সোমবার, ৪ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

দেশে নেই প্রতিবাদী পদত্যাগের রীতি

প্রতিদিন ডেস্ক

দেশে নেই প্রতিবাদী পদত্যাগের রীতি

এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী

আমাদের দেশে প্রতিবাদী পদত্যাগের রীতি খুব একটা নেই বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি বলেন, রাজনীতিতে যারা বাজে আচরণ করে, যারা অগণতান্ত্রিক আচরণ করে, ভুল পথে এগোয়, তারাই আসলে ভুল করেন। একটি ভ্রান্তি হলেও রাজনীতিতে তার মাশুল নেতা এবং দলকেই দিতে হয়। নিউইয়র্ক থেকে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত সাপ্তাহিক ঠিকানাকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে তিনি এসব মন্তব্য করেন। ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম দিন বাজারে এসেছে পত্রিকাটি।

সাক্ষাত্কারে   ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিএনপির বর্জনের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, সিদ্ধান্ত মোটেও সঠিক ছিল না। বিএনপি মস্তবড় সুযোগ হারিয়েছে। সে জন্য জনগণ সাধারণভাবে হতাশ হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গে বিএনপির অস্পষ্টতার বিষয়ে তিনি বলেন, অন্যদের কথা জানি না। অন্তত নিজের দলের যে দুজন নেতার বিচার হলো, এ ব্যাপারে তাদের স্পষ্ট বক্তব্য আসা উচিত ছিল। তাহলে জনসমর্থন তো কমত না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বর্তমান সরকারের  মূল্যায়ন করে বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের সময় অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে অগ্রগতি হয়নি এ কথা বললে ভুল বলা হবে। সামাজিক, অর্থনৈতিক ইনডেক্স-এর মাপকাঠিতে বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক ইনডেক্স-এ তাদের চরম ব্যর্থতা সারা পৃথিবী লক্ষ করেছে। হত্যা, গুম এগুলো কখনো সঠিক রাজনীতি হতে পারে না। ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে শতকরা ৫২ ভাগ প্রার্থীকে জবরদস্তি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত বলে ঘোষণা করা হলেও শতকরা ৫ ভাগের বেশিই ভোটার ভোট দিতে যায়নি। এগুলোকে গণতন্ত্র বলে চালিয়ে নেওয়ার প্রয়াস একদিকে যেমন হাস্যকর, অন্যদিকে তেমনি রাজনীতির ইতিহাসে কলঙ্কজনক বলে চিহ্নিত হবে। বর্তমান সরকারের বহু মন্ত্রীই আসলে অনির্বাচিত। সুতরাং একটি অনির্বাচিত সরকার যা করছে তা বিধিসম্মত কিনা এটা ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জ হতে পারে। যারা সরকারবিরোধী তাদের মাঠে দাঁড়াতে দেবেন না, সরকারের পেটোয়া বাহিনী পুলিশ, র্যাব ব্যবহার করে তাদের কণ্ঠ চেপে ধরার চেষ্টা করবেন, এগুলো সঠিক রাজনীতি হতে পারে না। এ ধরনের রাজনীতির মাধ্যমে অর্জিত উন্নয়নের ফলাফল শেষ পর্যন্ত নেগেটিভ ফলাফল বয়ে আনে। শেখ হাসিনা রাজনৈতিকভাবে আবার যদি সত্যিকার গণতন্ত্রে ফিরে আসেন, তাহলে তার জন্য তা মঙ্গলজনক হবে। বহুল আলোচিত দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসের পরও যেটুকু সাফল্য অর্জিত হয়েছে তা সম্মানজনকভাবে তুলে ধরতে পারবেন।

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে মূল্যায়ন জানতে চাইলে বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়া মুক্তিযুদ্ধের অগ্রদূত। অত্যন্ত সত্ মানুষ এবং অসাধারণ দেশপ্রেমিক। তার সঙ্গে কাজ করে আমার জীবনের একটা স্বর্ণময় অভিজ্ঞতা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে আমিসহ আরও কয়েকজন দেশের ক্রান্তিলগ্নে রাজনীতিতে নিয়ে আসি। এটা প্রয়োজন ছিল। যেহেতু বঙ্গবন্ধুকন্যা তার আগেই রাজনীতিতে নেমে গেছেন। তাদের সামগ্রিক সাফল্য জনগণ জানে। তারেক রহমান সম্পর্কে মূল্যায়ন জানতে চাইলে বলেন, তিনি আমার চেয়ে অনেক জুনিয়র। তার সম্পর্কে আমার কোনো বক্তব্য দেওয়া সাজে না। জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি প্রসঙ্গে বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট বলেন, এটি একটি রাজনৈতিক খেলা। সরকারের যদি ইচ্ছা থাকত তা হলে অনেক আগেই তাদের রাজনীতি বন্ধ করতে পারত। আমার মনে হয়, তাদের মনে দুটি ভয়, এক. জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হলে এবং আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতি করলে এটা দমন করার শক্তি সম্পর্কে তারা নিজেরাই সন্দিহান। দুই. অন্যদিকে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা বিরোধী দলে প্রত্যক্ষভাবে যোগ দিলে (অন্য কোনো নামে অথবা নতুন দল করে) বিরোধী দলের রাজনৈতিক শক্তি বাড়তে পারে। এ জন্যই সরকার দ্বিধাগ্রস্ত। বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার সঙ্গে যখন গণতন্ত্র যুক্ত হবে, তখনই বুঝব সত্যিকারের স্বাধীনতা এসেছে। আশা করি নতুন বছরে সেই সাফল্য দেখব।

সর্বশেষ খবর