বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ফলাফল প্রত্যাখ্যান প্রহসনের অভিযোগ বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক

পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। গতকাল রাতে দল ও জোট নেতাদের সঙ্গে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আজ সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে জোটের এ সিদ্ধান্ত জানানো হবে। বিএনপি ও জোটের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানা যায়। আগামী সপ্তাহে এক দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচিও আসতে পারে।

পৌর ভোটের ঘোষিত ফলে পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার মধ্যে রাতে নিজের গুলশানের কার্যালয়ে দলের সিনিয়র নেতা এবং জোট নেতাদের ডাকেন বিএনপিপ্রধান। বৈঠকের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের আরও কিছু বিষয়ে আলোচনা বাকি রয়েছে। আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) সংবাদ সম্মেলন করে আমরা সবকিছু জানাব।’ আজ গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বেলা ১১টায় এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে।

বৈঠকে মির্জা ফখরুল ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজ উদ্দিন আহমদ, আলতাফ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ বৈঠকের মধ্যেই ২০-দলীয় জোটের নেতারা উপস্থিত হন। পরে খালেদা জিয়া তাদের সঙ্গেও আলোচনা করেন।

প্রহসনে পরিণত হয়েছে নির্বাচন : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, এত দিন আশঙ্কা করেছিলাম একটা প্রহসনের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত সেই আশঙ্কাই সত্য হয়েছে। সরকারের নীলনকশা অনুযায়ী আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন হয়ে গেল।

গতকাল বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এ সরকারের অধীনে কোনো দিন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, যত দিন তারা ক্ষমতায় থাকতে চায়, তত দিন হতে দেবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, সকাল থেকে দিনভর নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশ দূরের কথা, মারামারি-সংঘাত, কেন্দ্র দখলে নির্বাচন একটি ট্র্যাজেডিতে পরিণত হয়েছে। বিকাল ৪টা পর্যন্ত যতটুকু খবর পেয়েছি, তাতে ১৫৭টি পৌরসভায় ধানের শীষের এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এই সংখ্যা শেষ পর্যন্ত ২০০-র কম হবে না। অনেককে কেন্দ্রেই যেতে দেওয়া হয়নি। অনেক জায়গায় ভোটারদেরও বের করে দেওয়া হয়েছে। সরকার পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে নির্বাচনে তাদের পক্ষে ব্যবহার করল।

‘অশান্তি’ কাকে বলে : বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক বলেছেন, নির্বাচনে সহিংসতা বেড়েছে। নির্বাচন কমিশনকে বিভিন্ন কেন্দ্র ধরে ধরে যেসব অনিয়ম হচ্ছে তা জানানো হয়েছে। কমিশন ব্যবস্থা নিলে বিএনপি জিতবে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে নির্বাচনে সহিংসতা বেড়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন,  যেভাবে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল সেভাবে হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ভোট ‘শান্তিপূর্ণ’ হচ্ছে দাবি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওসমান ফারুক বলেন, ভোটের এ অবস্থাকে ‘শান্তিপূর্ণ’ বললে ‘অশান্তি’ কাকে বলে, তা আমরা জানি না।

নির্বাচন কমিশন অসহায় : পৌরসভা নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভূমিকা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন। বিকাল সাড়ে ৪টায় তিনি ইসি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, পৌরসভা নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে ছিল কি-না তা নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি দেখে আমাদের মনে হয়েছে নির্বাচন কমিশন অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে। ইসির ভূমিকায় আমরা হতাশ হয়ে পড়েছি।

নির্বাচনে শতাধিক ভোট কেন্দ্র দখল করে সহিংসতা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

কেন্দ্র দখল ও কারচুপির মহোৎসব : নির্বাচনে কৃত্রিম বিজয় দেখানোর জন্য আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা পুলিশ ও যৌথবাহিনীর পাহারায় এবং প্রশাসনের ছত্রছায়ায় ভোট কেন্দ্র দখল ও কারচুপির মহা-উৎসবে নামার অভিযোগ করেছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। দুপুর ১২টায় নয়াপল্টন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এ অভিযোগ করেন। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় আরেক দফা ব্রিফিং করে বিভিন্ন পৌরসভায় ভোট কেন্দ্র দখলসহ কারচুপির নানা অভিযোগ করেন তিনি। রিজভী বলেন, সাতকানিয়া পৌরসভায় সাতকানিয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্রে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা বেপরোয়া গুলি চালিয়ে যুবদল নেতা নুরুল আমিনকে হত্যা করেছে। ব্যাপক গুলিবর্ষণ ও বোমাবাজি করে বাকি কেন্দ্রগুলো দখল করে নিচ্ছে। সেখানে র?্যাব পুলিশের সদস্যরা মূর্তির মতো ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন।

সর্বশেষ খবর