শিরোনাম
রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

কুমিল্লায়ও মিছিলে হামলা হয় রক্ত ঝরে

অ্যাডভোকেট আহমেদ আলী

কুমিল্লায়ও মিছিলে হামলা হয় রক্ত ঝরে

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মতো কুমিল্লায়ও ছাত্র-জনতার রক্ত ঝরেছিল। সেদিন আমার নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার মিছিলটি কুমিল্লা টাউন হল থেকে শুরু হয়। পুলিশ লাইনস, স্টেশন রোড হয়ে রানীর বাজার দিয়ে আবার কান্দিরপাড়ের দিকে মিছিলটি যাত্রা করে। বিহারিদের নুনাবাদ কলোনি সোজা এলে দেখা যায়, তাদের কয়েকটি দোকান খোলা। উল্লেখ্য, সেদিন শহরে দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছিল। দোকান কেন খোলা রাখা হয়েছে, তা জানতে চাইলে কলোনির কয়েকজন ছাত্রদের ওপর হামলা করে। এতে কয়েকজন আহত হন। ছাত্র-জনতার রক্ত ঝরে কুমিল্লায়। প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ মিছিলটির প্রথমে থাকায় ঘটনাটি আমার নজরে পড়েনি, পরে তাদের কাছে গিয়ে কেন হামলা করা হলো, জানতে চাই। টাউন হলে গিয়ে সবাই হামলার খবর শুনে পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নেয়। এর মধ্যে কলোনির নেতারা এসে ক্ষমা চাইলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

কুমিল্লায় ভাষা আন্দোলনের চেতনাটা সবার মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। রিকশাওয়ালারা ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান দিয়ে রিকশা ছাড়ত। ভাষা আন্দোলনের কর্মীরা জর্দার কোটায় করে চাঁদা তুলে আন্দোলনের খরচ চালাত। আমি তত্কালীন ত্রিপুরা জেলার (বর্তমান বৃহত্তর কুমিল্লা) ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কাজী গোলাম মাহবুব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লাকসামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমানের হাত দিয়ে আমার কাছে একটি চিরকুট পাঠান। চিরকুটে লেখা ছিল— রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করতে হবে। আমি তখন কুমিল্লা শহরের পুরাতন চৌধুরীপাড়া প্যারাডাইস হোস্টেলে থাকতাম। ত্রিপুরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান খান সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হন। আমি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হই। আমার সঙ্গে সেক্রেটারি হন প্রয়াত শরীফ আবদুল্লাহ হারুন। ১১ মার্চ কুমিল্লায় ব্যাপক ধরপাকড় হয়। সেদিন টাউন হলে সভা করতে গেলে ২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। আমি কসবা যাওয়ায় গ্রেফতার থেকে রক্ষা পাই।

কুমিল্লার সন্তান গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার দাবি করেছিলেন। কুমিল্লার সন্তান রফিকুল ইসলাম ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস করার জন্য উদ্যোগ নেন। ভাষা আন্দোলনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কুমিল্লার ব্যাপক অবদান রয়েছে। বাংলা ভাষার মর্যাদা আরও সমুন্নত করতে হবে। বিশেষ করে বাংলা বানানের প্রতি অবহেলা রোধে কর্তৃপক্ষকে দৃষ্টি দিতে হবে।

লেখক : ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, অনুলিখন : মহিউদ্দিন মোল্লা

সর্বশেষ খবর