শুক্রবার, ১১ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

হুমকি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের সম্পদ। মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক। তাই সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে পেশাগতভাবে আরও দক্ষ ও কল্যাণমুখী হতে হবে। দেশের পবিত্র সংবিধান, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অভ্যন্তরীণ ও বহিঃশত্রুর হুমকি মোকাবিলায়সহ যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। গতকাল সকালে কক্সবাজার জেলার রামুতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবগঠিত ১০ পদাতিক ডিভিশনের ২ পদাতিক ব্রিগেডসহ সাতটি ইউনিটের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সেনা সদস্যদের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ব, কর্তব্য পরায়ণতা, দায়িত্ববোধ সর্বোপরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দেন। সকালে প্রধানমন্ত্রী রামু সেনানিবাসের প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক এবং ১০ম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সারোয়ার হাসান প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। একটি সুসজ্জিত দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রী ১০ম পদাতিক ডিভিশনের নির্মিত বীর সরণি, অজেয় স্মৃতি ফলক, বীরাঙ্গন বহুমুখী শেড এবং আলীকদম সেনানিবাসে মাতামুহুরী নামে একটি কম্পোজিট ব্যারাক উদ্বোধন করেন। তিনি রামু সেনানিবাসে চারটি এসএম ব্যারাকের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং পরিদর্শক বইতে স্বাক্ষর করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সক্ষমতা ও নৈপুণ্য আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আধুনিক যানবাহন, হেলিকপ্টার, যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জাম এই বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় আমাদের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তের সুরক্ষায় লেবুখালীতে আরও একটি ডিভিশন প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে। এভাবে দ্রুত ও সমন্বিত আধুনিকায়নের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অধিকতর যুগোপযোগী করে গড়ে তুলব। তিনি বলেন, ১০ পদাতিক ডিভিশনের গঠন সম্পূর্ণ করতে আজ এই ডিভিশনে দুটি ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেডসহ সাতটি ইউনিটের পতাকা উত্তোলিত হলো। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, নবগঠিত ব্রিগেড ও ইউনিটসমূহের প্রত্যেক সদস্য দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই ডিভিশনের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, এ এলাকায় সেনানিবাস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই অঞ্চলে প্রাণ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। রামু সেনানিবাসে একটি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল প্রতিষ্ঠারও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু উন্নত ও পেশাদার সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেছিলেন। জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদী সমগ্র দেশকে তিন অংশে বিভক্ত করেছে। এ জন্য সেনাবাহিনীকেও এভাবে তিনটি স্বতন্ত্র ও দক্ষ কমান্ডে নিয়োজিত করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা ১৯৯৬ সাল থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রত্যেক সদস্যের নৈতিক ও মননশীলতার বিকাশ ও পেশাগত উত্কর্ষের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে পুনরায় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতির পিতার ১৯৭৪ সালের প্রতিরক্ষা নীতি বাস্তবায়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আমরা সেনাবাহিনীর জন্য ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করি। এর অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন, রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন এবং পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের নিরাপত্তা ও তদারকির জন্য একটি কম্পোজিট ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে। পার্বত্য শান্তি চুক্তি এবং ভারত এবং মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা বিজয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সমুদ্র সম্পদ রক্ষা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার লক্ষ্যে সরকার রামুতে সেনানিবাস প্রতিষ্ঠা করেছে।

কক্সবাজার বিমানবন্দর হবে আন্তর্জাতিক : এর আগে সকালে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভ্রমণকারীরা যাতে আরও ভালো সেবা পেয়ে স্বচ্ছন্দে পর্যটন নগরীতে যেতে পারেন, সে লক্ষ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরিত করা হবে। তিনি বলেন, জেলার মহেশখালীতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাচালিত বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। একই স্থানে একটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকা-কক্সবাজার সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। এ লক্ষ্যে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফাসহ স্থানীয়রা বক্তব্য রাখেন। এ সময় গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উসৈ শিং, আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর