বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাম রাজনীতির সেই টিপু বিশ্বাস এখন...

পাবনা প্রতিনিধি

বাম রাজনীতির সেই টিপু বিশ্বাস এখন...

জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক কমরেড টিপু বিশ্বাস বলেছেন, দেশের জনগণ স্বস্তিতে নেই। দেশ যেভাবে চলছে এভাবে চলতে পারে না। ‘স্বাধীনতা ব্যাপক জনগণের জন্য’ এটা নিশ্চিত করা চাই।

টিপু বিশ্বাস গতকাল দুপুরে ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরও বলেছেন, ব্যাপক জনগণের জন্যে স্বাধীনতা, জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তার জন্যে গণআন্দোলন, গণসংগ্রাম, গণঅভ্যুত্থান চালিয়ে জনগণের রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন বেগবান করার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, গণআন্দোলনে অতীতের স্বৈরশাসকদের পতন হয়েছে। এভাবে বর্তমান স্বৈরশাসকদেরও পতন অবশ্যম্ভাবী। টিপু বিশ্বাসের রাজনীতির শুরু ১৯৬১ সালে, তখন তিনি পাবনা জেলা স্কুলের ছাত্র। তিনি ৫৫ বছর ধরে গণমুখী রাজনীতি করছেন। এ সময়ে মন্ত্রিত্বসহ নানা প্রলোভনের হাতছানি পেয়েছেন, সেসব তিনি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে কৃষক শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের পাশে থেকেছেন। তাদের ভাগ্যোন্নয়নের আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছেন। বহুবার জেল জুলুম ও নিপীড়ন সয়েছেন, তবু পিছু হটেননি। ১৯৬৮, ১৯৬৯’র গণআন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। ক্ষমতাসীনদের জুলুম নিপীড়নে বহুবার আত্মোগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। টিপু বিশ্বাস এক ছেলে ও এক মেয়ের পিতা। ছেলে সস্ত্রীক আমেরিকার মিশিগানে বাস করেন। মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতোকোত্তর শেষ করে মায়ের সঙ্গে ঢাকায় বাস করছেন। পাবনা শহরের খেয়াঘাট রোডের বাসিন্দা প্রবীণ রাজনীতিক টিপু বিশ্বাস নানা বাধা বিপত্তির মধ্যেও রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। অবসরে বই পড়েন তিনি। টিপু বিশ্বাস বলেন, ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচন ছিল একটি তামাশা। ভোটারবিহীন এ নির্বাচন হয়েছিল ভারতীয় আধিপত্যবাদীদের সরাসরি মদদে ও সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়। তিনি বলেন, এই নির্বাচনের পর থেকে দেশে গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই। সরকার ফ্যাসিবাদী কায়দায় দমন, পীড়ন, খুন ও হত্যা চালাচ্ছেন। সভা-সমাবেশ প্রতিরোধ করে যাচ্ছেন। বিরোধী শক্তির উপর মিথ্যা মামলা, হামলা ও গ্রেফতার করে চলেছেন। বাস্তবিকপক্ষে দেশ একটি কারাগারে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উদ্ভবের সময় থেকেই এই রাষ্ট্র ও শাসকশ্রেণি ব্যাপকভাবে জনগণের উপর শোষণ নিপীড়ন নির্যাতন চালিয়ে আসছেন। ক্ষমতাসীন এই শাসকশ্রেণি মার্কিনসহ সব সাম্রাজ্যবাদ এবং আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী ভারতের তাঁবেদার ও ক্রীড়ানক। টিপু বিশ্বাস বলেন, সরকারি দলের মন্ত্রী, এমপি ও ক্যাডার বাহিনীর তাণ্ডব, টেন্ডারবাজি, লুটপাট, মাদক ব্যবসা ও নিয়োগ বাণিজ্য জমজমাটভাবে চলছে। শাসকগোষ্ঠী একদিকে দেশের কয়লা, গ্যাস বিদেশে পাচার করছে অপরদিকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদনের নামে সুন্দর বনের মতো মহা মূল্যবান সম্পদ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে। দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে তৎকালীন বিএনপি সরকার জনরোষের মুখে উন্মুক্তভাবে কয়লা খনন কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হলেও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে আবার উন্মুক্তভাবে কয়লা খননের ষড়যন্ত্র ও পাঁয়তারা করছে। জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুতের যে ভয়ঙ্কর ও ধ্বংসযজ্ঞ দুর্ঘটনা আমরা পরিলক্ষিত করলেও এই সরকার পাবনার রুপপুরে রাশিয়ার সহযোগিতায় সর্বনাশা পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। সরকার যে নীতিতে চলছে তা ‘কম গণতন্ত্র ও তথাকথিত উন্নয়ন।’ এটা শোষক ও শাসকদের গণতন্ত্র ও উন্নয়ন। সরকার দেশকে ‘মধ্যম আয়ের দেশ’ বলছে। কিন্তু কথিত এই উন্নয়নের অংশীদার জনগণ নয়। তিনি বলেন, সরকারের বেতন স্কেল ও গ্রেড বিভাজন সরকারি ঊর্ধ্বতন আমলাদের স্বার্থে প্রণয়ন করা হয়েছে। এর দ্বারা সাধারণ জনগণ প্রতারিত হচ্ছেন বা হবেন। এর বিপরীতে মূল্যস্ফীতি ঘটছে, ফলে জনগণ চরম দুর্ভোগের শিকার হবে।

সর্বশেষ খবর