রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

দুই সন্তানের পর বাবার মৃত্যু, মা-ও ভালো নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুই সন্তানের পর বাবার মৃত্যু, মা-ও ভালো নেই

দুই সন্তানের পর বাবাও গেলেন। গ্যাসের আগুনে দগ্ধ শরীরের তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে শেষ নিঃশ্বাসটি ছাড়লেন বাবা শাহনেওয়াজ শাহীন। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যুর পর বার্ন ইউনিটে শুরু হয় কান্নার রোল। আগুনে দগ্ধ মায়ের অবস্থাও ভালো নেই। পাঁচজনের পরিবারের তিন সদস্য চলে যাওয়ার পর এখনো প্রাণে বেঁচে আছেন দুজন। চিকিৎসকদের কাছে মায়ের বিষয়ে নেই কোনো আশার বাণী। শুধু এক সন্তানই কিছুটা ভালো অবস্থায় রয়েছে।

শাহনেওয়াজ শাহীন ছিলেন মার্কিন দূতাবাসের

 মেনটেইন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট ঢামেক হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে গিয়েছিলেন তাদের দেখতে। দুপুরে মার্কিন রাষ্ট্রদূত দগ্ধ পুরো পরিবারের খোঁজখবর নেন। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় দগ্ধ দম্পতির জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন রাষ্ট্রদূত। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন শাহনেওয়াজের অবস্থার অবনতি ঘটে। এরপরই তিনি মারা যান। আগুনে তার শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। এ নিয়ে এই হতভাগ্য পরিবারের পাঁচজনের মধ্যে তিনজন না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন। এদিকে চিকিৎসকরা বলেছেন, শাহনেওয়াজের স্ত্রী সুমাইয়া বেগমের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাকে হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ওই দম্পতির দ্বিতীয় ছেলে জারিফ বিন নেওয়াজ আশঙ্কামুক্ত অবস্থায় তাদের এক আত্মীয়ের বাসায় রয়েছে। গত শুক্রবার সকালে রাজধানীর উত্তরায় সেক্টর-১৩, রোড-৩ এর ৮ নম্বর বাড়ির ৭ম তলায় মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি তারা নতুন ওই বাসায় উঠেছিলেন। বাসার রান্না ঘরের গ্যাস লাইন বিস্ফোরণে বাবা শাহনেওয়াজের আগে মারা যায় তার দুসন্তান শালিন বিন নেওয়াজ (১৫) এবং জায়ান বিন নেওয়াজ (১৪ মাস)। আগুনে শালিনের শরীরের ৮৮ শতাংশ এবং জায়ানের ৭৪ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। শালিন উত্তরা রাজউক কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল। গতকাল দুপুরে উত্তরা রাজউক কলেজে দুই ভাইয়ের প্রথম জানাজা এবং বরিশাল সদরের আমতলী এলাকায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

শাহনেওয়াজ ও সুমাইয়া দম্পতির অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় গতকাল সকাল থেকেই তাদের স্বজনরা বার্ন ইউনিটে অবস্থান করছিলেন। তাদের দেখতে ছুটে আসেন মার্কিন দূতাবাসের সহকর্মীরা। তারা মর্মান্তিক এ ঘটনায় চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি। উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রাজ্জাক বলেন, এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে শাহনেওয়াজের ছোটভাই কামরুল আহসান একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। ফায়ার সার্ভিস সূত্র বলছে, ওই বাসার গ্যাসের চুলা বা লাইনে সমস্যা ছিল। এর ফলে গ্যাস বের হয়ে রান্নাঘর থেকে পুরো ফ্ল্যাটে ছড়িয়ে যায় এবং সকালে চুলা জ্বালাতে গিয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। শাহনেওয়াজের ছোট ভাই কামরুল হাসান বলেন, চুলার গ্যাসের লাইন লিক থাকায় মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটেছে। শাহনেওয়াজের বাড়ি ঝালকাঠি সদরের কাঠপট্টি রোডে। শাহনেওয়াজ-সুমাইয়া দম্পতির মেজ ছেলে জারিফকে প্রথম দিনই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে জারিফকে তার বাবা ও দুই ভাইয়ের মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি বলে তার চাচা কামরুল হাসান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জারিফ উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। সে বারবার বলছে, ‘বাবার কাছে যাব, মায়ের কাছে যাব।’

শাহনেওয়াজের ভাতিজা রাহাত বলেন, গত ১৫/১৬ বছর ধরে মার্কিন দূতাবাসে চাকরি করছেন শাহনেওয়াজ। এ বছরই তার পরিবারসহ আমেরিকায় যাওয়ার কথা ছিল।

সর্বশেষ খবর