শিরোনাম
বুধবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
বিএনপির সম্মেলন

বিকল্প ভেন্যু ঢাকার বাইরে কোনো বাগানবাড়ি

শফিউল আলম দোলন

দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করার জন্য এখনো ভেন্যু ঠিক করতে পারেনি বিএনপি। এ অবস্থায় ঢাকার অদূরে বিকল্প স্থান খুঁজছে দলটি। রাজধানীর ভিতরে প্রত্যাশিত স্থানগুলোতে অনুমতি না পেলে শেষ পর্যন্ত ঢাকার আশপাশে দলীয় নেতাদের ব্যক্তিগত কোনো বাগানবাড়ি বা বৃহৎ আয়তনের কোনো পিকনিক স্পটেও সেটি করা হতে পারে। এমন প্রস্তাব ভেবে দেখা হচ্ছে বলে দলের কেন্দ্রীয় দফতর সূত্রে জানা গেছে।

সূত্রগুলো জানায়, গাজীপুর, সাভার, কাঁচপুর, রূপগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় দলের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতার মালিকানাধীন বৃহৎ আকারের একাধিক বাগানবাড়ি রয়েছে। যেগুলোর বেশিরভাগই শুকনো মৌসুমে পিকনিকের জন্যও ভাড়া দেওয়া হয়। আর এসব স্পটের একেকটি গড়ে দুই থেকে তিন শত বিঘারও বেশি জমির ওপর স্থাপিত। সাভারে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আলহাজ মোসাদ্দেক আলী ফালু এবং গাজীপুরে আরেক উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর বাগানবাড়িসহ রূপগঞ্জে বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান হুমায়ূনের জিন্দাপার্ক নামে পিকনিক স্পটের কথাও প্রস্তাবে রয়েছে। এসব স্পটে গড়ে ন্যূনতম পনেরো থেকে বিশ হাজার পর্যন্ত নেতা-কর্মীর সংস্থান হবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সরকার যদি শেষ পর্যন্ত ঢাকার ভিতরে কোনো ভেন্যুতে কাউন্সিলের অনুমতি না-ই দেয়, তবে ঢাকার বাইরে এসব নিরাপদ জায়গায় কাউন্সিল আয়োজন করা হতে পারে। যার ফলে ভেন্যু সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি দলীয় কার্যক্রমেও নতুন গতির সৃষ্টি আসবে। অনেক নীতিনির্ধারক যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন, প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বের অনেক বড় বড় গণতান্ত্রিক দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল একেক বছর দেশের একেক প্রদেশ বা শহরে হয়ে থাকে। বিএনপির আসন্ন কাউন্সিলকে ঘিরে গঠিত একটি উপকমিটির আহ্বায়ক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে গতকাল উপরোক্ত মন্তব্য করে ঢাকার ভিতরে কোথাও ভেন্যু না পাওয়া গেলে ঢাকার অদূরে কোনো স্থানে কাউন্সিল আয়োজনের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন। ভেন্যুর অনিশ্চয়তা কাটানোর বিষয়টি বিবেচনায় রেখে শেষ পর্যন্ত এই প্রস্তাব উঠেছে বলে জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আরও জানায়, প্রস্তুতি কার্যক্রমে অনেকটা গতি এসেছে এবং খালেদা জিয়ার তত্ত্বাবধানে গঠিত ১১টি উপকমিটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু এখনো ভেন্যু ঠিক হয়নি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইতিমধ্যে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এখনো পর্যন্ত কাউন্সিলের ভেন্যু-ই ঠিক করা সম্ভব হয়নি। আগামী ১৯ মার্চ দলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের জন্য তিনটি ভেন্যুর বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো চিঠিরই জবাব পাননি তারা। ফলে দীর্ঘ ছয় বছর পর বিএনপির জাতীয় এই কাউন্সিলের আয়োজন করলেও তা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না। নির্ধারিত সময়ে দলের এই সম্মেলন আয়োজন সম্ভব হয় কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা। তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব পর্যন্ত অনেক সিনিয়র নেতাই এখন পর্যন্ত প্রত্যাশিত ভেন্যুগুলোর একটিও বরাদ্দ না পাওয়ায় সরকারের বিরুদ্ধেই অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন। মির্জা ফখরুল গতকালও বলেছেন, কাউন্সিলের ভেন্যু বরাদ্দ নিয়ে টালবাহানা আর বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মিথ্যা মামলা প্রদান একই ষড়যন্ত্রেরই অংশ। সরকার খালেদা জিয়াকে রাজনীতির মাঠ থেকে সরানোর জন্যই এই অপচেষ্টা করছে। শুধু কেন্দ্রীয় সম্মেলনের ভেন্যুই নয় জেলা পর্যায়ে আজ সম্মেলনের জন্যও বিএনপিকে স্থান বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, বেশিরভাগ জেলাতেই সম্মেলন করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বিএনপিকে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে একই অভিযোগ করে আসছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান থেকে শুরু করে ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, রহুল কবির রিজভী আহমেদসহ কেন্দ্রীয় বিএনপির বেশ কজন নেতা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, কাঙ্ক্ষিত ভেন্যুগুলোতে বরাদ্দ না পেলে আমাদের বিকল্প কোনো স্থানের কথা অবশ্যই চিন্তা করতে হবে। আর না হয় দলীয় ফোরামে আলোচনার মাধ্যমে সম্মেলনের তারিখ পেছাতে হবে। দেশের গণতন্ত্রের বিকাশের জন্যই এ সম্মেলন করা দরকার। আর সরকারের উচিত কোনো রকমের বাধা না দিয়ে গণতন্ত্র বিকাশের স্বার্থে এতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। বিএনপির একজন সহদফতর সম্পাদক জানান, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রসহ আবেদন করা স্থানগুলোতে ভেন্যু বরাদ্দ না পেলে সর্বশেষ টার্গেট রয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। শেষ পর্যন্ত সেখানেই আয়োজন করা হতে পারে দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল।

সর্বশেষ খবর