শুক্রবার, ১১ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে রিটের রায় ৫ মে

নিজস্ব প্রতিবেদক

উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের ওপরে ৫ মে রায়ের দিন ধার্য করা হয়েছে। শুনানি শেষে গতকাল বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের এ দিন ধার্য করেন।

২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। বিলটি পাসের পর ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে এ রিট আবেদন দায়ের করেন। প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট এ সংশোধনী কেন অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। গত বছরের ২১ মে রুলের শুনানি শুরু হয়। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোতাহার হোসেন সাজু। এ ছাড়া অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে শুনানিতে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসি। গতকাল অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি শেষে সাংবাদিকদের বলেন, আদালত থেকে সামরিক ফরমানের মাধ্যমে সংবিধানে যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছিল সেগুলো বাতিল করে বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়াই ছিল পঞ্চদশ ও ষোড়শ সংশোধনীর মূল উদ্দেশ্য। এ সংশোধনী কার্যকর করতে যে আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন তা এখনো হয়নি। তাই আইন হওয়ার আগেই এ বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে মামলা করার এখনো সময় হয়নি। শুনানিতে এ বিষয়গুলোই যুক্তি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, শুনানিতে আমরা বলেছি ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণীত হয়েছিল জনগণের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। যার ভিত্তি ছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ও এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। অথচ সেই সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয়েছিল সামরিক ফরমানের মাধ্যমে। যা সংবিধানকে কলঙ্কিত করেছিল। সেই কলঙ্ক থেকে সংবিধানকে মুক্ত করার জন্যই পঞ্চদশ ও ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়েছে বলে আমরা উল্লেখ করেছি। এ ছাড়া সংশোধনী এখনো কার্যকর হয়নি। তিনি বলেন, সেই আইন পাস হলেই কেবল তখন বোঝা যাবে এতে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু আছে কিনা। তখন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু আইনে থাকলে মামলার কারণের উদ্ভব ঘটবে। তাই এ আইন পাস হওয়ার আগে মামলা দায়েরের কোনো কারণ উদ্ভব হয়নি। তাই এ আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়। ১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে।

সর্বশেষ খবর