শিরোনাম
শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
আ-মরি বাংলা ভাষা

সর্বস্তরে বঙ্গাব্দ চালুর বিনীত প্রস্তাব

মাশুক চৌধুরী

সর্বস্তরে বঙ্গাব্দ চালুর বিনীত প্রস্তাব

সরকারও চেষ্টা করছে, সব সরকারই। পাকিস্তান আমলেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলা একাডেমি, বাঙলা উন্নয়ন বোর্ড, সংকলিত হয়েছে বাংলা ভাষার আঞ্চলিক শব্দের অভিধান। এ সবই হয়েছে সেই সরকারের আমলে, যারা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছিল। অবশ্য বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আদায়ের জন্য    এর আগেই বাংলাদেশের মানুষকে রক্ত দিতে হয়েছে, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। সেই রক্ত বৃথা যায়নি। কোনো আন্দোলনই ব্যর্থ হয় না। ভাষা আন্দোলনেই মাতৃভাষা বাংলা পেয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। জাতীয় গৌরবের সে আন্দোলন পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। বাংলাকে মাতৃভাষা করার রক্তঝরা আন্দোলনের দিনটি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। মনে হয়, সাফল্যটা আমরা রাজনৈতিকভাবেই বেশি পেয়েছি। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসকে জয় করতে সক্ষম হয়েছি। যে কোনো জাতির জন্য মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জাতীয় স্বাধীনতা অর্জন অবশ্যই শ্রেষ্ঠ অর্জন। এই শ্রেষ্ঠ অর্জনের বীজ রোপিত হয়েছিল ভাষা আন্দোলনের রক্তধারয়ই। এত সাফল্যের মধ্যে নিজের কাছে নিজেই একটা প্রশ্নের মুখোমুখি হই। প্রশ্নটা হচ্ছে এই যে, ভাষার জন্য ইতিহাসজয়ী গৌরবের আন্দোলন করেছি সেই বাংলা ভাষার প্রসারে উত্কর্ষতায় শুদ্ধ ব্যবহারে আমরা কতটা সফল? আমরা কি সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলন করতে পেরেছি? উত্তরটা দুঃখজনক হলেও বলব, পারিনি। অফিস-আদালত ও উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমে এমনকি কর্মজীবনের বিভিন্ন স্তরেও বাংলা ভাষা ব্যবহারে অভ্যস্ত হইনি আমরা। পয়লা বৈশাখ নববর্ষ, নবান্ন, পৌষমেলা, বসন্তবরণ করি ঠিকই; তবে তা শহরের সাংস্কৃতিক মণ্ডলেই সীমাবদ্ধ থাকে। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সঙ্গে এসবের কোনো যোগাযোগ নেই। দুঃখের বিষয়, এসব বাঙালি উৎসব কবে তা মনে রাখতে খ্রিস্টাব্দের দিনপঞ্জিকায় দাগ কেটে রাখি। যেমন বন্ধুবান্ধবকে বলি, মনে রাখবি কিন্তু ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ। সেও বাংলা নববর্ষ! বাঙালি জাতির নববর্ষকে শুধু নববর্ষ বললে হয় না, বলতে হয় বাংলা নববর্ষ। শুধু নববর্ষ নয়, আমরা চাকরির হাজিরা খাতায় সই দিই খ্রিস্টীয় তারিখে, বেতন পাই সে হিসেবেই। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজিরা ডাকা হয় ইংরেজি ভাষার সংখ্যায়; উত্তরেও বলি ইয়েস স্যার, প্রেজেন্ট স্যার। একমাত্র কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাড়া সব স্মরণীয় ব্যক্তির জন্ম-মৃত্যু দিবস পালন করি খ্রিস্টীয় তারিখে। অবশ্য, কবি নজরুলের জন্মদিনটাও বঙ্গাব্দের হিসাবেই পালন করি। মৃত্যু দিনটা করি না। সম্রাট আকবর বাংলা সাল চালু করেছিলেন ফসলের মাস নির্ধারণ করে রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে। কিন্তু আমরা তা মানি না। খাজনাপাতি দিই খ্রিস্টীয় বর্ষের তারিখেই। ভাষা আন্দোলনে রক্তদানের ৬৪ বছর পরও আমরা সর্বস্তরে মাতৃভাষা চালু করতে পারলাম না। যত সরকার আসে শুধু আইন করে কঠোর ভাষায় নির্দেশ দেয় আর জনগণ প্রতি বছর শুধু এক দিন কান্নাকাটি করে, নগ্নপদে মিছিল করে, অন্তর দিয়ে শপথ গ্রহণ করে। কিন্তু সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হয় না।

মনে হয়, কর্মজীবন ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে খ্রিস্টীয় দিনপঞ্জি ব্যবহারের রেওয়াজ অব্যাহত রাখার বিষয়টি আমাদের পিছু টানছে। প্রস্তাব করছি, আমাদের জীবনে বঙ্গাব্দের হিসাব চালু করা হোক। লেখক : কবি, সাংবাদিক।

সর্বশেষ খবর