শিরোনাম
বুধবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিএনপিতে কাউন্সিলের হাওয়া, গোপনে প্রস্তুতি

মাহমুদ আজহার

বিএনপিতেও বইতে শুরু করেছে কাউন্সিলের হাওয়া। চার বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া বর্তমান কমিটির অবসান কবে হবে, তা নিয়ে দলের ভিতরে-বাইরে আলোচনা চলছে। কবে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ভারমুক্ত হবেন, সেই কৌতূহল কেন্দ্রের থেকে তৃণমূলেই বেশি। সাত বছর আগে গঠিত বর্তমান নির্বাহী কমিটি থেকে কারা বাদ পড়ছেন, আর যোগ হচ্ছে কোন কোন নতুন মুখ, তা নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় তুলছেন বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। এদিকে কাউন্সিলের আগে কিছু জেলা কমিটি পুনর্গঠন ও ভাঙা-গড়া নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে বিএনপির তৃণমূল নেতৃত্বে। সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর অনেকেই এ জন্য ঢাকায় তদবির শুরু করেছেন। দলের নীতিনির্ধারণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, মার্চে পৌরসভার বাকি নির্বাচন ছাড়াও অনুষ্ঠিত হবে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। পৌরসভার মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ইউপি নির্বাচনেও ধানের শীষ নিয়ে অংশ নেবে দেশের প্রধান বিরোধী দলটি। তার আগে দল গোছানোর প্রক্রিয়ায় কাউন্সিল শেষ করতে চান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার নির্দেশনা অনুযায়ী চলছে জাতীয় কাউন্সিলের প্রাক-প্রস্তুতি। আগামী শনিবার ডাকা হয়েছে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক। ওই বৈঠকেই কাউন্সিলসহ সাংগঠনিক পুনর্গঠন ইস্যু ছাড়াও আসন্ন ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।  দলের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি হিসেবে দলে বেশ কয়েকটি জেলা কমিটি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ১০টির মতো সাংগঠনিক জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়েছে। খুব শিগগিরই অন্তত ২০টি জেলায় সম্মেলন করে নতুন কমিটি করা হবে। মেয়াদোত্তীর্ণসহ নানা কারণে ১৫ থেকে ২০টি জেলা কমিটি ভেঙে গঠন করা হবে আহ্বায়ক কমিটি। এরই মধ্যে ভেঙে দেওয়া হয়েছে মাগুরা জেলা কমিটি। ফলে ভাঙা-গড়া নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে  বিএনপির তৃণমূল নেতৃত্বে। আসন্ন কাউন্সিল প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা কাউন্সিল করতে চাই। নতুনভাবে দলকে পুনর্গঠন করতে চাই। তবে সবকিছুই নির্ভর করবে রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। আশা করছি, শিগগিরই আমরা একটি কাউন্সিল করতে পারব।’ জানা যায়, মার্চের মধ্যেই কাউন্সিল করতে চায় বিএনপি। তবে এর আগেও কাউন্সিল হতে পারে। এর আগে একাধিকবার বাধা আসায় কাউন্সিলের দিনক্ষণ জানাতে চায় না বিএনপি। এটাকে ‘চমক’ হিসেবেই রাখতে চায় দলটি। কাউন্সিলের প্রাক-প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে কাউন্সিলের জন্য উপকমিটিও গঠন করা হচ্ছে। গঠনতন্ত্র সংশোধন নিয়ে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতাকে দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। আধুনিক ধারায় গঠনতন্ত্র প্রণয়নে কাজ চলছে। কাউন্সিলের মাধ্যমে ‘নতুন আদলে বিএনপি’ গড়াই লক্ষ্য বেগম জিয়ার। কাউন্সিল প্রস্তুতির কাজ চলছে অনেকটা নীরবে। বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এবারের কাউন্সিল নিয়ে হাঁকডাক বেশি দেওয়া হবে না। অনেকটা হুট করেও হয়ে যেতে পারে। কথার চেয়ে কাজ বেশি করা হবে। থাকবে বেশকিছু চমক। ‘এক নেতার এক পদ’ রাখার ব্যাপারে এখনো অনড় দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া। যদিও দলের একাংশ তা চায় না। ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে নির্বাহী কমিটিতে। আকারও ছোট হতে পারে নির্বাহী কমিটির। জেলা পর্যায়ের অনেক বঞ্চিত নেতা নির্বাহী কমিটিতে ঠাঁই পেতে পারেন। বিশেষ করে বিগত আন্দোলনের সময় বেগম জিয়া পদবঞ্চিত যে নেতাদের সাড়া পেয়েছেন তাদের নির্বাহী কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। বয়োবৃদ্ধ নেতাদের নেতৃত্বে সিনিয়র উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হতে পারে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বলেন, বিএনপির চিন্তায় এখন কাউন্সিল। তবে এই কাউন্সিল আমরা কবে করতে পারব তা বলতে পারছি না। এটা দুই সপ্তাহের মধ্যেও হতে পারে আবার দুই মাসও লাগতে পারে। কাউন্সিল নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, এর আগেও একাধিকবার কাউন্সিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকারি বাধায় তা হতে পারেনি। আমরা এখনো প্রতিকূল অবস্থায় আছি। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে বিশাল আয়োজনে কাউন্সিল করব। কাউন্সিলে চমক থাকবে। জানা যায়, কাউন্সিল সামনে রেখে ইতিমধ্যে মাগুরা জেলা কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বিএনপির সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও আলী আহমেদকে সদস্য সচিব করে ৫১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তাদের ২ মাসের মধ্যে জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর