শিরোনাম
বুধবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
চট্টগ্রামে বালুমহাল বাণিজ্য

ইজারাই হয় না ৫৩ শতাংশের

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

স্থানীয়ভাবে সরকারের রাজস্ব আদায়ের অন্যতম খাত বালুমহাল। কিন্তু চট্টগ্রামে অসাধু সিন্ডিকেটের প্রভাবে ৫৩ শতাংশ বালুমহালের ইজারাই হয় না। নেপথ্য যোগসাজশে সরকারি মূল্য থেকে কম দিয়ে দরপত্র জমা দেওয়া হয়, পরে এসব বালুমহালের আর টেন্ডার হয় না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টেন্ডার না হলেও প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে এসব বালুমহাল থেকে সিন্ডিকেটগুলো পরবর্তীতে ঠিকই বালু উত্তোলন করে। এতে সরকার হারায় রাজস্ব। বিপন্ন হয় পরিবেশ-প্রতিবেশ। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘বালুমহাল ইজারা নিয়ে নানা রাজনীতি থাকে। তাছাড়া সিন্ডিকেট হয়ে ইজারায় অংশ নিয়ে সরকারি মূল্যের চেয়ে কম দিয়ে দরপত্র জমা দেয়। এ কারণে অনেক বালুমহাল ইজারা দেওয়া সম্ভব হয় না। এ ব্যাপারে আমরা নতুন কিছু উদ্যোগ নিচ্ছি।’ চট্টগ্রাম জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, ‘১৪২১ সন থেকে ক্রমান্বয়ে বালুমহাল ইজারার সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। ১৪২২ সনে সর্বোচ্চ ৫৬টি মহাল ইজারা দেওয়া হয়। আগামী বছরের জন্য এরই মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি এবারও যাতে সর্বোচ্চ সংখ্যক বালুমহাল ইজারা দিয়ে সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধি করতে পারি।’ জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৪২১ বাংলা সনে (২০১৪-১৫ অর্থবছর) চট্টগ্রামে তালিকাভুক্ত বালুমহাল ছিল ৯৪টি। এর মধ্যে ইজারা হয় ৪৬টির, ইজারা হয়নি ৪৪টির। ১৪২২ বাংলা বছরে (২০১৫-১৬ অর্থবছর) ইজারাযোগ্য বালুমহাল হয় ১১৭টি। এর মধ্যে ইজারা হয় ৫৬টির, ইজারা হয়নি ৬১টির। ১৪২৩ বাংলা সনে (২০১৬-১৭ অর্থবছর) ইজারাযোগ্য মহালের সংখ্যা হয় ১১২টি। এরই মধ্যে ৬৩টি মহালের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ৯৮টি জমা পড়ে। তবে এবারও যথা নিয়মে সিন্ডিকেটের কারসাজিতে পাঁচটি বালুমহালের সরকারি মূল্যের নিচে দরপত্র জমা পড়েছে। বর্তমানে ইজারাযোগ্য বালুমহালের মধ্যে আছে রাঙ্গুনিয়ায় ১১টি, ফটিকছড়িতে ৩৭টি, লোহাগাড়ায় ২২টি, সাতকানিয়ায় ৭টি, পটিয়ায় ৫টি, রাউজানে ১২টি, হাটহাজারীতে ২টি, মিরসরাইয়ে ৮টি, চন্দনাইশে ৬টি ও বাঁশখালীতে ২টি। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ১৪২২ বাংলা সনে ৫৬টি বালুমহাল ইজারায় সরকারের রাজস্ব আদায় হয় চার কোটি ৫৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬০০ টাকা (এর সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ আয়কর যোগ হবে)। অন্যদিকে ৬১টি মহালের ইজারা না হওয়ায় ৩ কোটি ৩৪ লাখ ৫১ হাজার ৮০১ টাকা সরকারি মূল্য রাজস্ব হারায়। সিন্ডিকেটের কারণে এসব বালুমহাল ইজারা হয়নি। অভিযোগ অনুযায়ী, চিহ্নিত সিন্ডিকেটের কারসাজিতে বালুমহালের ইজারা হয় না। নেপথ্য যোগসাজশে দরপত্রে সরকারি মূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্য দেয়। কিন্তু বছরজুড়ে সেইসব সিন্ডিকেট বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলন করে। তাছাড়া উত্তোলনের নামে নদী-খালের মাটি এবং মহাল সংলগ্ন পাহাড় কাটারও অভিযোগ আছে। পক্ষান্তরে প্রশাসনে লোকবলের সংকট, প্রত্যন্ত অঞ্চলে বালুমহালের অবস্থান ও বেশিরভাগ সময় রাতের আঁধারে বালু উত্তোলনের কারণে এসব অনিয়ম ঠেকানো সম্ভব হয় না। অতীতে দিনের বেলায় বালি উত্তোলন বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু ২০১১ সাল থেকে এ নিয়ম রহিত হওয়ায় রাতদিন সমানতালেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। তাছাড়া সনাতন পদ্ধতিতে বালু উত্তোলনের নিয়ম থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে মেশিন দিয়েই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর