সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
দি ল্লি র চি ঠি

ফের গড়াতে শুরু করল ভারত-নেপাল সম্পর্কের চাকা

ঋতুপর্ণা রায়

দীর্ঘদিন থেমে থাকার পর আবার গড়াতে শুরু করল ভারত-নেপাল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের চাকা। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির ভারত সফরের দ্বিতীয় দিনে গতকাল দুই দেশের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের পর যোগাযোগব্যবস্থা, বিনিয়োগ, বিদ্যুত্, রেল ও সড়ক যোগাযোগসহ মোট নয়টি চুক্তি সই করেছে দুটি দেশ। তবে দুই দেশের বাণিজ্য প্রতিনিধি, আমলা পর্যায়ের বৈঠকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ওলির বৈঠকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পেয়েছে নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সূত্রের খবর, মোদি স্পষ্ট ভাষায় নেপালের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছেন, দেশীয়দের দাবি-দাওয়া আংশিক মেনে নিয়ে সে দেশের সংবিধান সংশোধন করার যে সিদ্ধান্ত ওলির সরকার নিয়েছে, তাকে স্বাগত। কিন্তু স্থায়ীভাবে সে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে গেলে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলতে হবে। মোদির বক্তব্য সীমান্ত রাষ্ট্রে ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরি হলে তা শুধু নয়া দিল্লির পক্ষেই নয়, গোটা অঞ্চলের শান্তি এবং অর্থনৈতিক বিকাশের জন্যই ক্ষতিকর। ওলি অবশ্য গোড়া থেকেই ভারতের সঙ্গে শান্তির পায়রা ওড়ানোর বার্তাই দিতে চেয়েছেন। দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠকের পর তিনি কোনো রাখঢাক না করেই সংবাদমাধ্যমের সামনে দাঁড়িয়ে তার বক্তৃতায় বলেছেন, ‘আমি ভারতে এসেছি যাবতীয় ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাতে। নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর ভারত এবং নেপালের সম্পর্ক যে উচ্চতায় ছিল ফের তাকে সেখানে নিয়ে যেতে চাই। এখনো ভারতের জন্য নেপালের মানুষের আবেগ রয়েছে।’ ওলিকে পাশে দাঁড় করিয়ে মোদিও কাঠমান্ডুর রাজনৈতিক নেতৃত্বের উদ্দেশ্যে সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। তার কথায়, ‘নেপালে দীর্ঘ সংগ্রামের পর নতুন সংবিধান রচিত হয়েছে। আমি নেপালের মানুষ এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অভিনন্দন জানাই। কিন্তু সংবিধানের সাফল্য নির্ভর করে ঐকমত্য এবং পারস্পরিক আলোচনার ওপর। আমি এটা বিশ্বাস করি, আপনি (ওলি) সংবিধানের সব বিষয়ের সমাধান করতে পারবেন। নেপালকে সুস্থিতি এবং উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।’ পরে পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর বিষয়টির ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘দেশীয় সমস্যার বিষয়টি নিঃসন্দেহে নেপালের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। কিন্তু সীমান্তবর্তী দেশ হওয়ায় এর প্রভাব ভারতের ওপরও পড়ছে। আজকের (রবিবার) আলোচনায় এ ব্যাপারে আমাদের উদ্বেগের কথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে নেপালকে। সংবিধান সংশোধন করে দেশীয়দের দাবি, আংশিকভাবে মেনে নেওয়া হলেও দুটি বিষয় এখনো বাকি থেকে গেছে। তাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার এবং প্রাদেশিক সীমান্ত তৈরির বিষয়। এ কাজগুলোকেও দ্রুত শেষ করতে হবে।’ গতকাল যে চুক্তিগুলো দুই দেশ সই করেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো বিশাখাপত্তনমের বন্দরটি নেপালের ব্যবহার করার অধিকার পাওয়া (অন্য দেশে তাদের পণ্য পরিবহনের জন্য), নেপালের তরাই এলাকায় রাস্তার পরিকাঠামো উন্নয়ন, নেপাল এবং বাংলাদেশের মধ্যে কাকারবিট্টা-বাংলাবন্ধ করিডরের মধ্য দিয়ে পণ্য যোগাযোগের মতো বিষয়গুলো। নেপালের ভূমিকম্পের পর যে অর্থ সাহায্য করেছিল ভারত, তা নেপালের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পুনর্গঠনে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, চুক্তি হয়েছে এ বিষয়টি নিয়েও।

সর্বশেষ খবর