রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
গোলটেবিল বৈঠক

দেশে জঙ্গিবাদ বিস্তারে বিদেশিদের হাত আছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে জঙ্গিবাদ বিস্তারে বিদেশিদের হাত আছে

‘বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তারে বিদেশি হাত’ শীর্ষক গতকাল রাজধানীতে এক গোলটেবিলে বক্তাদের একাংশ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

মৌলবাদ জঙ্গিবাদের ভিত্তি। সমার্থক দুটি শব্দ। বাংলাদেশে আইএসের (ইসলামিক স্টেট) অস্তিত্ব আছে বলে বিদেশি শক্তিগুলো প্রচারণা চালালেও আসলে কিছু সংগঠন পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে আইএস আছে বলে জানান দিচ্ছে। তবে মুসলিমপ্রধান এলাকা হিসেবে আইএস ইস্যুতে বাংলাদেশের আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ আছে। ‘বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তারে বিদেশি হাত’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় গতকাল বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর একটি হোটেলে এ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট, ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (আই ক্ল্যাডস)। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশে জঙ্গিবাদ বিস্তারে বিদেশিদের হাত আছে। এ জন্য জঙ্গিদের দমনে দেশি-বিদেশি অর্থ জোগানদানকারী সংস্থাগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। মাদ্রাসাগুলো সন্ত্রাসী তৈরির কারখানা, এগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। এ ছাড়া জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। এমনকি জঙ্গিবাদ বিষয়ে আমাদের আরও গবেষণা করতে হবে। এটি রুখতে প্রত্যেক নাগরিকের স্ব স্ব অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে। একাত্তর টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপিকা মিথিলা ফারজানার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার মোহাম্মদ জমির। আই ক্ল্যাডসের নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবদুর রশীদ (অব.) অনুষ্ঠানে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন। এতে উল্লেখ করা হয়, এক পরিসংখ্যানমতে, ২০১৪ সালে বিশ্বে ৩২ হাজার ৭২৭ জন জঙ্গি আক্রমণে নিহত হয়েছেন। আর ২০১৫ সালের মার্চে প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনমতে, ৯/১১ টুইন টাওয়ার আক্রমণের পর মার্কিনিদের ওয়ার অন টেরর ঘোষিত হওয়ার পর বিশ্বে জঙ্গি আক্রমণে ১৩ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ জমির বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নিয়ে আলোচনা এলেই তিনটি ‘স’ চলে আসে। এগুলো হলো— সন্ত্রাস, সমাধান ও সংবিধান। তিনি বলেন, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য কিছু দেশে সন্ত্রাসীদের ওপর ড্রোন হামলা করা হয়। কিন্তু এটি আন্তর্জাতিক আইনসম্মত নয়। জঙ্গিবাদ রুখতে নিজেদের স্ব স্ব অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে। এমনকি জঙ্গিবাদ বিষয়ে আমাদের আরও গবেষণা করতে হবে। সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদ সমার্থক দুটি শব্দ। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন করে জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদ শক্তির উৎস বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, মাদ্রাসাগুলো সন্ত্রাসী তৈরির কারখানা এগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, আমাদের মাদ্রাসাগুলোয় বিদেশ থেকে অর্থায়ন হচ্ছে। এদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে। এ ছাড়া জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। ধর্মের সঙ্গে সংঘাত বা বিভেদ সৃষ্টির কোনো প্রয়োজন নেই।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ তার বক্তব্যে বলেন, মৌলবাদ জঙ্গিবাদের ভিত্তি। তার মতে, ধর্মীয় মৌলবাদ ছাড়াও মতাদর্শভিত্তিক মৌলবাদ থাকতে পারে। দেশে আইএস আছে বলে বিদেশি শক্তিগুলো প্রচারণা চালালেও আসলে কিছু সংগঠন পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে আইএস আছে বলে জানান দিচ্ছে। জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি মইন উদ্দীন খান বাদল এমপি বলেন, জঙ্গিবাদ ইস্যুতে বিদেশিদের তত্পরতার বিষয়টি আমাদের বুঝতে হবে। মুসলিমপ্রধান এলাকা হিসেবে আইএসের বিষয়ে আমাদের শঙ্কা আছে। সিনিয়র সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, আমাদের ভিতর জঙ্গিবাদের গোপন আস্তানা ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি যতই তুলছি ততই পাশ্চাত্যের কূটনৈতিক শক্তি এ দেশের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছে।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, বর্তমানে পৃথিবীতে দুটি সমস্যা একটি হচ্ছে আবহাওয়া অন্যটি জঙ্গিবাদ। জঙ্গিবাদ এখন পৃথিবীজুড়ে বিস্তৃত, এর কোনো সীমানা বা ঠিকানা নেই। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব.) বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গি কার্যক্রম বিস্তারে দুটি রাষ্ট্রের ভূমিকা আছে। এ ছাড়া দেশের অভ্যন্তরেও কিছু শক্তি সক্রিয় আছে। তিনি পাকিস্তানি নাগরিকদের চলাফেরা নজরদারিতে আনার পরামর্শ দেন। নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর ইশফাক ইলাহী চৌধুরী (অব.) বলেন, আমি বিশ্বাস করি জঙ্গিবাদ বিস্তারে বিদেশিদের হাত আছে। আশঙ্কার বিষয় যে, আমাদের ভাষায় আরবিকরণ হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে দেশি-বিদেশি অর্থ জোগানদানকারী সংস্থাগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, শুধু মাদ্রাসার ওপর নজরদারি করলে আমরা জঙ্গিবাদ ইস্যুতে মূল ফোকাস থেকে দূরে সরে যাব। তিনি সংসদ সদস্যদের জঙ্গিবাদ দমনে ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর মাওলানা মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, বিদেশিরা নিজেদের স্বার্থে বাংলাদেশে জঙ্গি ও মৌলবাদ এ বিষয়গুলোর বিস্তার ঘটাচ্ছে। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন (অব.), জানিপপ চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব, সংসদ সদস্য মেহজাবিন খালেদ, ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এম অহিদুজ্জামান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক নুজহাত চৌধুরী প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর