শিরোনাম
রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

সিঙ্গাপুরে শ্রমবাজার ঘিরে অপতৎপরতা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

সিঙ্গাপুরে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর নামে প্রতারণা করছে কয়েকটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। এদের কোনো কোনোটির রিক্রুুটিং এজেন্সির লাইসেন্সই নেই। আবার রিক্রুুটিং লাইসেন্স থাকলেও সিঙ্গাপুরে শ্রমিক পাঠানোর কোনো অনুমোদন নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শ্রমিকরা নির্ধারিত বেতন ও অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেকে পাচ্ছেন না প্রতিশ্রুত কাজ। বেতন-ভাতা না পেয়ে এক বছর পর ওয়ার্ক পারমিট নবায়নের সুযোগ না পেয়ে খালি হাতে দেশে ফিরতে হচ্ছে। অবশ্য শ্রমিকদের প্রতারিত হওয়ার পাশাপাশি জঙ্গি কর্মকাণ্ড সম্পৃক্তদেরও সিঙ্গাপুরে যাওয়ার শঙ্কা থেকে যায় এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।

জানা যায়, আশুলিয়ার জিরাবো বাজারের কাছে দুর্গাপুরের পূর্বচালা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে শ্রমিক পাঠানোর কাজ করছে ‘নোভা সিঙ্গাপুর স্কিল ট্রেনিং সেন্টার’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এটি সিঙ্গাপুরে কর্মী প্রেরণে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত সেন্ডিং অর্গানাইজেশন নয়। এ নামে নেই কোনো ট্রেনিং পরিচালনার সরকারের অনুমোদন। অথচ নোভা সিঙ্গাপুর স্কিল ট্রেনিং সেন্টার  কোরিয়ান মালিকানাধীন একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে কর্মী পাঠানোর জন্য সিঙ্গাপুরস্থ ইমপ্লয়মেন্ট জেএলইউ গ্লোবাল ক্যারিয়ার পিটিই লিমিটেড-এর সঙ্গে অবৈধভাবে চুক্তিবদ্ধ হয়। নোভা সিঙ্গাপুর স্কিল ট্রেনিং সেন্টারের সঙ্গে বাংলাদেশের ওয়েলটেক ইমপ্ল্লয়মেন্ট সার্ভিসেস ও সিঙ্গাপুরস্থ  জেএলইউ গ্লোবাল ক্যারিয়ার পিটিই লিমিটেডের সঙ্গে করা হয় ত্রিপক্ষীয় চুক্তি। সিঙ্গাপুর গমনেচ্ছুক কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা আদায় করছে বেলাল হোসেনের মালিকানাধীন প্রতারক প্রতিষ্ঠানটি।

তুরাগ উপজেলার কামারপাড়ায় মাহি স্কিল সিঙ্গাপুর ট্রেনিং সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে প্রতারণার মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে জনশক্তি পাঠানোর অপচেষ্টায় আছেন মজিবুর রহমান ভূইয়া ওরফে প্রিন্স। তার বিরুদ্ধে কয়েক বছর ধরেই প্রতারণার অভিযোগ আছে। তাই এখন নতুন নাম মাহি ট্রেনিং সেন্টার। এর বাইরে আশুলিয়া, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ডিওসি ট্রেনিং সেন্টার, সিঙ্গাপুর বাংলাদেশ ট্রেনিং সেন্টার, এশিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনালসহ অননুমোদিত ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমেও সিঙ্গাপুর গমনেচ্ছুক কর্মীদের প্রতারিত করা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান বাহারি নামের দেশি-বিদেশি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরে অফিস  দেখিয়ে অবৈধ জনশক্তি রপ্তানির কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সিঙ্গাপুর থেকে ডেলিগেট আনার নাম করে প্রশিক্ষণের নামে মোটা অঙ্কের টাকা নিরীহ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্সের প্রধান যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আকরাম হোসেন বলেন, অভিযোগ আসছে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগেও এমন প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিএমইটির তথ্যানুসারে, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক প্রেরণের সবচেয়ে বড় বাজার সিঙ্গাপুর। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হওয়া সিঙ্গাপুরে গত বছর বাংলাদেশ থেকে গেছেন ৫৫ হাজার ৫২৩ জন দক্ষ-আধা দক্ষ শ্রমিক। চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গেছেন ৪ হাজার ৯৩৬ জন বাংলাদেশি। সিঙ্গাপুরে প্রত্যেক দক্ষ নির্মাণ শ্রমিকের প্রতি আট ঘণ্টা কাজের জন্য সে দেশের সরকার ১৬ থেকে ১৮ সিঙ্গাপুরি ডলার ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ করেছে। কিন্তু প্রতারক প্রতিষ্ঠানগুলো গত কয়েক মাস ধরে এক বছরের চাকরির চুক্তিতে ৭ থেকে ৮ সিঙ্গাপুরি ডলার  বেসিক বেতনে কর্মী প্রেরণ করছে। এতে দক্ষ কর্মীরা মাসে মাত্র ২৫০ থেকে ৩০০ ডলার বেতন পাচ্ছে। অথচ ন্যূনতম  বেসিক বেতন পাওয়ার কথা ছিল ৬০০ থেকে ৭০০ ডলার। অথচ এসব অবৈধ তৎপরতা বন্ধ করে অভিবাসন ব্যয় সহনীয় রাখার লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিঙ্গাপুরে কর্মী প্রেরণের জন্য নির্দিষ্ট নীতিমালার আওতায় ১৪টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে সিঙ্গাপুরে কর্মী প্রেরণের জন্য নিযুক্ত করে। কিন্তু সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছে অপতৎপরতা।

সর্বশেষ খবর