বুধবার, ২ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

অর্ধশত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ভয়াবহ সিন্ডিকেট

এটিএম কার্ড জালিয়াতি

বিশেষ প্রতিনিধি

অর্ধশত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ভয়াবহ সিন্ডিকেট

পিওটর

ডেবিট কার্ড জালিয়াতি করে শুধু তিনটি ব্যাংকের টাকা নয়, আরও একাধিক ব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশনের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে পিওটর। বিদেশ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির ক্রেডিট কার্ডের তথ্য সংগ্রহ করে পিওটরের জালিয়াতি চক্রের সদস্যরা। সেসব তথ্য পাঠায় পিওটরের কাছে। তারপর এদেশীয় এজেন্টের মাধ্যমে পিটার সেসব তথ্য দিয়ে ক্লোন ক্রেডিট কার্ড তৈরি করে। পিওটরের এসব কাজে সহযোগিতা করেছে ঢাকার অর্ধশত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। গোয়েন্দা পুলিশ এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানেরও তালিকা করে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। ইতিমধ্যে খান এয়ার ট্রাভেলসসহ চারটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের তথ্য সংগ্রহ করে তা বাংলাদেশে ব্যবহার করত পিওটর। প্রায় ১৫ মাস ধরে এসব জালিয়াতি ক্রেডিট কার্ড দিয়েই পিওটর তার বিলাসী জীবনের ব্যয় নির্বাহ করেছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, পিওটর গত এক বছর ধরে এটিএম কার্ড জালিয়াতি করে আসছে। বেশি জালিয়াতি করেছে সেবা ও বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে রাখা ব্যাংকের পস মেশিন ব্যবহার করে। মনিরুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে পিওটর অন্তত ৪০-৫০টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিষয়ে তথ্য দিয়েছে। তারা পিওটরের জালিয়াতির কথা জানত ও সহযোগিতা করত। তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক জালিয়াতি চক্রের হোতা পিওটর ঢাকায় আসার আগে থেকেই ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ছিল। ইউরোপ, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়ার অনেক দেশেই সে এই জালিয়াতির চক্র গড়ে তুলেছিল। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের তার জালিয়াতি চক্রের বিশাল বাহিনী রয়েছে। তার চক্রে রয়েছে অসংখ্য নারী সদস্য। ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরি করতে তার নারী বান্ধবীদের কাজে লাগাত পিওটর। পিওটরের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ইউরোপ থেকে তাকে বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের ক্রেডিট কার্ডের তথ্য সংগ্রহ করে পিওটরের কাছে পাঠাত। পিওটর সেসব তথ্য দিয়ে ঢাকায় বসে এদেশীয় এজেন্ট দিয়ে ক্লোন কার্ড তৈরি করত। সেসব কার্ড দিয়ে সে রাজধানীর অভিজাত সব বিপণিবিতান, রেস্তোরাঁ, হোটেলসহ সবকিছুর বিল পরিশোধ করত। একই সঙ্গে গুলশান এলাকার বিভিন্নি সেবামূলক ও বিক্রয়কেন্দ্র সংশ্লিষ্ট লোকজনের সহযোগিতায় পস মেশিন ঘষে টাকা তুলে নিত। গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ক্রেডিট কার্ড দিয়ে শুধু পস মেশিনে কেনাকাটা করা যায়। নগদ টাকা তুলতে আলাদা পাসওয়ার্ড লাগে। পিওটর শুধু কেনাকাটার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। কখনো সে দামি দামি পণ্য কিনে পুনরায় বিক্রয় করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এক্ষেত্রে বিশেষ করে স্বর্ণালঙ্কার কিনেছে বেশি। পরে সামান্য লস দিয়ে সেসব বিক্রি করে নগদ অর্থ নিয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, তারা ইতিমধ্যে পিওটরের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তার কাছ থেকে যে পোল্যান্ডের পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছিল তা ভুয়া বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। আসলে সে জার্মানির নাগরিক। তবে তার আত্মীয়স্বজন অনেকেই পোল্যান্ডে বসবাস করে। এ ছাড়া পিটার মেরিনাকে বিয়ে করেছে বলে যে তথ্য দিয়েছে তার কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ঢাকার গুলশান, বনানী ও মিরপুরের কালশীতে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, সিটি ব্যাংক লিমিটেড ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) একাধিক এটিএম বুথে ‘স্কিমিং ডিভাইস’ বসিয়ে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির পর কার্ড ক্লোন করে টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় হয়। এরপর ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) ও সিটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মামলা করলে তার তদন্তে নামে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত ২২ ফেব্রুয়ারি গোয়েন্দা পুলিশ রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে জার্মান নাগরিক পিওটর ও সিটি ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের কর্মকর্তা মাকসুদ, রেজাউল ও রেফাজ গ্রেফতার করে। পরে প্রথম দফায় ছয় দিন ও দ্বিতীয় দফায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে গোয়েন্দা পুলিশ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর