শিরোনাম
শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
খোলা চোখে

তবুও আমরা ভুলে যাই

আলী রীয়াজ

বিভিন্ন সময়ে পুলিশের হাতে সাধারণ মানুষের নিহত হওয়া, নির্যাতিত হওয়া বা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটলে সরকারের পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা, যেমন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বলে থাকেন যে এগুলো ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা। চাঁদা না পেয়ে পুলিশের ছোড়া তেলের চুলার বিস্ফোরণে দগ্ধ চা-দোকানি বাবুল মাতুব্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার মারা যাওয়ার পরও একই রকমের প্রতিক্রিয়া দেখতে পাই। এ ধরনের ঘটনার পরে এ বিষয়ে লেখালেখি হয়, যিকঞ্চিত প্রতিবাদ হয়, পুলিশের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা’ গৃহীত হয়। কিন্তু তারপরে আবার বিস্মৃত হই বা অন্য বিষয়ে মনোযোগ দিই। আবার এ বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয় আরেক ঘটনার পরে। যদিও প্রতিটি ক্ষেত্রেই অনেকেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত প্রকাশ করেন যে, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা, কিন্তু আমাদের আচরণ এবং কথাবার্তা শেষ পর্যন্ত এ অবস্থান থেকে ভিন্ন কিছু হয় না। এগুলোকে আমরা যদি কাঠামোগত এবং বিরাজমান রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করতে না পারি তবে এগুলোকে বড়জোর ঘন ঘন বা নিয়মিতভাবে ঘটা ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনার চেয়ে বেশি কিছু মনে হবে না। আর সে ক্ষেত্রে এ অবস্থার কারণ বা সমাধান কোনোটাই খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমরা এ নিয়ে কথা বলে আত্মতৃপ্তি পেতে পারি, যারা একটি ঘটনায় কথা বললেন কিন্তু অন্য ঘটনায় কথা বললেন না তাদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারি তবে এ বৃত্তচক্র থেকে বেরোবার পথ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ প্রসঙ্গে আপনি এমনভাবেও কথা বলতে পারেন যাতে মনে হবে যেন পুলিশ একটি স্বশাসিত বা স্থানীয় সরকারের অধীন প্রতিষ্ঠান, ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে এর কোনো যোগাযোগ নেই। কিংবা একে একেবারে রাজনীতির বাইরের বিষয় বলেও ভাবতে পারেন। এখন একজন সংসদ সদস্য যে প্রশ্ন তুলেছেন তা বেশ কৌতূহলোদ্দীপক বলেই মনে হয় ‘পুলিশের ভিতরে এরা কারা?’ যদিও সংসদ সদস্য প্রকারান্তরে এটাই বলতে উৎসাহী যে এর পেছনে কোনোরকমের ষড়যন্ত্র রয়েছে, কিন্ত আসলে কি সংসদ সদস্য অবগত নন এরা কারা? পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে যেসব অভিযোগ তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে তাদের কর্মকর্তারা যে ধরনের কথাবার্তা বলেছেন এ আচরণ কি তার সঙ্গে সংগতিহীন? এ বিষয়ে আমার ধারণা যে একে জবাবদিহিতা ও গভর্ন্যান্সের প্রেক্ষাপটেই দেখতে হবে। যেখানে রাষ্ট্রীয় বাহিনী বা বাহিনীসমূহ আইনবহির্ভূত আচরণের জন্য এক ধরনের দায়মুক্তি লাভ করেছে এবং নতুন নতুন বাহিনী গড়ে তোলা হচ্ছে সেখানে একটি-দুটি ঘটনাকে আপনি যদি ওই দায়মুক্তির বাইরে বলে বিবেচনা করেন তবে আপনিও আসলে এগুলোকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলেই দেখলেন। আপনাকে বিবেচনা করতে হবে যে আপনি বিরাজমান দায়মুক্তির ব্যবস্থার, শাসনের ধরন হিসেবে শক্তির প্রাধান্যের, ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকারের অনুপস্থিতির এবং ভয়ের সংস্কৃতির যে পরিবেশ তার বিরুদ্ধে কথা বলতে চান কিনা।

লেখক : যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর