সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

একুশের কর্মসূচি নিয়ে বিভিন্ন স্থানে মারামারি

প্রতিদিন ডেস্ক

একুশের কর্মসূচি পালন নিয়ে দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষ, বোমাবাজি ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল এসব ঘটনা ঘটেছে যশোর, মাদারীপুর, মাগুরা, খাগড়াছড়ি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

যশোর : একুশের প্রথম প্রহরে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে যশোরের কেন্দ্রীয় (সরকারি এম এম কলেজ) শহীদ মিনারে বোমাবাজি ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য (যশোর-৩) কাজী নাবিল আহমেদ, যশোরের জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবীর, পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম মিলন পরপর শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এরপর সেখানে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা হট্টগোল শুরু করে। একপর্যায়ে শহীদ মিনারের পাশে পরপর কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশও কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ককটেল ও গুলির শব্দে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করতে আসা মানুষ আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে থাকেন। ফলে কিছুক্ষণের মধ্যেই শহীদ মিনার চত্বর ও আশপাশের এলাকা ফাঁকা হয়ে যায়। বেশ কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায় শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের কর্মসূচি। পুলিশের তত্পরতায় ভোর থেকে আবারও শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ শুরু হয়। এদিকে ওই রাতে শহীদ মিনারে বোমাবাজি ও গুলির ঘটনায় পুলিশ সরকারি এম এম কলেজের শহীদ আসাদ হলে অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে আটক করেছে। পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, আটকদের কাছ থেকে ১০টি ককটেল, গানপাউডার, কাচের টুকরো সাইকেলের বলসহ ককটেল তৈরির সরঞ্জাম, ৭টি রড ও লাঠি ও ১৪ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এরা সবাই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। মাদারীপুর : একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে কালকিনিতে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করতে উপস্থিত হয় উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ, কালকিনি ও ডাসার থানা, কালকিনি প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের লোকজন। তখন মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে সেখানে পুষ্পমাল্য অর্পণ করতে আসেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও কালকিনি উপজেলা আওয়াম লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর গোলাম ফারুক। তার পুষ্পমাল্যের ডালায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের পাশাপাশি ‘সাধারণ সম্পাদক কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগ’ লেখা থাকায় ফুলের ডালা ভেঙে ফেলেন আওয়ামী লীগের কালকিনি পৌর মেয়র এনায়েত গ্রুপের লোকজন। মেয়র পক্ষের দাবি, মীর গোলাম ফারুককে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করার পরও তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ ব্যবহার করছেন।

মাগুরা : শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে শালিখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রথম প্রহরে ১০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ১২টা ১ মিনিটে শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতা কুতুব উদ্দিন ও মোজাহারের সমর্থকরা প্রথমে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় পুলিশ তাদের ওপর মৃদু লাঠিচার্জ করে। কিছুক্ষণ পর উভয় গ্রুপ শহীদ মিনারের অদূরে লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশ এ সময় কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী জানান, কমিটি গঠন নিয়ে বর্তমান সভাপতি কুতুব উদ্দিন ও সভাপতি পদের অপর প্রার্থী ছাত্রলীগ নেতা মোজাহারের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। যার সূত্র ধরেই এ সংঘর্ষ হয়েছে। খাগড়াছড়ি : শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করতে এসে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। একুশের সকালে এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, সকাল সাড়ে ৮টায় প্রথম র্যালি বের করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহেদুল আলমের সমর্থকরা। অন্যদিকে সভাপতি ও এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার সমর্থিতরা জেলা পরিষদের বিশ্রামাগার এলাকা থেকে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরীর নেতৃত্বে শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে। পরে শাপলা চত্বরের দিকে আসতে চাইলে পুলিশ বিএনপির কার্যালয়ের সামনে তাদের আটকে দেয়। এ সময় দলীয় কার্যালয়ে কর্মসূচি শেষে জাহেদুল আলমের সমর্থকরা শাপলা চত্বর অতিক্রম করতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে এমপি সমর্থকরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে ব্যানার-ফেস্টুন ছুড়ে ফেলে দেয়। এসব ব্যানার-ফেস্টুনে ছিল বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূইয়ার সঙ্গে খাগড়াছড়ির বর্তমান এমপির নানা চিত্র। ব্রাহ্মণবাড়িয়া : জেলা বিএনপি পুলিশি বাধায় রাত ১২টায় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করতে পারেনি। মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় শহরের জেলা পরিষদ মার্কেটের সামনে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। রাত প্রায় পৌনে ১টা পর্যন্ত বেদিতে যেতে না পেরে নেতা-কর্মীরা সেখানেই অবস্থান  নেন। এদিকে নাসিরগঞ্জের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ডাকাতের কবলে পড়ে কুণ্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান ও ইউপি সদস্য আবদুর রাজ্জাক অস্ত্রাঘাতে আহত হয়েছেন।

সর্বশেষ খবর