিনের নাম। ২৪ সেপ্টেম্বর সদরঘাট থানাধীন শাহ করপোরেশনের প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা ছিনতাই ও ট্রিপল মার্ডার, ৪ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন বাংলাবাজার এলাকায় ল্যাংটা ফকির ও তার খাদেমকে খুন, ৫ অক্টোবর কর্ণফুলী থানা এলাকায় অভিযান চলাকালে পুলিশের ওপর গ্রেনেড হামলা এবং জঙ্গি আস্তানার মূল পরিকল্পনারী ফারদিন। সর্বশেষ ২৭ ডিসেম্বর হাটহাজারীর আমানবাজারে পাওয়া জঙ্গি আস্তানার সঙ্গেও ফারদিনের যোগসূত্র রয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।

তিন শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল করল চবি : জঙ্গি সন্দেহে আটক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) তিন শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল  উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী নির্বাহী ক্ষমতাবলে এ সিদ্ধান্ত নেন। ছাত্রত্ব বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন— পদার্থবিদ্যা বিভাগের নাইমুর রহমান, ফয়সাল মাহমুদ ও মো. শওকত রাসেল। প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী বলেন, প্রক্টর কার্যালয় সুপারিশ করার পর উপাচার্য তিন শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন।

পরিচয় মেলেনি নিহতদের :  গাজীপুরে  জঙ্গি আস্তানায় বন্দুকযুদ্ধে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। র্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ, সরকারি কাজে বাধাদান ও বোমা বিস্ফোরণে নিহত হওয়ার ঘটনায় সোমবার রাতে জয়দেবপুর থানায় হওয়া দুটি মামলার বাদী র্যাব-১-এর পরিদর্শক (শহর ও যান) সেলিম খান। তবে মামলায় কাউকে আসামি করা হয়নি।

অন্যদিকে র্যাবের অভিযানে নিহত দুই জঙ্গি হেলাল ও মামুনের লাশ এখনো শনাক্ত করতে আসেনি কেউ। নিহতদের লাশ দুই দিন ধরে পড়ে আছে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ মর্গে। লাশ কেউ না নিলে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা। মামলার বাদী তার এজাহারে উল্লেখ করেন, র্যাব গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে জয়দেবপুর থানার যোগীতলা এলাকায় দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদ-সংলগ্ন পরিত্যক্ত বাড়িটিতে কতিপয় জঙ্গি সদস্য গোলাবারুদসহ অবস্থান করে নাশকতার পরিকল্পনা করছে। এরপর রবিবার রাতে পরিত্যক্ত বাড়িটি র্যাব সদস্যরা ঘিরে ফেলেন। এ সময় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ভিতর থেকে জঙ্গিরা র্যাবকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করে। পরে র্যাবও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। এতে দুই জঙ্গি মারা যায়। পরে র্যাব সদস্যরা ওই বাড়ি থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি, চারটি অবিস্ফোরিত বোমা, ২৯টি ডেটোনেটর, বোমা তৈরির দুই কেজি বিস্ফোরক, চারটি জিহাদি বই, কিছু মার্বেল, লোহার নাট-বল্টু উদ্ধার করে। এদিকে র্যাবের গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ওই ঘাঁটিতে অন্য আর কোন কোন জঙ্গির যাতায়াত ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। র্যাবের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, যোগীতলার আস্তানায় অন্য জঙ্গিদের আসা-যাওয়ার তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। র্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান, জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করার সময় অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় র্যাব পৃথক দুটি মামলা করে। তিনি জানান, ওই ঘাঁটির আশপাশের লোকদের কাছে জানা গেছে, এখানে নতুন নতুন লোক আসা-যাওয়া করতেন। তারা পাশে থাকা মসজিদে নামাজ আদায় করতেন।

অন্যদিকে যোগীতলা অপারেশনের পর বিভ্রান্তি ছড়ানো হয় যে জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত মিনহাজুল ও মাহবুব নিহত হয়েছেন। যদিও এ দুজন বেঁচে আছেন এবং র্যাবের গোয়েন্দারা আরেক দফা তাদের ডেকে গতকাল কথাবার্তা বলেন। দীর্ঘ কারাভোগের পর রবিবার তারা মুক্তি পেলে র্যাব-১-এর কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের আনা হয়। পরে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় ওই দুজনকে। গোয়েন্দা-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তারা অনেকটাই নিশ্চিত হতে পেরেছেন নিহত দুই জঙ্গি হেলাল ও মামুন। ওই ঘাঁটি থেকে সাঁজোয়া হয়ে তারা কোথাও হামলার জন্য যেত। কিন্তু র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি ও গোপনে সোর্স নিয়োগের ফলে তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

সর্বশেষ খবর