শুক্রবার, ১১ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রচলিত সাংগঠনিক রীতি থাকছে না বিএনপিতে

মাহমুদ আজহার

তিন যুগের বিএনপি আসছে নতুন ধারায়। দলটি সাংগঠনিক কাঠামোয় আনছে ব্যাপক পরিবর্তন। সব কিছুতেই রাখা হচ্ছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে আগামী কাউন্সিলে কমিটি হবে বিষয়ভিত্তিক। অবশ্য গুটিকয় পদ থাকছে আগের মতোই। ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে একজন করে সম্পাদকের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের কমিটি থাকবে। তাতে একজন সহ-সম্পাদক ও ১০ জন সদস্য থাকবেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়েও আসছে পরিবর্তন। প্রেস শাখার পাশাপাশি পৃথক জনসংযোগ বিভাগও রাখা হচ্ছে। এক নেতার এক পদের বিধান রেখে সংশোধন করা হচ্ছে দলীয় গঠনতন্ত্র। জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদাধিকারবলে নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে গণ্য হবেন। ১৯ মার্চ অনুষ্ঠেয় কাউন্সিলেই পরিবর্তনের ছোঁয়া আসবে বলে দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। জানা যায়, বিষয়ভিত্তিক কমিটিগুলোর মধ্যে থাকছে— পররাষ্ট্র, আইনশৃঙ্খলা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, কৃষি, যোগাযোগ, সুশাসন, পানি, পরিবেশ ও বন, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি, স্থানীয় সরকার ও সমবায়, প্রতিরক্ষা, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ, নির্বাচন কমিশন, আদিবাসী ও সংখ্যালঘু এবং নারী বিষয়ক। প্রতিটি কমিটিতে একজন করে সম্পাদক থাকবেন, যার পদমর্যাদা নির্বাহী কমিটির সম্পাদকের মতো। আরেকজন সহ-সম্পাদক ও ১০ জন করে সদস্য থাকবেন। সবাই নির্বাহী কমিটির মতোই মর্যাদা পাবেন। ১৭ সেক্টরে সর্বমোট ২০৪ জন সদস্য রাখার চিন্তাভাবনা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের পাশাপাশি পৃথক একটি বিভাগ থাকবে। প্রেস উইং মারুফ কামাল খানের নেতৃত্বে, এর সদস্যসংখ্যা আরও বাড়ানো হতে পারে। কমিউনিকেশন বিভাগে আরও একজন সিনিয়র সাংবাদিক থাকছেন। সেখানেও বেশ কয়েকজন সদস্য কাজ করবেন। কমিউনিকেশন বিভাগের অধীনে থাকবে ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও সোশ্যাল মিডিয়া। বিএনপির সব কর্মসূচিই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরা হবে। দলের ওয়েবসাইটে সব নেতার পরিচিতি থাকবে। বিএনপি গঠনের পর থেকে চলমান যাবতীয় কর্মকাণ্ডও তুলে ধরা হবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জানান, নির্বাহী কমিটির রূপরেখা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান একমত হয়েছেন। সাংগঠনিক কাঠামোয় পরিবর্তনের নানা দিক নিয়ে তারা বিশ্লেষণ করেছেন। প্রচলিত পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে বিএনপির নেতৃত্বকে যুগোপযোগী করতে সংশ্লিষ্টদের কাজ করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। পরে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞদের নিয়ে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক কমিটি তৈরি করা হয়। তার খসড়া বিএনপির শীর্ষ দুই নেতাকে জানানো হয়। তারাও ইতিবাচক সাড়া দেন। সূত্রমতে, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ওই রূপরেখায় বিএনপির নির্বাহী কমিটি আকারে গঠনতন্ত্রে যুক্ত করা হবে। আগামীকাল শনিবার বিএনপির গঠনতন্ত্র উপকমিটিতে এ রূপরেখা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। পরে তা নিয়ে স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা করবেন বেগম জিয়া। এরপর তা দলের কাউন্সিলের মাধ্যমে অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। জানা যায়, বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে স্থায়ী কমিটি থাকছে আগের মতোই। মহাসচিব থাকছেন একজনই। একাধিক প্রস্তাবও আছে। বিএনপির উপদেষ্টা ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা নামে উপদেষ্টা পরিষদকে দুই ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। বিএনপির উপদেষ্টারা নির্বাহী কমিটিতে যথাযথ মর্যাদা পাবেন। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টারা বিশেষ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাবেন। যথারীতি ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, দফতর সম্পাদক, অর্থ সম্পাদক ও প্রচার সম্পাদক থাকবেন। সব মিলিয়ে সাংগঠনিক নেতা থাকবেন ১৭০ জনের মতো। তা ছাড়া জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদাধিকারবলে নির্বাহী কমিটির সদস্য হবেন। এ সংখ্যা হতে পারে ১৫০ জন। তবে তাদের কেউই কেন্দ্রের অন্য কোনো দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। সর্বস্তরে এক নেতার এক পদ রাখার জোর চেষ্টা চলছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ৩৫১ সদস্যের বেশি হবে না। তবে জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নির্বাহী কমিটির সদস্যের মর্যাদা দেওয়া হলে এর সংখ্যা দাঁড়াবে ৫০১-এ। বিষয়ভিত্তিক কমিটিতে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের প্রাধান্য থাকবে।

পররাষ্ট্রবিষয়ক উপকমিটির বৈঠক : কাউন্সিল সামনে রেখে বিএনপির পররাষ্ট্রবিষয়ক উপকমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গতকাল দুপুরে এ বৈঠক হয়। বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমানের সভাপতিত্বে এতে অংশ নেন বিএনপি নেতা ড. এম ওসমান ফারুক, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, গিয়াস কাদের চৌধুরী, শামা ওবায়েদ, ফয়সাল আলিম, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, এনামুল হক চৌধুরী, মাহমুদা হাবিবা, কর্নেল (অব.) আবদুল মজিদ, ডা. শায়ন্ত সাখাওয়াত প্রমুখ।

বিএনপির কাউন্সিলের স্লোগান-লোগো উন্মোচন : আসন্ন ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের লোগো ও স্লোগান উন্মোচন করেছে বিএনপি। রাজধানীর নয়াপল্টনের একটি হোটেলে গতকাল বিকালে এ লোগো উন্মোচন করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায়। একই সঙ্গে ‘দুর্নীতি দুঃশাসন হবেই শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ’ শীর্ষক বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনের এ স্লোগানও ঘোষণা করেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত ব্যবস্থাপনা ও প্রচার-প্রকাশনা উপকমিটির সদস্যরা অংশ নেন। দলের ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনও সম্মেলন উপলক্ষে নিজ নিজ স্লোগান তুলে ধরে। কাউন্সিল উপলক্ষে আজ শুক্রবার আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু করা হবে বলেও অনুষ্ঠানে জানানো হয়। পোস্টার, ফেস্টুনসহ বিভিন্ন ধরনের নিমন্ত্রণ কার্ডের বাইরেও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও ব্যাপক প্রচার চালানো হবে। ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়সহ প্রচার ও প্রকাশনার যাবতীয় কৌশল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার পাশাপাশি একটি প্রোজেক্টরের মাধ্যমে গতকাল এসব প্রদর্শন করা হয়। সংশ্লিষ্ট উপকমিটির সদস্য ও আইটি বিশেষজ্ঞ শামা ওবায়েদ রিংকুর তত্ত্বাবধানে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার পাশাপাশি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের প্রচারণার ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও সম্মেলনের আগে পত্রপত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণা চালানো হবে। ১৯ মার্চ সম্মেলন চলাকালে একাধিক প্রজেক্টরের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বিএনপির পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনেও একই কায়দায় লন্ডন থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছিলেন তারেক রহমান।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চেয়ে ডিএমপিকে চিঠি : ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চেয়ে ডিএমপিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, শুধু ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দেশ-বিদেশ থেকে আসা বহুসংখ্যক অতিথি ও নেতা-কর্মীর স্থানসংকুলান সম্ভব নয়। তাতে পুব দিকে মত্স্য ভবন থেকে শুরু করে পশ্চিমে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত ভয়াবহ লোকজট দেখা দিতে পারে। ও রকম পরিস্থিতিতে আমাদের, আপনাদের (পুলিশ) এবং সড়কপথে সাধারণ যাত্রীদের— সবার জন্যই এক বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। এ অবস্থায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানটিও বিএনপি নেতা-কর্মীদের ব্যবহারের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে।

সর্বশেষ খবর