সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

মধ্যরাতে বিএনপির বিশৃঙ্খলা

সরকারি এজেন্টদের হামলা : রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক

মধ্যরাতে বিএনপির বিশৃঙ্খলা

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এভাবেই মারামারিতে জড়ায় বিএনপি কর্মীরা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

একুশের প্রথম প্রহরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিতে গেলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবীদের হাতাহাতির ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। রাত ১টা ২৫ মিনিটে খালেদা জিয়া শহীদ মিনারে পৌঁছালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ কয়েকজন শিক্ষক তাকে এগিয়ে আনতে গেলে বিএনপি নেতা-কর্মীরা তাদের ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে আসেন। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. জিয়াউর রহমান নিচে পড়ে যান। পরে খালেদা জিয়ার সঙ্গের নেতা-কর্মীরা শহীদ বেদিতে উঠতে গেলে সেখানে শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবীরা বাধা দেন। তখন বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর চড়াও হন। এ সময় বিএনপি কর্মী ও চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের (সিএসএফ) মারধরে রোভার স্কাউটের সদস্য মো. তানসির রাব্বি (বাঁধন), রিয়াজ ও জুবায়েরসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। জুবায়ের ডান হাতে, বাঁধন ডান পায়ে হাঁটুর নিচে এবং রিয়াজ এক পায়ে আঘাত পেয়েছেন। শহীদ মিনারে র্যাবের অস্থায়ী চিকিৎসা কেন্দ্রে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ সময় জুতা ছোড়াছুড়ি করতেও দেখা গেছে বিএনপির কর্মীদের। কাউকে কাউকে জুতা পায়েও প্রবেশ করতে দেখা যায়। এদিকে যখন বিএনপি চেয়ারপারসন ও নেতা-কর্মীদের বেদি থেকে নামাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্কাউট, বিএনসিসি সদস্যরা গলদঘর্ম, তখন শহীদ মিনারের ডান পাশ দিয়ে বিশৃঙ্খলভাবে হঠাত্ করে দৌড়ে প্রবেশ করতে থাকেন বিএনপির কিছু নেতা-কর্মী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যারিকেড তৈরি করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মাইকে ঘোষণা আসে, আপনারা শান্তভাবে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করুন। কিন্তু বিএনপির কিছু নেতা-কর্মী কারও কথায় কর্ণপাত করেননি। এরই মধ্যে চলতে থাকে হাতাহাতি, মারামারি। তখনও মূল বেদিতে পুষ্পস্তবক নিয়ে খালেদা জিয়া। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জোরালো হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, ফজলুল হক মিলন প্রমুখ। আহত জুবায়ের বলেন, বিএনপি নেত্রী যখন ফুল দিতে শহীদ মিনারের বেদিতে উঠছিলেন ঠিক তখনই তার দলের কর্মীরা আমাদের ধাক্কা দিয়ে মূল বেদির দিকে দৌড় দেন। এ সময় আমরা নিচে পড়ে গেলে আমাদের ওপর দিয়েই চলে যান তারা। বিএনপি কর্মীদের অনেকে জুতা পরে শহীদ বেদিতে ওঠেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলী বলেন, ভিসি স্যারসহ আমরা কয়েকজন শিক্ষক তাকে (খালেদা জিয়া) রিসিভ করতে গেলে বিএনপির কর্মীরা দুই দিক থেকে আমাদের চাপ দেন। এতে ভিসিসহ আমরা মাঝখানে পড়ে যাই। একপর্যায়ে জিয়া স্যার নিচে পড়ে যান। ভিসি স্যারকে দেখে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ইচ্ছাকৃতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। 

বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেই বেদিতে সরকারি এজেন্টদের হামলা : রিজভী

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেই সরকারি এজেন্টরা জুতা নিয়ে শহীদ বেদিতে উঠে হামলা চালিয়েছে। গতকাল বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের লাঠিচার্জসহ হাতাহাতি ও মারামারির জন্য পুলিশকে দোষারোপ করে রিজভী আহমেদ বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে শাসকদলের অনুগ্রহের ছায়াতলেই এ দেশের মানুষকে বাঁচতে হবে। আর বর্তমান শাসনকালকে মনে হয় ‘চারদিকে শকুন আর হায়েনার জয়জয়কার’। রিজভী আহমেদ বলেন, ‘শহীদ বেদিতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা কেউ জুতা পায়ে ওঠেনি। বরং সবাই খালি পায়ে উঠেছিল। কিন্তু ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীরাই ক্ষমতার দাপটে জুতা নিয়ে শহীদ বেদিতে উঠে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে।’ খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবীদের বাধা প্রদানের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিএনপির এই যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে যাওয়ার পথে এবং ফুল দেওয়ার সময় শহীদ বেদিতে এভাবে বাধা দেওয়ার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য সরকারের এজেন্টরাই পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। পুলিশের লাঠিচার্জে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তরিকুল ইসলাম টিটু, যুগ্ম-সম্পাদক ফয়েজ উল্লাহ ফয়েজসহ বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশের এই বাধার কারণে রাত সাড়ে ১২টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় নির্ধারিত থাকলেও তিনি সেখানে পৌঁছান রাত ১টা ৪০ মিনিটে।’ বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে পুলিশকে দিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে বাধা দিয়েছে, হামলা চালিয়েছে। কিন্তু এর পরও দৃঢ় মনোবল ও অনমনীয় সিদ্ধান্তের কারণে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে তিনি শেষ পর্যন্ত বায়ান্নর ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। তবে পুলিশি বাধায় তিনি নির্দিষ্ট সময়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে পারেননি। এ ছাড়া গাড়িবহরে থাকা দলীয় নেতা-কর্মীদের পুলিশ অন্যায়ভাবে বেধড়ক মারধর করে। রিজভী আহমেদ বলেন, একুশের প্রথম প্রহরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর কথা জানিয়ে তার সার্বিক নিরাপত্তা দিতে পুলিশ ও র্যাবপ্রধানের কাছে দলের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসন তার গুলশানের বাসভবন থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসা পর্যন্ত পুলিশ বারবার তাকে বাধা দেয়। গুলশানে তার বাসভবনের সামনেই পুলিশ ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। তিনি জানান, সব বাধা পেরিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাছাকাছি পৌঁছলে পুলিশ দুই জায়গায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করে অপেক্ষমাণ নেতা-কর্মীদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এ ঘটনায় বিএনপির প্রায় অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হন। রিজভী আহমেদ এ হামলার জন্য পুলিশকে অভিযুক্ত করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। নোয়াখালীর চাটখিলে একুশের রাতে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে গেলে বিএনপি নেতা আলমগীর হোসেনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগকে অভিযুক্ত করেন। আলমগীরের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান রিজভী। এ ছাড়া সাতক্ষীরা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র কেনা ও জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের কর্মীদের বাধার মুখে পড়েছেন বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির এই নেতা। রিজভী আহমেদ বলেন, হিংসাকে আওয়ামী লীগ পরম ধর্ম বলে মনে করে। এরা হত্যা আর রক্তের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র ও মানুষের স্বাধীনতাকে কবর দিয়ে ফেলেছে। এখন কোথাও কোনো নিরাপত্তা নেই। হয় ধরা পড়বে, নয় তো মরে যাবে।

সর্বশেষ খবর