বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

১৫২ জনের ফাঁসি হলেও রায় কার্যকর হয়নি

হত্যা-বিদ্রোহ মামলা নিষ্পত্তি। চলছে অস্ত্র ও বিস্ফোরক মামলা

আনিস রহমান

১৫২ জনের ফাঁসি হলেও রায় কার্যকর হয়নি

আজ সেই দিন। সাত বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকাবাসী অনেকেরেই ঘুম ভাঙে গুলি ও বোমার বিকট শব্দে। প্রকম্পিত হয়ে উঠে ঢাকা। দিনটি ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পেয়েছে কলঙ্কিত বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) বিদ্রোহ হিসেবে। ওই দিন ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন বেসামরিক লোক নিহত হন। সেদিন পিলখানার এই বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশের ৫৭টি ইউনিটে। টানা একদিন এক রাত শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ২৬ ফেব্রুয়ারি-বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে আসে। বিদ্রোহের পর বিডিআর আইন, নাম, পোশাক, পতাকা ও মনোগ্রামসহ অনেক কিছুতেই পরিবর্তন আনা হয়। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির উদ্যোগে আজকের এই দিনটি শাহাদাতবার্ষিকী হিসেবে পালিত হবে। এ উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনা শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাসে এক সঙ্গে এত সেনা কর্মকর্তা হত্যার কোনো নজির নেই। ঘটনার সময় ৪ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত পিলখানায় ৬ হাজার ৯০৩ জন বিডিআর সদস্য কর্মরত ছিলেন। তবে দরবারে উপস্থিত ছিলেন ৯৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ২ হাজার ৪৮৩ জন। পিলখানা বিদ্রোহের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যা মামলা নিষ্পত্তি হলেও অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা একটি মামলা এখনো চলছে। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর তৃতীয় দায়রা জজ আদালতে হত্যা মামলার রায় দেওয়া হয়। এ মামলায় ১৫২ জন আসামির ফাঁসি ও ১৫৯ জন আসামির যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে কারাগারে থাকা অবস্থায় দুজনের মৃত্যু হয়। বর্তমানে মামলাটি হাইকোর্টে শুনানি চলছে। অপরদিকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক মামলার বিচারকাজ বিশেষ ট্রাইব্যুনালে চলছে। এ মামলায় মোট আসামি ৮৩৪ জন। এদের মধ্যে ৫ জন মারা গেছেন। বাকি ২০ জন এখনো পলাতক। সরকারপক্ষের এক হাজার ৩৪৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। বিভীষিকাময় ওই ঘটনার পর বাহিনীতে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে বলে জানান বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি বলেন, ২০০৯ সালের নিন্দনীয় এ ঘটনায় বাহিনীর যে দুর্নাম হয়েছিল, তা কাটিয়ে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে বিজিবির প্রতিটি সদস্য। তাদের চেষ্টায় ইতিমধ্যে এই বাহিনী জনগণের আস্থার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

বিজিবির কর্মসূচি : বেদনাবিধুর এ দিবসটি পালনের লক্ষ্যে পিলখানায় নিহতদের জন্য দোয়া, মিলাদ মাহফিল, কবরে ফুল দেওয়ার মতো কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বিজিবির পক্ষ থেকে। বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনও নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিজিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পিলখানায় সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে শহীদ ব্যক্তিবর্গের স্মরণে আজ শাহাদাতবার্ষিকী পালিত হবে। দিনের কর্মসূচি অনুুযায়ী শহীদ ব্যক্তিবর্গের রুহের মাগফিরাতের উদ্দেশে পিলখানাসহ বিজিবির সব রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় বাদ ফজর খতমে কোরআন এবং বিজিবির সব মসজিদে এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং বিজিবি মহাপরিচালক শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকাল সাড়ে ৪টায় পিলখানায় বীরউত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে শহীদ ব্যক্তিবর্গের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

সর্বশেষ খবর