সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

জবানবন্দিতে ঘাতকরা সব স্বীকার করছে

হবিগঞ্জে চার শিশু হত্যা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

জবানবন্দিতে ঘাতকরা সব স্বীকার করছে

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামে চার শিশু হত্যার ঘটনায় ঘাতক রুবেলের পর এবার আবদুল আলীর ছেলে গ্রেফতার জুয়েল মিয়া ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল বিকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কৌশিক আহমেদ খোন্দকারের কাছে তিনি চার শিশু হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জবানবন্দি গ্রহণ চলছিল। জুয়েলকে চার শিশুর লাশ পাওয়ার দিন বুধবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার তার বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এর আগে শুক্রবার জুয়েলের ছোট ভাই রুবেল মিয়া একই আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। শনিবার গ্রেফতার আসামি সালেহ আহমেদকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। তার জন্য ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করা হয়েছে। আজ এ রিমান্ড আবেদনের শুনানি হবে। ওই দিন রুবেল, বশির ও আরজুরও রিমান্ডের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। হবিগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদুর রহমান মনির জানান, জুয়েল রিমান্ডে যে কথা বলেছেন রুবেলের দেওয়া স্বীকারোক্তির সঙ্গে মিল রয়েছে। তবে কাউকে আড়াল করা হচ্ছে কিনা এবং আরও কেউ জড়িত আছেন কিনা তার জন্য জুয়েলকে আরও জিজ্ঞাসাবদ করা হবে। বাহুবল থানার ওসি মোশারফ হোসেন জানান, আজ (রবিবার) কোনো আসামিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে ঘটনাস্থল সুন্দ্রাটিকিতে পুলিশ অবস্থান করছে। ১২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), তার চাচাত ভাই আবদুল আজিজের ছেলে তাজেল মিয়া (১০) ও আবদাল মিয়ার ছেলে মনির মিয়া (৭) এবং তাদের প্রতিবেশী আবদুল কাদিরের ছেলে ইসমাইল হোসেন (১০) নিখোঁজ হয়। ওইদিন বিকালবেলা তারা উত্তর ভাদেশ্বর গ্রামে ফুটবল খেলা দেখতে গিয়েছিল। এ ব্যাপারে পরদিন ওয়াহিদ মিয়া বাদী হয়ে বাহুবল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। মঙ্গলবার রাতে বাহুবল মডেল থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়ের করেন নিখোঁজ এক শিশুর পিতা। এ ঘটনার পর পুলিশের একাধিক টিম ও র্যাব মাঠে নামে ওই শিশুদের অনুসন্ধানে। সোমবার বিকালে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে নিখোঁজ শিশুদের সন্ধানদাতাকে ২০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার রাতে নিখোঁজ শিশু মনির মিয়ার বাবা আবদাল মিয়া বাদী হয়ে বাহুবল মডেল থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। বুধবার সকালে সুন্দ্রাটিকি গ্রামের দিনমজুর কাজল মিয়া প্রতিদিনের মতো বাড়ি থেকে বের হয়ে করাঙ্গী নদীর পাশে মাটি কাটতে গিয়ে মাটিচাপা অবস্থায় চার শিশুর লাশ দেখতে পান। পরে লাশগুলো উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত শেষে ওইদিন রাতে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আবদুল আলী বাগাল, তার ছেলে জুয়েল মিয়া ও রুবেল মিয়া, আজিজুর রহমান আরজু ও বশির মিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে আবদুল আলী ও তার ছেলে জুয়েল মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার বিকালে অন্য তিনজনকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। তাদের বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ডেরও আবেদন করা হয়। আজ রিমান্ডের শুনানি হবে। এর আগে শুক্রবার রাতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কৌশিক আহমেদ খোন্দকারের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানকালে আসামি রুবেল মিয়া হত্যার দায় স্বীকার করেন। স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, সুন্দ্রাটিকি গ্রামে বাগাল পঞ্চায়েত ও তালুকদার পঞ্চায়েতের বিরোধকে কেন্দ্র করেই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এক মাস আগে বাগাল ও তালুকদার পঞ্চায়েতের মধ্যে উভয় পঞ্চায়েতের সীমানায় থাকা একটি বরই গাছ কাটা নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। পরে বিষয়টি সামাজিকভাবে নিষ্পত্তি করা হলেও সিএনজিচালক বাচ্চু মিয়া ও আরজু প্রচণ্ড রকমভাবে সামাজিক হেয় প্রতিপন্ন হন। এরপরই তারা পরিকল্পনা করেন বাগাল পঞ্চায়েতের শিশুদের হত্যা করবেন।

১২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিকালে যখন পূর্ব ভাদেশ্বর গ্রামে চার শিশু ফুটবল খেলা দেখতে যায়। বৃষ্টির জন্য খেলা না হওয়ায় যখন শিশুরা মাঠে ঘোরাফেরা করছিল তখন আগে থেকে ওত পেতে থাকা বাচ্চু মিয়া তাদের বাড়িতে নিয়ে যাবেন বলে সিএনজি অটোরিকশায় উঠতে বলেন। চার শিশু সিএনজি অটোরিকশায় উঠলে তাদের চেতনানাশক দিয়ে অজ্ঞান করে বাচ্চু মিয়ার গ্যারেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আরজু ও রুবেলসহ ছয়জন মিলে তাদের গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। হত্যার পর লাশগুলো গ্যারেজেই লুকিয়ে রাখা হয়। পরে গভীর রাতে যে স্থান থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয় সেখানে গর্ত করে পুঁতে রাখা হয়।

সর্বশেষ খবর