সোমবার, ৪ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

শিবির ক্যাডার এখন ছাত্রলীগ নেতা

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের এক সময়ের ক্যাডার মনিরুজ্জামান মামুন এখন ভালুকা উপজেলা  ছাত্রলীগের সভাপতি। ভালুকার এমপি ডা. এম আমানউল্লাহর পৌষ্য ক্যাডার হিসেবে সেই মামুন এখন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। আর সাবেক শিবির ক্যাডার মামুনকে নিজেদের যত অপকর্মের মূল হাতিয়ার বানিয়ে ময়মনসিংহের শিল্পাঞ্চল ভালুকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন এমপি আমানউল্লাহ আর তার চার ভাতিজা। জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ মামুনকে ছাত্রলীগের সভাপতি বানানোর পর খোদ এমপি আমানউল্লাহ নিজে প্রধানমন্ত্রী এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছিলেন যে, মনিরুজ্জামান মামুন শিবিরের ক্যাডার। সে পারিবারিকভাবেই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তার বাবা আবদুল আলিম রাজৈর ইউনিয়ন জামায়াতের একজন সক্রিয় নেতা। তার নানা মুক্তার হোসেন মৌলভীও ছিলেন জামায়াত নেতা। তার ভাই আরিফ ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। জানা গেছে, কিছুদিন পর মামুন এমপির গ্রুপে ভিড়ে গেলে  খোদ এমপি আমানউল্লাহ ও তার ভাতিজারা মামুনের ‘শিবির ক্যাডার’ পরিচয় আড়াল করতে শুরু করেন। এদিকে এমপি আমানউল্লাহর ভাতিজারা মামুনের বিগব্রাদার হয়ে উঠেছেন। তারা মামুনের সহযোগীদের দিয়ে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। এমপি চাচার সমর্থন ও সহযোগিতায় ভাতিজারা হয়ে উঠেছেন ভালুকার একেকজন খুদে গডফাদার। তারা আইনের তোয়াক্কা করেন না। তাদের অন্যায়-অপরাধ মুখ বুঝে সহ্য করতে হচ্ছে ভালুকাবাসীকে। এমনকি স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মীও এমপি আমানউল্লাহ ও তার ভাতিজাদের অন্যায়-অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে রোষানলের শিকার হচ্ছেন। ভালুকায় সরেজমিন খোঁজখবর নিয়ে এ ধরনের  চমকপ্রদ সব তথ্য ও ঘটনা বেরিয়ে এসেছে। স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীসহ বিভিন্ন স্তরের লোকজনের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, এমপি আমানউল্লাহ ও তার চার ভাতিজার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এক সময়ের শিবির ক্যাডার মনিরুজ্জামান মামুন এখন ভালুকার ছাত্র রাজনীতির কথিত নিয়ন্ত্রক সেজে গেছেন। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার পরপরই মূর্তমান আতঙ্ক হয়ে ওঠেন সাবেক এই শিবির ক্যাডার। তিনি এখন এমনই  বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন যে, উপজেলার এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে তার থাবা বিস্তার হয়নি। তাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ছাত্রলীগও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকার সময় যারা ভালুকায় ছাত্রলীগের রাজনীতি করে একের পর এক মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন তারা এখন শিবিরের এই সাবেক ক্যাডারকে সভাপতি হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না। জানা গেছে, এই মামুনের ছাত্রলীগ করার বয়স নেই মর্মে উপজেলা ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ ময়মনসিংহ আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। এমপি আমানউল্লাহর ভাতিজারা হচ্ছেন— ভালুকার আঞ্চলিক শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি লুেফ ওয়ালী রব্বানী ওলি ওরফে ওলি বাবা, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রওনাক শিহাব রব্বানী খাজা ওরফে খাজা বাবা ও রিদুয়ান সারোয়ার রব্বানী ওরফে বৃটিশ ও তারিকুল ইসলাম তারেক। এমপির ভাতিজারা ভালুকায় সরকারি অফিস থেকে শুরু করে সর্বত্র নিয়োগবাণিজ্য, টিআর-কাবিখা, ভূমি দখলসহ সরকারি নানা প্রকল্পে অবাধে লুটপাট চালাচ্ছেন। কেউ তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধাচরণ করলেই তার ওপর নেমে আসে পাশবিক কায়দায় নির্যাতন। এমপির ভাতিজা চক্রের সঙ্গে জামায়াত নেতা আবদুল আলিমের ছেলে সাবেক শিবির ক্যাডার ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান মামুন ছাড়াও রয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার হক সজীব, উপজেলা কৃষক লীগ সভাপতি হাজী আবদুর রহমান এবং উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান তালুকদার। জানা গেছে, মামুনকে ছাত্রলীগের সভাপতি করার পর ভালুকার রাজৈর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হক মাস্টারের নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ সভা করেন। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার পরপরই মামুন কনজুমা ইন্ডাস্ট্রির ঝুট ব্যবসা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হেকিমের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন। বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছেন তিনি। অনেক শিল্প মালিক এসব নিয়ে প্রতিবাদ করলে, তাদের চরম মাশুল দিতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, মামুনের অন্যায়-আবদারের বিরুদ্ধাচরণ করলেই সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলোর সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি গ্রুপ অব কোম্পানির ম্যানেজার জানান, ভালুকায় কারখানা চালাতে হলে ছাত্রলীগের সভাপতি মামুনকে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হবে। নয়তো কারখানা বন্ধ করে বাড়ি যেতে পরামর্শ দেন মামুন। অভিযোগ রয়েছে, সদ্য সমাপ্ত পৌর নির্বাচনে অনেকটা প্রকাশ্যে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন মামুন। বিএনপিপন্থি কাউন্সিলরদের পাস করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তাদের কারও কারও কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেন। নিজের ভগ্নিপতি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপিপন্থি কাউন্সিলর প্রার্থী তাজেনকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর