শিরোনাম
বুধবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালেন শিক্ষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

অবশেষে কর্মবিরতি থেকে সরে দাঁড়ালেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আজ থেকে তারা ক্লাসে ফিরে যাবেন। গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভা শেষে শিক্ষক নেতারা আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দেন। এরই মধ্য দিয়ে টানা ৯ দিন পর সচল হচ্ছে দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষক নেতারা বলছেন, দাবি মেনে নেওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের ওপর ‘পূর্ণ আস্থা’ রেখেই তারা ক্লাসে ফিরে যাচ্ছেন। অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোয় সিলেকশন গ্রেড বহালসহ বিভিন্ন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে গত ১১ জানুয়ারি থেকে কর্মবিরতি পালন করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। গতকাল ঘণ্টাব্যাপী সভা শেষে সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্বের প্রতি আমরা আস্থাশীল। তিনি আমাদের দাবি-দাওয়া নিজে দেখবেন এবং পূরণ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। সে আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও শ্রদ্ধা রেখে আমরা আমাদের চলমান আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করছি।’ তবে তিনি বলেন, কোনো আমলার কূটকৌশলের কারণে এ দাবি-দাওয়া আদায়ে বিলম্ব হলে অথবা খণ্ডিতভাবে মেনে নেওয়া হলে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন তা মেনে নেবে না। শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের  নেতাদের সম্পৃক্ত করেই দাবি-দাওয়াগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলেও জানান তিনি। তিনি আরও জানান, আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি ফেডারেশনের শিক্ষকদের সঙ্গে একটি সাধারণ সভার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনের আগে বাংলাদেশের ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক ঘণ্টা বৈঠক হয়। সেখানে আলোচনা  শেষে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান মাকসুদ কামাল। ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন সভাপতি অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদসহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতারা। অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গতকাল (সোমবার) আমাদের চা-চক্রে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমরা তার ডাকে সাড়া দিয়ে সেখানে গিয়েছি। চা-চক্রের সময় তিনি আমাদের সঙ্গে দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেছেন। সেখানে আমাদের সঙ্গে অনেক সচিবও উপস্থিত ছিলেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবিগুলো উপস্থাপন করেছি। দাবিগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করেছি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন। আমাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিতে অনুরোধ করেছেন।’ এদিকে গতকালও নবম দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করেছেন সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। গতকাল সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল শিক্ষক নেতাদের নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিরে গিয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা ডেকে বাকি শিক্ষকদের বিষয়টি বুঝিয়ে বলার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘স্থগিত মানেই আন্দোলন থেমে যাওয়া নয়। এটিও আন্দোলনেরই একটি অংশ।’ এই ঘোষণার পর দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিই তাদের কর্মবিরতি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আজ সাধারণ সভা ডেকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বাকি শিক্ষকদেরও এই সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন। এরপরই তারা ক্লাসে ফিরে যাবেন। উল্লেখ্য, গত বছরের মাঝামাঝিতে অষ্টম বেতন কাঠামো প্রস্তাবের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা নানা কর্মসূচিতে নিজেদের ‘মর্যাদাহানি ও সুবিধা কমে যাওয়ায়’ আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। গত মাসে বেতন কাঠামোর গেজেট প্রকাশের পর শিক্ষকদের বিরোধিতার মুখে সরকার একটি কমিটি গঠন করে। কিন্তু তারপরও শিক্ষকদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। এরই জের ধরে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত ২ জানুয়ারি লাগাতার কর্মবিরতির  ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গত ১১ জানুয়ারি থেকে টানা কর্মবিরতিতে যান শিক্ষকরা। এতে অচল হয়ে পড়ে দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।

সর্বশেষ খবর