বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
এটিএম বুথে কার্ড কেলেঙ্কারি

চার ভাগ হতো জালিয়াতির টাকা

সাখাওয়াত কাওসার

জালিয়াতির টাকা চার ভাগ হতো। ‘পস মেশিন’ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং মধ্যস্থতাকারীকে ভাগ দেওয়ার পর বাকি টাকা পেতেন ভয়ঙ্কর প্রতারক বিদেশি নাগরিক পিওটর সিজোফেন মাজুরেক-(ছদ্মনাম থমাস পিটার)। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে রিমান্ডে থাকা পিওটরের দাবি, সবাইকে ভাগ দেওয়ার পর তার থাকত মাত্র ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে, ‘পস মেশিন’ সরবরাহ করা হতো এমন ২০টি প্রতিষ্ঠানের নামও জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসছে। যাদের নাম আসছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে সূত্র জানায়, বেশির ভাগ সময়ই পস মেশিনগুলো পিওটরের কাছে নিয়ে আসতেন সিটি ব্যাংকের মোকসেদ আলম ওরফে মাকসুদ, রেজাউল করিম ওরফে শাহীন ও রেফাত আহমেদ ওরফে রনি। পরে ওই টাকাগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মাধ্যমে উত্তোলনের পর এর তিনটি ভাগ রেখে দিয়ে বাকি টাকা পিওটরকে দিয়ে দিতেন তারা। পিওটর তার ভাগের টাকার একটি অংশ হুন্ডির মাধ্যমে ব্রিটেনে বসবাসরত ফরিদ নাবিরের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। এর বাইরে মোটা অঙ্কের টাকা সঞ্চিত রয়েছে এমন দেশি-বিদেশি ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডের যাবতীয় গোপন তথ্য পিওটরকে সরবরাহ করতেন মাকসুদ, শাহীন ও রেফাত। এর ভিত্তিতে ক্লোন কার্ড তৈরি করতেন পিওটর ও তার সহযোগীরা। কোনো সমস্যা মনে করলে তার অন্যতম সহযোগী এন্ডারসন এবং রোমিওর সহায়তা নিতেন তিনি।

সূত্র আরও জানায়, গুলশান এলাকার একাধিক জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান, কাপড়ের শোরুম, ফ্যাশন হাউসের মতো মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টের বিপরীতে থাকা একাধিক বেসরকারি ব্যাংকের পস মেশিনগুলো নিয়মিতভাবে কার্ড জালিয়াতির ক্ষেত্রে ব্যবহার করতেন পিওটর। এসব মেশিন বেশির ভাগ সময়ই পিওটরের কাছে নিয়ে আসতেন তারা।

তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কী পরিমাণ টাকা বিভিন্ন পস মেশিনের মাধ্যমে জালিয়াত চক্র তুলে নিয়েছে তা নির্ণয়ে কাজ চলছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর সহায়তা প্রত্যাশা করছি আমরা। এর বাইরেও সরাসরি এটিএম বুথ থেকে কী পরিমাণ টাকা উত্তোলন করেছে প্রতারক চক্র তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পিওটর বিপুল টাকার কথা বললেও নির্দিষ্ট কোনো অঙ্ক বলতে পারছেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘পিওটর উত্তোলিত টাকার ৪০ শতাংশের কথা বললেও আমাদের ধারণা তিনি ৫০ শতাংশের বেশি পেতেন। তিনি অত্যন্ত ধূর্ত। তার অনেক তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত বেসরকারি তিনটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে অন্তত ২০ লাখ টাকা তুলে নেয় চক্রটি। টাকা হাতিয়ে নিতে তারা স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে গ্রাহকদের গোপন তথ্য চুরি করে। এরপর ঘটনার শিকার ২১ জন সাধারণ গ্রাহক ছাড়াও সংশ্লিষ্ট ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবিএল), সিটি ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে টনক নড়ে। এ সেক্টরের কড়া সুরক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংকও দ্রুত এগিয়ে আসে। ডিবির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ শাহজাহানের নেতৃত্বে একটি দল পিওটরসহ সিটি ব্যাংকের তিন কর্মকর্তাকে সোমবার গ্রেফতার করে আদালতের নির্দেশে ছয় দিনের রিমান্ডে নেয়।

সর্বশেষ খবর