শিরোনাম
শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

অসুস্থ হলে বিদেশে নেবেন না দেশেই চিকিৎসা নেব

মায়ের নামে করা হাসপাতালে আবেগাপ্লুত প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি

অসুস্থ হলে বিদেশে নেবেন না দেশেই চিকিৎসা নেব

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের উদ্দেশে গতকাল এক আবেগমাখা কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন, আমি কখনো অসুস্থ হয়ে পড়লে বিদেশে নিয়ে যাবেন না, তুলবেন না এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে, দেশেই আমার চিকিৎসা করাবেন।  প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় আরও ঘোষণা দেন, এখন থেকে দেশের মাটিতেই চিকিৎসা নেবেন তিনি।

গাজীপুরের কাশিমপুরের তেতুইবাড়িতে মায়ের নামে নির্মিত হাসপাতালে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর পর চিকিৎসকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল সকালে শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতালের কাউন্টারে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান তিনি। প্রধানমন্ত্রী নিজেই হাসপাতালের কাউন্টারে স্বাস্থ্য চেকআপের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন ও ফি পরিশোধ করেন। এ সময়ে তিনি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। হাসপাতালের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক একে একে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। চিকিৎসক ও হাসপাতালের কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালের চিকিৎসার মান সমুন্নত রাখার আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, আমি যদি কখনো অসুস্থ হয়ে পড়ি, আপনারা আমাকে বিদেশে নেবেন না। আমি দেশের মাটিতে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নেব। সকাল ৮টায় গণভবন থেকে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী। হাসপাতালে স্বাস্থ্য চেকআপ শেষে ডাক্তার, কর্মকর্তা ও উপস্থিত সুধীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরও আগেই বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে এখানে আসার ইচ্ছা ছিল। আমরা চিন্তা করেছি, ভবিষ্যতে এখানে আমরা একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করব। দেশে জনসংখ্যার তুলনায় ডাক্তারের প্রয়োজন আরও রয়েছে। এ ছাড়া এখানে রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক মানের নার্সিং ইনস্টিটিউট। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ শ্রমিক। এখানে সাধারণ মানুষের সংখ্যাই বেশি। তাদের চিকিৎসাকষ্ট লাঘব এবং চিকিৎসাসেবা দেওয়া আমাদের কর্তব্য। এ এলাকায় উন্নতমানের হাসপাতালের সংখ্যা কম। সে চিন্তা থেকেই এখানে এ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিই। তিনি বলেন, যেহেতু এখানকার বেশির ভাগ রোগী আর্থিকভাবে অসচ্ছল, তাই তাদের আর্থিকভাবে সুবিধাও দিতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি ডাক্তারদের কনসালট্যান্সি ফি কমানোর পরামর্শ দেন। মতবিনিময় সভায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, ডা. মো. হাবিব এ মিল্লাত এমপি, ডা. এনামুর রহমান এমপি, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ্, নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, চক্ষু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দীন মো. নুরুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াাল ট্রাস্টের সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান, হাসপাতালের সিইও জয়তুন সোলায়মান, পরিচালক আরিফ মাহমুদ, হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সদস্য বায়েজিদ খুরশিদ রিয়াজ উপস্থিত ছিলেন।  প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালের ফান্ডে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ১০ কোটি টাকার অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, যেহেতু হাসপাতালটি আমাদের মায়ের নামে, তাই এখানে পরিবারের সবাই অনুদান দেবে। আপনাদের এবং হাসপাতালের যে কোনো সমস্যা জানাবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে সবাই দেশের স্বনামধন্য চিকিৎসক। এ ছাড়া দেশের অনেক ভালো চিকিৎসক ইতিমধ্যে অবসরে গেছেন। যদি কোনো চিকিৎসক এখানে চিকিৎসাসেবা দিতে আগ্রহী হন, তারা প্রতিদিন এখানে আসতে পারেন। এভাবেই এ হাসপাতালকে আরও উন্নত করে তুলতে পারব। জনগণের সেবা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার সময় চিন্তা করলাম, আমাদের একার পক্ষে এটি পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাই মালয়েশিয়ার খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান কেপিজে-কে যুক্ত করা হয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী, শেখ রেহানা ও আমি এটি উদ্বোধন করি। এখান থেকে কোনো লাভ নিতে চাই না। ফিক্সড ডিপোজিটের জন্য যে ১০ কোটি টাকার ফান্ড দেওয়া হবে সেখান থেকে যে টাকা আসবে তা দিয়ে গরিব ও মুক্তিযোদ্ধাদের ফ্রি চিকিৎসা দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী ম্যানেজমেন্ট কমিটিকে নিয়মিত সভা করে চিকিৎসাসেবা আরও উন্নত কীভাবে করা যায় তার পরামর্শ দেন। তিনি হাসপাতালে ফার্মেসির জন্য নির্ধারিত জায়গায় সুপরিসর ও অত্যাধুনিক ফার্মেসি চালু করার পরামর্শ দেন।

সর্বশেষ খবর