শুক্রবার, ১১ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

আশঙ্কায় বিজিএমইএ, ঢেলে সাজানো হচ্ছে শাহজালাল

কার্গো নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সরাসরি কার্গো পরিবহনে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা জারি করায় আবারও দেশের পোশাক খাত ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এমন পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয় এ জন্য জরুরি ভিত্তিতে আলোচনা করে এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। গতকাল বিকালে বিজিএমইএ ভবনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান সংগঠনের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। অন্যদিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নয়ন তদারকি করতে চলতি মাসের বাকি দিনগুলোয় বিমানবন্দরেই অফিস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। মন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের সচিবও বিমানবন্দরে অফিস করবেন। আর নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হচ্ছে। গতকাল সচিবালয়ে রাশেদ খান মেনন এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ’র সভাপতি জানান, মোট পোশাকপণ্যের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ আকাশপথে পরিবহন করা হয়। নিষেধাজ্ঞার কারণে সিঙ্গাপুর, হংকং, থাইল্যান্ড ও দুবাই হয়ে পণ্য পাঠাতে হবে। এতে একদিকে ব্যয় বাড়বে, অন্যদিকে সময় বেশি লাগবে। এ কারণে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা কমবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে সমুদ্রপথে জাহাজিকরণ সম্ভব না হলে আমরা বিমানযোগে পণ্য পাঠাই। কোনো কারণে বিমানযোগে তৈরি পোশাক পাঠাতে না পারলে যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীরা আদেশ বাতিল করে দেবেন। ফলে বাংলাদেশের পোশাক খাত বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে। একই সঙ্গে পোশাক খাত তথা পুরো দেশ ইমেজ সংকটে পড়বে। যদিও ঢাকা থেকে অন্য দেশ হয়ে যুক্তরাজ্যে অন্য কার্গো বিমান প্রবেশ করতে পারে কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় পণ্য পরিবহনে খরচ বহুগুণে বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বাজার। এ বাজারের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ুক তা আমরা চাই না। যখনই আমরা নতুন নতুন বাজারে প্রবেশ করছি, তখনই একটি তৈরি হওয়া বাজার পেছনের দিকে হাঁটবে, তা কখনই কাম্য নয়। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, অনতিবিলম্বে যুক্তরাজ্য সরকারকে এ দেশের বিমানবন্দরে নিরাপত্তায় গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করতে হবে। যুক্তরাজ্য কোন কারণ দেখিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা জানতে হবে এবং প্রয়োজনে সমস্যার সমাধানে একটি ক্রাশ প্রোগ্রাম নিতে হবে। তিনি একই সঙ্গে ৩১ মার্চ পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা শিথিলের আহ্বান জানান। প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৯ ডিসেম্বরের পর থেকে ঢাকা থেকে অস্ট্রেলিয়ায় সরাসরি বিমানযোগে পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হলো যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা। পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষে যুক্তরাজ্যের বিমান নিরাপত্তাবিষয়ক দফতরে বিশ্বের ২০টি দেশের ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দরের তালিকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও আছে।

মন্ত্রী-সচিব অফিস করবেন বিমানবন্দরে : শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা উন্নয়নে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের সম্মত কর্মপরিকল্পনাকে ত্বরান্বিত করতে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দিনের একটি সময়ে মন্ত্রী-সচিব বিমানবন্দরে অফিস করবেন। গতকাল সচিবালয়ে রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশন, অ্যাভিয়েশন টিম ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিরাপত্তাব্যবস্থার আধুনিকায়নে বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। আধুনিক সরঞ্জামাদি সংগ্রহে ৯ মার্চ একনেকে ৯০ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়েছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ব্যবস্থার উন্নয়নে বেবিচক ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস আরও নিবিড়ভাবে কাজ করবে এবং মন্ত্রণালয় পুরো কর্মকাণ্ড তদারক করবে। বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপে যুক্তরাজ্য হাইকমিশনের সন্তোষ প্রকাশের পর এ ধরনের সাময়িক নিষেধাজ্ঞা অনাকাঙ্ক্ষিত। এতে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দ্রুত যুক্তরাজ্যের এ অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর‌্যালোচনায় দেখা যায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিতের প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় সেখানে পূরণ করা হয়নি। তাই সাময়িক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ঢাকা থেকে যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট ঢুকতে দেওয়া হবে না। নিরাপত্তা ঘাটতির জন্য শাহজালাল থেকে কার্গো বিমানের (পণ্যবাহী উড়োজাহাজ) যুক্তরাজ্যে সরাসরি ফ্লাইট নিষিদ্ধের এ ঘোষণা আসে বুধবার। তার তিন মাস আগে অস্ট্রেলিয়াও একই সিদ্ধান্ত নেয়। এ পরিস্থিতিতে গতকাল জরুরি সভায় বসে বিমান মন্ত্রণালয়। সভায় বিমানসচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী, বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল সানাউল হক, বিমানের ভারপ্রাপ্ত এমডি আসাদুজ্জামানসহ মন্ত্রণালয়, বেবিচক ও বিমানের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর