সোমবার, ৪ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

সোহরাওয়ার্দী পাচ্ছে না কোনো দল, কার্যালয়ের সামনেই সমাবেশ

ডেট লাইন ৫ জানুয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি পাচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি। অনুমতি না পেলে দুই দলই নিজ নিজ কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে। যদিও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। তবে রাজনৈতিক সংঘর্ষের আশঙ্কা হতে পারে বিবেচনায় কোনো দলকেই ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার আভাস দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, কর্মসূচি সাংঘর্ষিক হলে কোনো দলকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে অনুমতি দেওয়া হবে না। বিকল্প হিসেবে দুই দলই নিজ নিজ কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার চিন্তা করছে।

আগামীকাল ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় নির্বাচনের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধান দুই দলই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। এ নিয়ে রাজনীতিতে উত্তাপের সৃষ্টি হয়। গত বছর এই দিনে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা হয় ও বহু প্রাণহানি ঘটে। এক বছরের মাথায় শনিবার আবারও দুই দল একই দিনে সমাবেশের ঘোষণা দেয়।

নির্বাচনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিকে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে উদযাপন করবে আওয়ামী লীগ। এ জন্য ঢাকার ১৮টি পয়েন্টে একযোগে সমাবেশ করার  ঘোষণা দিয়েছে দলটি। সারা দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অনুরূপ কর্মসূচি পালন করা হবে। অন্যদিকে বিএনপি এ দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করছে। রাজধানীসহ সারা দেশের জেলা পর্যায়েও অনুরূপ কর্মসূচি পালন করবে। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ৫ জানুয়ারি দুপুর ২টা থেকেই পুরো ঢাকা মহানগরীর রাজপথ দখলে নেবে আওয়ামী লীগ। বেলা আড়াইটায় মহানগরীর ১৮টি স্পট থেকে একযোগে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করার মাধ্যমে পুরো ঢাকাকেই মিছিলের নগরীতে পরিণত করবে তারা। ঢাকার ১৫টি নির্বাচনী এলাকার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও থানা-ওয়ার্ড নেতাদের নেতৃত্বে বিশাল বিশাল শোডাউনের মাধ্যমে এই ১৮টি স্পটে একযোগে সমাবেশ শেষে আনন্দ মিছিল বের করার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো পৃথক পৃথক স্থানে কর্মসূচি পালন করবে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় যুবলীগ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে, ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ইতিমধ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। অন্যরাও আজ বা কাল তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করবে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে শেষ চেষ্টা চালাবে বিএনপি। এ জন্য সমাবেশের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অনুমতির অপেক্ষা করবে দলটি। সমাবেশ ‘শান্তিপূর্ণ’ হবে দাবি করে দলটি বলছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এতে বক্তব্য রাখবেন। শেষ পর্যন্ত সমাবেশ করতে না পারলে বেগম জিয়া সংবাদ সম্মেলনেও আসতে পারেন। সারা দেশে জেলা পর্যায়ে সমাবেশ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতেও বাধা এলে কমিউনিটি সেন্টার বা ঘরোয়াভাবেও সমাবেশ করতে বলা হয়েছে। তবে সবাইকে সহিংসতা এড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

আওয়ামী লীগের সমাবেশ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে : সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি না পেলে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা গত ৩১ ডিসেম্বর এই সমাবেশের জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে আবেদন করেছি। বিএনপি আবেদন করেছে ২ জানুয়ারি। সুতরাং আমরাই অনুমতি আশা করছি। তারপরও যদি না পাই তবে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই সমাবেশ করব। ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ পালনের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ রাজধানীর ১৮টি স্পট এবং সারা দেশে সমাবেশ এবং আনন্দ র্যালি করার কথা রয়েছে দলটির। রাজধানীর কর্মসূচি সফল করতে বিকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মী ও ঢাকার সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন মাহবুব-উল আলম হানিফ। কর্মসূচি নিয়ে দুই দল মুখোমুখি হলে সংঘাত হতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘তারা কই, কোথায় নামবে। গতবার তারা সংঘাত-সহিংসতা করে সমুচিত জবাব পেয়েছে, এবার এ ধরনের সহিংসতা করলে আরও কঠিন জবাব দেবে জনগণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।’ মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। এটা আমাদের বিজয় দিবস। আমরা গতবারও এটা পালন করেছি, আগামী বছরও করব, ২০১৯ সালের আগামী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত করতে থাকব। বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা ভোটাধিকার হরণ দিবস পালন করেন। এটা কে হরণ করল? তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনে আসতেও পারে নাও আসতে পারে, এটা তাদের খুশি। তারা নির্বাচনে না এসে মানুষের ওপর হামলা করে, কেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়ে বরং ভোটাধিকার হরণ করেছে। তারা অনুতপ্ত দিবস পালন করতে পারে। তাহলে হয়তো জনগণ তাদের সহায়তা করতে পারে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে বৈঠকে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, এম এ আজিজ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মেয়র সাঈদ খোকন, আবদুর রাজ্জাক, আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বি এম মোজাম্মেল হক, আবদুল মতিন খসরু, আবদুস সোবহান গোলাপ, ফরিদুন্নাহার লাইলী, এ কে এম এনামুল হক শামীম, এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, ফজলে নুর তাপস, আসলামুল হক আসলাম, যুবলীগের মজিবুর রহমান চৌধুরী, ছাত্রলীগের সাইফুর রহমান সোহাগ ও এস এম জাকির হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।  

নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চায় বিএনপি : নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছে বিএনপি। গতকাল বিকালে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করতে ডিএমপির কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। তবে এখনো তাদের পক্ষ থেকে কিছুই আমাদের জানানো হয়নি। এবার দেখা যাবে সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী বলে। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, শিরিন সুলতানা, আবদুল লতিফ জনি, আসাদুল করীম শাহিন, তাইফুল ইসলাম টিপু, আবেদ রাজা, হেলাল খান, ফরিদা ইয়াসমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। রিজভী আহমেদ বলেন, ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার ঘোষণা দেওয়ার পরই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়। সংঘাত ও উত্তাপ ছড়ানোর উদ্দেশ্যেই তারা এ সমাবেশ ডেকেছে। যাতে এ সংঘাতের সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দীতে না হোক, অন্তত নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি দিন।

রিজভী আহমেদ আরও বলেন, বিএনপির জনসভা করা রাজনৈতিক অধিকার। কোনো অন্যায় আবদার নয়। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে সোহরাওয়ার্দীতে জনসভা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু একই সময়ে সরকারি দল সংঘাত সৃষ্টির জন্য জনসভা ডেকেছে। তাদের উদ্দেশ্য বিএনপির কর্মসূচি বানচাল করা। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের দেউলিয়াত্ব ফুটে উঠেছে। তাই আমরা সংঘাত এড়াতে নয়াপল্টনে জনসভা করার অনুমতি চেয়ে ডিএমপিকে চিঠি দিয়েছি। ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা নয়াপল্টন এই দুই জায়গার কোথাও সমাবেশের অনুমতি না পেলে বিকল্প হিসেবে বিএনপি কী করবে?’— এমন প্রশ্নের জবাবে রিজভী আহমেদ বলেন, এ প্রশ্নের জবাব আগামী ৫ জানুয়ারি জানানো হবে। তবে তারা অনুমতির অপেক্ষা করছেন এবং জনসভার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। তিনি আরও জানান, বিএনপি গণতান্ত্রিক দল। কোনো ধরনের সংঘর্ষে জড়াতে চায় না। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। আশা করি গণতন্ত্রের স্বার্থে সরকার এতে সহযোগিতা করবে। 

নিরাপত্তা পরিস্থিতি দেখে বিএনপিকে অনুমতি : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, নিরাপত্তা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেই বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। গতকাল রাজধানীর মিরপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো কর্মসূচি করবে, এটাই তো স্বাভাবিক। এ ছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে দেশের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হয়। যে কোনো ধরনের নিরাপত্তার আশঙ্কা থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি দেখবে এবং ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা না থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপিকে সমাবেশ করতে অনুমতি দেবে। মন্ত্রী ফায়ার সার্ভিসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহম্মেদ খান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

সাংঘর্ষিক কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া হবে না : ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে গতকাল দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির অনলাইন নিউজ পোর্টালের তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে জননিরাপত্তা। যদি আমাদের কাছে অনুভূত হয়, পরস্পরবিরোধী সমাবেশ একই স্থানে, একই সময়ে হবে, সেখানে জননিরাপত্তার স্বার্থে আমরা কোনো ধরনের সাংঘর্ষিক সমাবেশের অনুমতি দিতে পারি না। সুস্পষ্টভাবে বলছি, সাংঘর্ষিক কোনো কর্মসূচি, যেখানে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, যেটা নিকট অতীতে আমরা অনেকবার দেখেছি। এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডের অনুমতি আমরা দেব না। এ ধরনের কর্মকাণ্ড যেই করুক তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

কমিশনার আরও বলেন, ডিএমপির কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। ডিসি রমনা ও ওসি শাহবাগের কাছে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট অফিসারদের উদ্ভূত পরিস্থিতি কী হতে পারে, হুমকি বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন দিতে বলেছি। আমরা এ প্রতিবেদন পেলে সমাবেশের অনুমতির ব্যাপারে চূড়ান্তভাবে দুই দলকে জানিয়ে দেব। কোনো দল তাদের কর্মসূচির জন্য বিকল্প স্থান চাইলে পুলিশ কী করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ যদি শান্তিপূর্ণভাবে কোনো কর্মসূচি করে, তাতে পুলিশের বাধা দেওয়ার কোনো কারণ নেই।

সর্বশেষ খবর