সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

ফুলেল শ্রদ্ধায় অমর একুশে পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

একুশের চেতনায় মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির মর্যাদা সমুন্নত রাখার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে জাতি গতকাল অমর একুশে পালন করেছে। রাজধানীসহ সারা দেশে দল, মত, ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় নির্বিশেষে লাখো মানুষ গতকাল মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার অকুতোভয় শহীদদের ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছে। শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গতকাল ছিল সরকারি ছুটির দিন। শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে এদিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। অমর একুশের প্রথম প্রহরে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধাঞ্জলির মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। বিভিন্ন আয়োজনে দিবসটি পালন করা হয়। দিনভর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মী বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণসহ জাতির অসাম্প্রদায়িক চেতনা অক্ষুণ্ন রাখার শপথ নেন। তারা যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গিবাদমুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের দৃঢ়প্রত্যয় ঘোষণা করেন। দেশের বাইরে দূতাবাসগুলোয়ও শোক ও শ্রদ্ধায় পালন করা হয়েছে অমর একুশে। তবে গতবছর লাগাতার অবরোধ ও পেট্রলবোমার বিভীষিকার মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শহীদ মিনারে না গেলেও এবার তিনি নেতা-কর্মীদের নিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। লাখো মানুষ ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি...’ সংগীতের সুরমূর্ছনার মধ্য দিয়ে প্রভাতফেরি করে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে। শিশু, নারী ও তরুণদের পদচারণায় শনিবার মধ্যরাত থেকে গতকাল দিনভর মুখর ছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। হাতে ফাগুনের ফুল আর নগ্নপদ প্রভাতফেরিতে যেন রাজধানীর সব পথ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে মিশেছিল। এ ছাড়া আজিমপুর কবরস্থানে শহীদ বরকতের কবরেও পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতিহা পাঠ করেন অগণিত মানুষ। এদিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বাংলা একাডেমির বইমেলাসহ একুশের প্রতিটি অনুষ্ঠানে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। বেলা যত বাড়ছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসা সর্বস্তরের মানুষের সারি তত দীর্ঘ হচ্ছিল। জগন্নাথ হল, পলাশী মোড় ছাড়িয়ে নীলক্ষেত ও ইডেন কলেজের পাশে দীর্ঘ লাইনে ফুল আর ছোট ছোট পতাকা হাতে অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায় সব বয়সের, সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে। একুশের প্রভাতফেরিতে অংশ নেওয়া নারী-পুরুষ ও শিশুদের অনেকের পরনে ছিল বর্ণমালা আঁকা পোশাক। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, ইন্টার পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ১৪ দল, বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জাসদ, বাসদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, সাম্যবাদী দল, আইন কমিশন, ছায়ানট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, মহিলা পরিষদ, জাতীয় প্রেসক্লাব, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, মানবাধিকার কমিশন, মহিলা আওয়ামী লীগ, জাকের পার্টি, অফিসার্স ক্লাব, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, তাঁতী লীগ, গণতন্ত্রী পার্টি, কর্মসংস্থান ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, নারীমুক্তি কেন্দ্র, শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশন, জাতীয় শ্রমিক লীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ জনসেবা পার্টি (বাজপা), আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, গণমুক্তি ইউনিয়ন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন, বিএফডিসি, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ অসংখ্য রাজনৈতিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট : ‘রাষ্ট্র চলবে বাংলায় না চলা অন্যায়’-এ স্লোগানকে সামনে রেখে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ৮ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪ দিনব্যাপী একুশের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে। শনিবার বিকালে অনুষ্ঠানের শেষ দিনে ঝর্ণা আলমগীরের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন একুশের অনুষ্ঠানমালা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব মাসকুর এ সাত্তার। দলীয় সংগীত ও আবৃত্তি পরিবেশন করে স্বভূমি, আনন্দন, দোয়েল ললিতকলা একাডেমি, স্বনন, ঢাকা স্বরকম্পন। একক সংগীত ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন আরিফ রহমান, ফেরদৌসী কাকলী, সেমন্তী মঞ্জুরী, গোলাম সারোয়ার, অনন্যা লাবণী ও মুজমদার জুয়েল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের উদ্যোগে সন্ধ্যায় ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে পরিবেশিত হয় ভাষা ও দেশের গান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। এর আগে ভাষা শহীদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালার উদ্যোগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানে ভাষাসৈনিক জাতীয় অধ্যাপক ড. সুফিয়া আহমেদ এবং আহমদ রফিককে সম্মাননা প্রদান করেন উপাচার্য। এদিন ভাষা আন্দোলনভিত্তিক পুস্তক, আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়।

সর্বশেষ খবর