বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

রাজনৈতিকভাবে গেইন করেছে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজনৈতিকভাবে গেইন করেছে বিএনপি

নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশনের আরও বেশি কঠোর হওয়য়া উচিত ছিল। সার্বিকভাবে তুলনা করলে গত কয়েকটির মধ্যে এ নির্বাচন কিছুটা অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। এ নির্বাচনে তুলনামূলকভাবে সহিংসতার ঘটনাও কম ঘটেছে। তবে মাঠে বিএনপি ও ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টের স্বল্পতা ছিল। তারা বলেন, দৃশ্যমানভাবে সহিংসতা, কেন্দ্র দখল ও ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটেনি; যা ছিল এ নির্বাচনের ইতিবাচক দিক। নির্বাচন শেষে গত রাতে তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে এমন মন্তব্য করেছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন (অব.) বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সুষ্ঠু নির্বাচনের চেষ্টা করেছে। তবে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনের সহযোগিতা তারা পায়নি। এ ছাড়া ইসির আরও বেশি কঠোর হওয়া উচিত ছিল। ৩৯টি কেন্দ্রের ভোট বাতিল করেছে। একটি পৌরসভায় দুটির বেশি কেন্দ্রে সমস্যা হলে ওই পৌরসভার ভোটই বাতিল করা উচিত ছিল। ২৩৪টি পৌরসভার মধ্যে ৭-৮টি বন্ধ হলে কোনো সমস্যা হতো না। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘ভোট নিয়ে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি। কেন্দ্র দখল, সহিংসতা, জাল ভোট দেওয়ার সংস্কৃতি রয়ে গেছে। এটাই মূল সমস্যা। নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে গেইন করেছে। কিছু কিছু কেন্দ্রে ১০০ ভাগ ভোট পড়েছে। এসব পৌরসভার ভোট বাতিল করা উচিত। ভোট গণনার পর এমনটি পাওয়া গেলে সেসব পৌরসভায় পুনর্নির্বাচন দেওয়া উচিত। প্রতিবারই যদি সামান্য ত্রুটি বলে এসব বিষয়কে এড়িয়ে যাওয়া হয় তাহলে অপসংস্কৃতি কখনো দূর হবে না। গণতান্ত্রিক ভিত্তি শক্ত করতে হলে শতভাগ ত্রুটিমুক্ত নির্বাচন হতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রথমবার দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হয়েছে। এ জন্য সরকারের মধ্যে এক ধরনের চাপ ছিল। তারা (সরকার) এটাকে গ্রহণযোগ্য করতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে দলীয় মানসিকতা বাধা সৃষ্টি করেছে। সরকারের উচিত ছিল সেভাবে আরও কঠোর হওয়া। তবে গত কয়েকটি নির্বাচন যা দেখেছি তার চেয়ে কিছুটা ভালো হয়েছে বলে সার্বিকভাবে বলা যায়।’

দেশের ২৭টি পৌরসভার নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্স (ফেমা)। নির্বাচনকে খুব ভালো না বললেও ‘মোটামুটি’ ধরনের বলে মন্তব্য করেন ফেমার সভাপতি মুনিরা খান। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে ভয়ভীতি ছিল। তারা আতঙ্কগ্রস্ত ছিল। কিন্তু আমরা বড় ধরনের সংঘর্ষ হবে বলে আশঙ্কা করলেও সে তুলনায় সংঘর্ষ কম হয়েছে। সাতকানিয়া ছাড়া দেশের আর কোথাও বড় ধরনের ঘটনা ঘটেনি।’ এ জন্য সার্বিকভাবে নির্বাচনকে তিনি ‘মোটামুটি শান্তিপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেন। মুনিরা খান বলেন, ‘যেসব এলাকায় পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি সে এলাকাগুলোতেই ব্যালট কারচুপির ঘটনা ঘটেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করে দেখেছি যে, কেন্দ্রগুলোতে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের স্বল্পতা ছিল। এ ছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থীদেরও পোলিং এজেন্ট কম ছিল।’

ফেমা সভাপতি বলেন, ‘আমি নিজে মুন্সীগঞ্জের কয়েকটি পৌরসভায় নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে যাই। সেখানে প্রেসক্লাবের সামনে একদল হামলাকারীর সংঘর্ষে পড়ে আমাকে বহনকারী গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে সময় গুলির শব্দে আমি ভীত হয়ে পড়ি। এ সহিংসতার কারণে এ পৌরসভায় মহিলা ভোটারদের উপস্থিতিও কম ছিল। মুন্সীগঞ্জে নির্বাচনের খবর সংগ্রহ করতে আসা আরটিভির ক্যামেরাপারসনকেও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়।’ পোলিং বুথগুলোতে মানুষ ইচ্ছামতো প্রবেশ করার বিষয়টিকে নেতিবাচক বলে মন্তব্য করেন এই নির্বাচন বিশ্লেষক। তিনি বলেন, ‘যেভাবে মানুষ পোলিং বুথগুলোতে প্রবেশ করছিল তা দেখে আমরা দায়িত্বপ্রাপ্তদের অভিযোগ জানাই। তবে মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভায় সে তুলনায় শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে মানুষকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দীর্ঘ লাইনে ভোট দিতে দেখেছি। এ পর্যন্ত আমাদের কাছে আসা রিপোর্ট অনুযায়ী পৌর নির্বাচন ভালোভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলেই মনে করছি।’ বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এ বছর সিটি করপোরেশনের চেয়ে এবারের পৌরসভা নির্বাচন ভালো হয়েছে।’ গতকাল সারা দিন টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নেওয়ায় নির্বাচন ভালো দেখতে পারেননি বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তবে এ নির্বাচন পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য নয়। শতাংশের হিসাবে এ নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্য এবং কতটা গ্রহণযোগ্য নয়, তা-ও বলা যাবে না।’ পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, ‘নির্বাচন দৃশ্যমানভাবে খারাপ হয়নি। অদৃশ্যভাবে কী হয়েছে, তা দেখিনি। তাই বলতেও পারছি না। তবে এ নির্বাচনে দৃশ্যমান সহিংসতা হয়েছে। কিন্তু দৃশ্যমান সিল মারা দেখিনি।’ তবে সব কিছু মিলিয়ে গত পৌরসভা নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচন খারাপ হয়েছে বলেও মনে করেন সুশীলসমাজের এই প্রতিনিধি।

সর্বশেষ খবর