সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

মঠে ঢুকে পুরোহিতকে হত্যা

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

মঠে ঢুকে পুরোহিতকে হত্যা

ঘটনাস্থলে নিহত পুরোহিতের রক্তমাখা পোশাক

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় শ্রীশ্রী সন্ত গৌরীয় মঠে ঢুকে গতকাল সকালে ওই মঠের পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর দাসাধিকারীকে (৫০) ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। হামলাকারীদের গুলি ও বোমায় আহত হয়েছেন গোপাল চন্দ্র রায় (৩৫) ও নিতাই পদ দাস নামের আরও দুজন পূজারি। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ গোপালচন্দ্র রায়কে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি স্থানীয় একটি কলেজের অফিস সহকারী। আর বিস্ফোরণে আহত নিতাই চন্দ্র রায় স্থানীয় বাসিন্দা। তাকে দেবীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। খবর পেয়ে পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. নুরুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন ও পুলিশ সুপার গিয়াস উদ্দিন আহমদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলা শহরের করতোয়া ব্রিজের পশ্চিম পাড়ে শ্রীশ্রী সন্ত গৌরীয় মঠটি অবস্থিত। গতকাল সকাল ৭টার দিকে স্নান সেরে ফুল নিয়ে পূজার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মঠের পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর দাসাধিকারী। এ সময় কয়েকজন দুর্বৃত্ত সেখানে বর্বরোচিত এ ঘটনা ঘটায়। তারা মঠসংলগ্ন একটি বাড়ির বারান্দায় পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর দাসাধিকারীকে গলা কেটে হত্যা করে। ঘটনাস্থলে থাকা গোপাল চন্দ্র রায়কেও গুলি করা হয়। তিনি ওই মঠে নিয়মিত আসতেন। হত্যার পর আনুমানিক তিনজন দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়। পালানোর আগে তারা কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। ঘটনাস্থল থেকে একটি ককটেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের ভাই রবীন্দ্রনাথ রায় বলেন, ১৯৯৮ সালে মঠটি  প্রতিষ্ঠিত। পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর দাসাধিকারী মঠের প্রতিষ্ঠাতা। প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই তিনি মঠের পুরোহিত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মঠের সেবায়েত নিতাই পদ দাস ওরফে নির্মল চন্দ্র (৩৯) জানান, গুলির শব্দে তার ঘুম ভেঙে যায়। দরজা খুলে বাইরে গিয়ে দেখেন সামনে খোঁচা খোঁচা দাড়িওয়ালা ৩০-৩৫ বছরের একজন পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে কালো জ্যাকেট। উত্তর দিকে টিনের চালা ঘরের বারান্দায় মঠের পুরোহিত যজ্ঞেশ্বরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কোপানো হচ্ছে। পরে তিনি পালিয়ে পাশের বাজারে লোকজনকে ঘটনাটি জানান। আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসার আগে দুর্বৃত্তরা ককটেল ফাটিয়ে পশ্চিম দিক দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। নিজস্ব প্রতিবেদক রংপুর জানান, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নম্বর অর্থোপেডিকস ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন গোপাল চন্দ্র রায় বলেন, মঠের গুরুজির শরীর ভালো না। সকালে তার জন্য মঠের রান্নাঘরে রুটি বানাচ্ছিলাম। গুরুজির সুস্থতা কামনা করে গুনগুন করে কীর্তনও গাইছিলাম। সকাল ৬টা কি সাড়ে ৬টা হবে। এমন সময় গুরুজির কণ্ঠে আর্তচিত্কার শুনতে পাই। ভাবলাম গুরুজি হয়তো আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আবারও চিত্কার। দ্রুত রান্নাঘর থেকে বের হয়ে বাইরে দেখতে পাই দুজন লোক। তাদের পরনে প্যান্ট ও জ্যাকেট। জ্যাকেটের টুপি দিয়ে মাথা ঢাকা। আমাকে দেখামাত্র ওই দুই ব্যক্তি কোমর থেকে পিস্তল উঁচিয়ে বলতে থাকে, ও ঘরে যাবি তো তোকেও কতল করব। তোর গুরুজিকে কতল করা হয়েছে। এরপর তারা আমাকে বলে, তোরা বড় আনন্দে আছিস। রান্নাঘরে কীর্তন গাইছিলি— এ কথা বলেই আমার বুক বরাবর গুলি ছোড়তে থাকে ওরা। আমি একটু নিচু হই। কিন্তু আমার বাম হাতে দুটি গুলি লাগে। এরপরও তারা গুলি করতে থাকে। ভাবছিলাম আমি আর বাঁচব না। কিন্তু তাদের পিস্তল থেকে গুলি আর বের হচ্ছিল না। তখন তারা পিস্তলে গুলি ভরার জন্য পকেট থেকে গুলি বের করছিল। এই ফাঁকে আমি জীবন রক্ষায় মঠের একটা দেয়াল টপকে পার হয়ে চিত্কার করতে থাকি। গোপাল রায় আরও বলেন, দেয়াল টপকিয়ে যাওয়ার পরপর আরও কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই। পরে জানতে পারি তারা তিনজন ছিল মোটরসাইকেলে। এর মধ্যে একজন মঠের বাইরে পাকা রাস্তায় মোটরসাইকেল নিয়ে অপেক্ষায় ছিল। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকি0ক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তার বাম হাতের কনুইয়ের পাশে দুই জায়গায় ক্ষত রয়েছে। তবে গুলি পাওয়া যায়নি। আমরা রোগীর কথামতো প্রেসক্রিপশনে গানশট ইনজুরি উল্লেখ করেছি। পুলিশ সুপার গিয়াস উদ্দিন আহমদ জানান, হামলাকারীরা বাইরে থেকে মঠে ঢিল ছুড়লে অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায় শব্দ শুনে বাইরে বেরিয়ে আসেন। এরপর দুর্বৃত্তরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। কারা হত্যাকারী এবং কী কারণে এমন হলো, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত না করে কোনো কিছু বলা যাচ্ছে না। দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আখতার বলেন, মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ আটক হয়নি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর