বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

অরক্ষিত ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘ব্যাক অফিস’

নিজস্ব প্রতিবেদক

দীর্ঘদিন ধরেই অরক্ষিত ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিসংবেদনশীল ‘ব্যাক অফিস’ (সুইফট সার্ভার কক্ষ)! নড়বড়ে ছিল অতিগুরুত্বপূর্ণ ওই কক্ষের নিরাপত্তাব্যবস্থা। দেশের অন্যান্য বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তা নিশ্চিতের স্বার্থে ব্যাক অফিসের সার্ভারকে ব্যাংকের মূল লেন থেকে আলাদা রাখা হলেও ব্যতিক্রম ছিল খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাক অফিসে প্রবেশের চাবিও ছিল মোট তিন কপি। নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য বসানো তিনটি সিসিটিভি ক্যামেরাও মান্ধাতা আমলের। শুধু তাই নয়, অতিগুরুত্বপূর্ণ এ ইউনিটে কর্মরতরাও প্রশিক্ষিত নন বলে নিশ্চিত করেছেন রিজার্ভ ব্যাংক থেকে চুরি হওয়া ৮১০ কোটি টাকার ঘটনার তদন্তসংশ্লিষ্টরা।

তদন্ত সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অন্য কোনো ব্যাংকে হওয়া প্রতিটি ট্রানজেকশনেরই সারাংশ হিসেবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি প্রিন্ট কপি বের হয়। তবে সম্প্রতি চুরি হওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার ট্রান্সফারেরর ক্ষেত্রে ব্যাক অফিসের কোনো কম্পিউটার থেকে কোনো ধরনের প্রিন্ট কপিই বের হয়নি। ব্যাক অফিসে ১০ জন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করলেও সুইফটের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্বে ছিলেন আটজন কর্মকর্তা। ১০ জন কর্মকর্তার মধ্যে দুজন যুগ্মপরিচালক, চারজন উপপরিচালক ও চারজন সহকারী পরিচালক। সুইফট সার্ভারকক্ষে কেবল আটজন যে কোনো সময় ঢুকতে পারতেন। যদিও তারা স্পর্শকাতর ওই বিভাগে কাজ করার জন্য বিশেষ কোনো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন। প্রযুক্তিবিষয়ক কাজগুলো তারা তাদের সহকর্মীদের কাছ থেকেই শিখেছেন।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুর্বৃত্তরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ওই সময় ব্যাক অফিসের প্রিন্টার সংযোগের বাইরে রেখেছিলেন। একই সঙ্গে লেনদেনে ব্যবহার হওয়া ওই কম্পিউটারের তথ্যও মুছে ফেলেছেন। বড় ধরনের কোনো টার্গেট নিয়েই এগিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। ব্যাক অফিসের মতো অতিসংবেদনশীল কক্ষের তিনটি গোপন ক্যামেরাই অত্যন্ত পুরনো মডেলের। ব্যাংক কর্মকর্তারা দাবি করছেন, গত ৪ ফেব্রুয়ারি ক্যামেরাগুলো সচল ছিল। তবে পরবর্তী ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোনো ছবি কিংবা ভিডিওর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের অন্যসব লোকাল ব্যাংকেও সুইফটের সঙ্গে যোগাযোগ হয় এমন কোনো কক্ষের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। উন্নত সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি কক্ষে প্রবেশের জন্য চাবিও একটি রাখা হয়, আর তা কেবল নির্দিষ্ট একজনের কাছেই থাকে। তবে ব্যতিক্রম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘ব্যাক অফিস’। ওই কক্ষে প্রবেশের জন্য চাবি রয়েছে তিন কপি। চার হাজারেরও বেশি কম্পিউটারের লেন-এর সঙ্গে সংযুক্ত ব্যাক অফিসের কম্পিউটারগুলোও। পাসওয়ার্ড থাকলে অন্য যে কোনো কম্পিউটার থেকে ব্যাক অফিসের কম্পিউটারে প্রবেশ সম্ভব বলছেন আইটি এক্সপার্টরা। যদিও দেশের অন্য যে কোনো ব্যাংকের এমন কক্ষের কম্পিউটারগুলোকে মূল লেন-এর বাইরে রাখা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইটি এক্সপার্টদের বক্তব্যের বরাত দিয়ে তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেন, তারা মনে করছেন ২০ জানুয়ারি থেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্তত ২০টি কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছিল। হ্যাকাররা অফিস সময় এবং অফিস সময় ছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘বিবি’ লেনে প্রবেশ করে কম্পিউটার হ্যাক করেছিল। অতিসহজেই ব্যাক অফিসের কম্পিউটারে প্রবেশ করতে পেরেছে এবং ৩৫টি লেনদেন সম্পন্ন করেছে।

তারা আরও বলছেন, হয়তো দীর্ঘ পরিকল্পনার ফসল হলো ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি। এ কারণেই হয়তো ব্যাক অফিসের জন্য স্বতন্ত্র সার্ভারের ব্যবস্থা না রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিবি লেনে রাখা হয়েছিল। নিরাপত্তায় রাখা হয়েছিল মান্ধাতা আমলের সিসিটিভি ক্যামেরা। ব্যাক অফিসের কক্ষে প্রবেশের জন্য রাখা হয়েছিল তিন কপি চাবি।

সর্বশেষ খবর