বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দিনভর পাল্টাপাল্টি নালিশ ইসিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে দিনভর কর্মব্যস্ত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সকালে ভোট শুরুর সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) হাজির হয় বিএনপির প্রতিনিধিদল। এরপর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও নানা অভিযোগ নিয়ে হাজির হয় ইসিতে। বাদ যায়নি বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও। দিনভর ইসির কাছে পাল্টাপাল্টি নালিশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাপা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) রকিবউদ্দীন আহমদ ইসি সচিবালয়ে উপস্থিত থাকলেও কোনো দলের সঙ্গে সাক্ষাত্ দেননি। এমনকি বিএনপির প্রতিনিধিদল সচিবের দেখাও পায়নি বলে অভিযোগ করেছে। তবে অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের কক্ষে বসে আলাদা আলাদা বৈঠক করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এ ছাড়া গতকাল ইসি সচিবালয়ের দ্বিতীয় তলায় সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। এদিকে দলীয় মার্কায় প্রথমবারের মতো আয়োজিত পৌর নির্বাচনে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, কেন্দ্র দখলের চেষ্টা ও অনিয়মের অভিযোগ এলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট নির্বাচন কমিশন। গতকাল সকাল ৮টায় ২৩৪ পৌরসভায় ভোট শুরুর পর বেলা ২টা পর্যন্ত কত ভোট বাক্সে পড়েছে এর কোনো হিসাব না দিতে পারলেও নির্বাচন কমিশনার মো. আবু হাফিজ বলেছেন, উপস্থিতি নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। এর বাইরে অধিকাংশ এলাকায় ‘শান্তিপূর্ণ’ ভোট হয়েছে মন্তব্য করে মো. আবু হাফিজ বলেন, প্রধান দুই দলের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের চেয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাটাকেই তারা ‘বড়’ হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেছেন, এবার দলীয় ভোট হচ্ছে। ভোটার উপস্থিতি একটু বেশিই থাকবে। সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদেও প্রার্থীরা আছেন। ভোটের হার ভালোই হবে। নারী ভোটারের উপস্থিতিও বেশ। আবু হাফিজ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে আমরা সন্তুষ্ট। দুটি দলও আমাদের কাছে এসেছে। তাদের কথাও শুনেছি।’ সকালে ভোট শুরুর দেড় ঘণ্টার মাথায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, নির্বাচনের ফল পক্ষে নিতে ‘সরকারি কারসাজির’ যে আশঙ্কা তারা প্রকাশ করে আসছিলেন, ভোটের মাঠে দিনের শুরুতেই তা ‘সত্যি’ হতে শুরু করেছে। এরপর বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ওসমান ফারুকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ইসিতে গিয়ে দেড় ঘণ্টায় অন্তত ৬০টি কেন্দ্র দখলের অভিযোগ জানিয়ে আসে। অন্যদিকে দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষমতাসীন দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘পরাজয়ের আশঙ্কায়’ বিএনপির প্রার্থীরাই বিভিন্ন স্থানে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিচ্ছেন। এরপর আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম ইসিতে গিয়ে বলেন, সারা দেশে ‘সুন্দর, সুষ্ঠু ও উত্সবমুখর’ পরিবেশে পৌরসভা নির্বাচন চললেও বিএনপি-জামায়াত ‘অধ্যুষিত’ কয়েকটি স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ‘বাড়াবাড়ি’ করায় ‘বিচ্ছিন্ন কিছু’ ঘটনা ঘটেছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, ২০০৮ সালের ৯ পৌরসভা নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৯৩ শতাংশ ভোট পড়েছিল। ২০১১ সালে চার ধাপের পৌর ভোটে বাক্সে পড়েছিল ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ভোট। দেশে গত নয়টি পৌরসভা নির্বাচন ছিল নির্দলীয়। দেশের ৩২৩ পৌরসভার মধ্যে ২৩৪টিতে এবারই প্রথম দলীয়ভাবে মেয়র পদের ভোট হচ্ছে। এদিকে পৌর নির্বাচনে সার্বিক পরিস্থিতিতে বিএনপি হতাশ বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন। ইসিতে গতকাল বিকালে ভোট গ্রহণ শেষে দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করতে এসে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে আমরা হতাশাগ্রস্ত। কারণ এ নির্বাচনের আগে সরকার ও নির্বাচন কমিশন আমাদের যেভাবে আশ্বস্ত করেছিল, বাস্তবে এর প্রতিফলন ঘটেনি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে অসহায় দেখেছি। মাঠপর্যায়ে প্রশাসনিকভাবে তারা কতটা শক্তিশালী সেটিই আমাদের প্রশ্ন।’ খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘আমরা কমিশনকে শতাধিক ভোটকেন্দ্র স্থগিতের তালিকা দিয়েছি এবং সেখানে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুরোধ জানিয়েছি।’ পৌরসভা নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তো দূরের কথা, ইসি সচিবের সাক্ষাত্ চেয়েও পায়নি বিএনপির প্রতিনিধিদল। আর এ নিয়ে ক্ষোভেরও শেষ নেই প্রতিনিধিদলের নেতা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুকের। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সকাল ৮টায় ইসিতে লিয়াজোঁ কমিটির প্রতিনিধি হিসেবে এসেছি। সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে পারলাম না। এরপর সচিবের সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে চাইলে প্রথমে তার দফতরে বসিয়ে রাখা হয়। এরপর খবর পাঠানো হয়, সচিব দেখা করবেন না।’ ওসমান ফারুক ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘আমরা তো রাস্তার লোক না। বসিয়ে রেখে বলা হয়েছে, দেখা হবে না। এটি হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের কর্তাব্যক্তিদের মনোবৃত্তি। আমলাতন্ত্রের কাছে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের যে দাম নেই, এটি আবারও প্রমাণিত হলো।’ তবে তিনি চার নির্বাচন কমিশনারকে ধন্যবাদ দেন তাদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করায়। ওসমান ফারুক বলেন, ৫ জানুয়ারি এবং এরপর যতগুলো স্থানীয় নির্বাচন হয়েছে, এর চেয়ে উচ্চতর কারচুপি হয়েছে এ নির্বাচনে। এর আগে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের সঙ্গেও সিইসি সাক্ষাত্ করেননি। তারাও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের নেতৃত্বাধীন ওই প্রতিনিধিদল ইসির সচিবের সাক্ষাত্ প্রার্থনা করেনি। একইভাবে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিদলও সিইসি কিংবা সচিবের দেখা পায়নি।

সর্বশেষ খবর