শুক্রবার, ১১ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

সুন্দরবন দেখে অভিভূত বার্নিকাট

শেখ আহসানুল করিম, সুন্দরবন থেকে

সুন্দরবন দেখে অভিভূত বার্নিকাট

সুন্দরবনের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মায়াবী চিত্রল হরিণসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী, নদীতে বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতী ডলফিন ও কয়েকশ প্রজাতির পাখির আনাগোনা সচক্ষে দেখে অভিভূত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট। মঙ্গলবার থেকে তিন দিন ধরে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবনে অবস্থান করে জীববৈচিত্র্যে ভরপুর পৃথিবীর বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ বনের নয়নাভিরাম ইকো ট্যুরিজম এলাকাগুলো ঘুরে দেখেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার রক্ষায় বাংলাদেশের সঙ্গে তার দেশ একযোগে কাজ করছে জানিয়ে আবারও এই ম্যানগ্রোভ বনে আসার প্রত্যয়ে সুখস্মৃতি নিয়ে গতকাল বিকালে ঢাকায় ফিরে গেছেন বার্নিকাট। ইউএসএআইডির বাঘ প্রকল্পের দুই দিনব্যাপী সুন্দরবনের বাঘ রক্ষার জন্য জাতীয় সংলাপে অংশ নিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট মঙ্গলবার সকালে সুন্দরবনে আসেন। সুন্দরবনে আধুনিক পর্যটন জাহাজ ‘টাঙ্গুয়ার হাওর’-এ বাঘ রক্ষার জন্য জাতীয় সংলাপে অংশ নেন তিনি। পাশাপাশি ঘুরে দেখেন প্রাকৃতিকভাবে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টায় ছয়বার রূপ বদলানো জীববৈচিত্র্যের বৃহত্তম ভাণ্ডার এই ম্যানগ্রোভ বন। মঙ্গলবার বার্নিকাট সুন্দরবনের ঢাংমারী থেকে শুরু করে মায়া ও চিত্রল হরিণের প্রাচুর্য এলাকা চাঁদপাই, হারবাড়িয়া, জেংড়া এলাকা সফর করেন। পর্যটন জাহাজ ‘টাঙ্গুয়ার হাওর’-এ মৃগমারী এলাকায় রাতযাপন শেষে বুধবার ভোরে তাম্বুলবুনিয়া এলাকার পাখি-খালে গিয়ে কয়েকশ’ প্রজাতির পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর আনাগোনা প্রত্যক্ষ করেন। এরপর ওই দিন সকালে তিনি বাঘ রক্ষায় শ্যালা নদী ও বনে স্মার্ট প্রট্রোলিং মহড়ার উদ্বোধন করেন। বিকালে তিনি ডলফিনের অভয়ারণ্যসহ বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগরের ইকো ট্যুরিজম এলাকাগুলো ঘুরে দেখন। রাতে হরিণটনা এলাকায় অবস্থান করে গতকাল ঘুরে দেখেন সুন্দরবনের তাম্বুলবুনিয়া। ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবনের কটকা অভয়ারণ্যের টাইগার পয়েন্টের জামতলা সমুদ্রসৈকত থেকে রয়েছে সূর্যোদয় ও সূর‌্যাস্ত দেখার অপূর্ব সুযোগ। এ ছাড়া প্রাকৃতিকভাবে রাত-দিন ছয়বার রূপ বদলানো এই ম্যানগ্রোভ বনে রয়েছে প্রধান উদ্ভিদ সুন্দরী, গেওয়া, পশুর, গরান, গেওয়া, ধুঁদল, বাইনসহ রয়েছে ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা। রয়েছে ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল, ১৩ প্রজাতির অর্কিড, চিত্রল ও মায়াহরিণ, বন্য শূকর, বানর, বনমোরগ, উদবিড়াল, বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতিসহ ছয় প্রজাতির ডলফিন, লোনাপানির কুমির, কচ্ছপ, বিভিন্ন প্রজাতির সাপসহ ৩৭৫ প্রজাতির প্রাণী। ৩০০ প্রজাতির পাখি, রুপালি ইলিশসহ ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৬ প্রজাতির চিংড়ি, বিশ্বখ্যাত শিলাকাঁকড়াসহ ১৩ প্রজাতির কাঁকড়া, লবস্টার ও ৪২ প্রজাতির মলাস্কা বা শামুক-ঝিনুকের দেখা মিললেও বার্নিকাট সুন্দরবনের রাজা রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখতে পাননি। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তিন দিন সুন্দরবনে থাকা খুলনা বিভাগীয় বন সংরক্ষক (সিএফ) জহির উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, মার্শা বার্নিকাট রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখতে পাননি। তবে নদী ও খালের চরে দল বেঁধে থাকা অসংখ্য চিত্রল ও মায়াহরিণ, বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ডলফিন, বানর, বন্য শূকর, লোনাপানির কুমির, কচ্ছপ, গুঁইসাপ, উদবিড়াল, বনমোরগসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখতে পেয়েছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীসহ নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হয়েছেন। সময় করে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যের ভাণ্ডার দেখতে আবারও সুন্দরবনে আসবেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট।

সর্বশেষ খবর