সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

হামলা সেই একই কায়দায়

বিশেষ প্রতিনিধি

একই কায়দায় চলছে একের পর এক খুন, খুনি অধরা। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা হচ্ছে চাপাতি ও আগ্নেয়াস্ত্র। কোথাও কোথাও পালিয়ে যাওয়ার সময় খুনিরা বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির পর মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যাচ্ছে। খুনিদের লক্ষ্যই যেন টার্গেট ব্যক্তিকে ঘাড় ও গলা  কেটে হত্যা নিশ্চিত করা। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন জঙ্গিরা একে বলছে ‘কতল পদ্ধতি’। তারা বলছে, ‘নাস্তিক’ ও ‘মুরতাদদের’ এভাবেই শাস্তি দিতে হয়। কথিত এ পদ্ধতিতে এখন পর্যন্ত খুনের শিকার হয়েছেন ছয় মুক্তমনা ব্লগারসহ ২০ জন। আক্রান্তদের বাকিরা লেখক, ইসলামী বক্তা এবং কয়েকজন পীর-মুরিদ। মামলা তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গতকাল পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে শ্রীশ্রী গৌরীয় মঠের পুরোহিত অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর দাসাধিকারী হত্যাকাণ্ডের সব আলামতেই আগের ব্লগার বা কয়েকজন পীর-মুরিদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিল রয়েছে। গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন রোডের বাসায় মুরিদ সেজে ঢুকে কথিত পীর লুত্ফর রহমান ফারুক, তার ছেলে সারোয়ার ইসলাম ফারুক ওরফে মনির, খাদেম মঞ্জুর আলম মঞ্জু, মুরিদ শাহিন, রাসেল ও মুজিবুল সরকারকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পূর্ব রাজাবাজারের বাসায় হজে যাওয়ার ব্যাপারে আলাপ করার ছলে ঢুকে শায়খ মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে একই কায়দায় হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া খুলনার খালিশপুরে বাবা-ছেলেকে, আশুলিয়ায় ব্লগার আশরাফুল ও রাজধানীতে ব্লগার নিয়াজ মোর্শেদ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শফিউল আলমকেও একইভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গতকালের হত্যাকাণ্ডের পর দেবীগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার স্বদেশ রায় বলেন, এটা জঙ্গিদের কাজ। হত্যার ধরন দেখে মনে হয়েছে এরা প্রশিক্ষিত। দেশের অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা ও হত্যার ঘটনার সঙ্গে মিল রয়েছে। পুলিশ ও গোয়েন্দারা বলছেন, হামলার শিকার ব্যক্তিরা মৌলবাদবিরোধী ছিলেন। ফলে উগ্রবাদী গোষ্ঠীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন তারা। এসব ঘটনায় জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হরকাতুল জিহাদ, হিযবুত তাহ্রীরসহ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনকে সন্দেহ করা হচ্ছে। ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার, অভিজিত্ রায় ও ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যাকাণ্ডে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের জঙ্গিদের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ, রাজীব হায়দার ও ওয়াশিকুর হত্যাকাণ্ডের পর তারা ৯ জনকে গ্রেফতার করে ‘কতল পদ্ধতির’ ব্যাপারে তথ্য পেয়েছেন। এ পদ্ধতি বাস্তবায়নে একাট্টা হয়েছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও জেএমবির জঙ্গিরা। বেশ কয়েকজন জঙ্গিকে গ্রেফতারের পর টার্গেট কিলিংয়ের ‘স্লিপার সেল’ সম্পর্কেও তথ্য পাওয়া গেছে। তবে ছয় ব্লগারসহ ২১ জনকে খুনের সঙ্গে জড়িত বেশির ভাগ খুনিকে গ্রেফতার করা যায়নি। কয়েকটি ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেফতারের কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলায় আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়নি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর