শুক্রবার, ১১ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা
কাউন্সিল নিয়ে দুই দলের চিত্র

আওয়ামী লীগে কার্যনির্বাহী সংসদের আকার বাড়ছে

রফিকুল ইসলাম রনি

আওয়ামী লীগে কার্যনির্বাহী সংসদের আকার বাড়ছে

পরিবর্তন হচ্ছে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র। কার্যনির্বাহী সংসদের আকার ৭৩ থেকে বাড়িয়ে ৮১ করার চিন্তাভাবনা চলছে। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক পদ বৃদ্ধি এবং খাতওয়ারি সম্পাদকীয় পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সাংগঠনিক জেলা ৭৩ থেকে বাড়িয়ে ৭৭ এবং সাত বিভাগ থেকে বাড়িয়ে ১০টি বিভাগ করার প্রস্তুতি চলছে। আওয়ামী লীগের আসন্ন ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে সাংগঠনিক কাঠামোতে এসব পরিবর্তন এনে সময়োপযোগী করা হচ্ছে। এ নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তরা কাজ শুরু করছেন বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আসন্ন কাউন্সিলে দলের সাংগঠনিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এতে নতুন কিছু পদ সৃষ্টির পাশাপাশি কমিটির আকার বাড়ানো হচ্ছে। দলের জাতীয় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধনীর উপ-কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা এবং আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘এবারের কাউন্সিলে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সম্পাদকীয় পদ বৃদ্ধিসহ কয়েক ধরনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তের ওপর।’ জানা যায়, আগামী ২৮ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কারণে এ সম্মেলনের তারিখ পেছানো হচ্ছে। নতুন তারিখ নির্ধারণ করতে ১৯ মার্চ বৈঠকে বসছেন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের কর্মকর্তারা। এ সম্মেলন সফল করতে গঠিত ১০টি উপ-কমিটি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। দলীয় সূত্রমতে, আওয়ামী লীগে বর্তমানে সাত বিভাগে সাতজন সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ রয়েছে। ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও কুমিল্লা নতুন তিনটি বিভাগ হলে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ বৃদ্ধি পেয়ে ১০-এ দাঁড়াবে। সাধারণ সম্পাদকের বাইরে সমমর্যাদায় দলের মুখপাত্রের পদ সৃষ্টি হতে পারে। দলের বর্তমান গঠনতন্ত্রে মুখপাত্রের বিষয়টি স্পষ্ট না থাকলেও দলের সাধারণ সম্পাদকই মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দলে বর্তমানে তিনজন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন। এ সংখ্যা বাড়িয়ে এবার পাঁচজন করা হতে পারে। তথ্য ও প্রযুক্তি (আইসিটি), নির্বাচন বিষয়ক, প্রশিক্ষণ, মানবাধিকারসহ কয়েকটি সম্পাদকীয় পদ সৃষ্টি করা হতে পারে। প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের এক পদ ভেঙে পৃথক দুটি পদ করা হচ্ছে। শিল্প ও বাণিজ্য, কৃষি ও সমবায়, তথ্য ও গবেষণা, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ, বন ও পরিবেশ, যুব ও ক্রীড়া, শ্রম ও জনশক্তি, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যার পদগুলো পৃথক করে দুটি করে করার চিন্তাভাবনা চলছে। অন্যদিকে আইন উপ-সম্পাদক পদ সৃষ্টির পরিকল্পনাও রয়েছে ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরামের। সূত্র মতে, এবারের কাউন্সিলে সম্পাদকীয় পদ বৃদ্ধি করা হলে কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য পদ কমে যাবে। বর্তমানে ২৬ জন সদস্য পদ রয়েছে। আওয়ামী লীগের গঠণতন্ত্রে দলের হিসাব দাখিলের তারিখ বৈশাখ থেকে চৈত্র মাস থাকলেও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মিল রেখে জানুয়ারি-ডিসেম্বর করার চিন্তা করছে নীতিনির্ধারণী ফোরাম। প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আওয়ামী লীগ সব সময়ই জেলা-উপজেলাসহ শাখা ইউনিট বৃদ্ধি করে আসছে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এই শাখা ইউনিটগুলোর অনুমোদন দিয়ে থাকে। নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর শহর সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার কারণে ইতিমধ্যে এই দুই নগরীকে জেলা শাখার মর্যাদা দিয়ে নতুন কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এ দুটি শাখা যুক্ত হওয়ায় দলটির সাংগঠনিক জেলা ৭৩টি থেকে বেড়ে ৭৫টি হয়েছে। এখন পর্যন্ত কমিটি ঘোষণা না হলেও কার্যনির্বাহী সংসদ ঢাকা মহানগরীকেও দুই ভাগে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে।

নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগের নালিশ : নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিতে গিয়ে সরকারি দলের ওপর খড়গ চালাচ্ছে বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে নালিশ দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গতকাল বিকালে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। সাক্ষাৎ শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত করায় এ অভিযোগ করেন।  জানা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল ইউপি নির্বাচনের নানা বিষয়ে নিয়ে সিইসির বৈঠক করেন। প্রতিনিধি দলে মাহবুব-উল আলম হানিফ ছাড়াও ছিলেন জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. দীপু মনি, বাহাউদ্দিন নাছিম, আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ।

হানিফ সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ২০০৫ সালে নিয়োগকৃত বর্তমান ফুলগাজী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সেই সময় একটি রাজনৈতিক দলের আদর্শে আদর্শিত কর্মী ছিলেন। তার সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। তিনি বলেন, আমাদের অভিযোগ হচ্ছে, এ ঘটনার সঠিক তদন্ত না করে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু একজন ব্যক্তির কথার ওপর ভিত্তি করে এ ধরনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিতে গিয়ে সরকারি দলের ওপর অতিমাত্রায় খড়গহস্ত হয়েছেন।

হানিফ বলেন, ইসি নিরপেক্ষ থাকার দোহাই দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ওপর আইনের খড়গ চাপালে তা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা সেই বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। আমরা আশা করি, ইসি আমাদের অভিযোগগুলো বিবেচনা করবেন, যাতে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়।

গত ১ মার্চ ফুলগাজী উপজেলার সব ইউপির ভোট বন্ধ করে ইসি। এরপর ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলিমকে অপসারণে স্থানীয় সরকার বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়। হানিফ জানান, ফেনী ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দিয়েছে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দিয়েছেন। ওই অভিযোগের কারণে নির্বাচন কমিশন থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগে তাকে অপসারণের চিঠি দেওয়া হয়। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর