বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

জঙ্গি বোমায় রক্তাক্ত ব্রাসেলস

বিমানবন্দর-মেট্রো স্টেশনে বিস্ফোরণে নিহত ৩৫

প্রতিদিন ডেস্ক

জঙ্গি বোমায় রক্তাক্ত ব্রাসেলস

হামলার পর আতঙ্কিত হয়ে জাভেনতেম বিমানবন্দর ছাড়ছেন যাত্রীরা। তাদের মধ্যে কয়েকজন আহত নারীও ছিলেন —ডেইলি মেইল

সন্ত্রাসী হামলায় আবার কেঁপে উঠল ইউরোপ। গত নভেম্বরে বিশ্ব সংস্কৃতির ‘আধার’ হিসেবে খ্যাত ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের পর গতকাল প্রায় একই ধরনের হামলায় কেঁপে উঠে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে খ্যাত বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস। এ হামলায় নিহত হয়েছে কমপক্ষে ৩৫ জন। আহত হয়েছে দুই শতাধিক। গতকাল থেমে থেমে বিস্ফোরণ ঘটে ব্রাসেলসের জাভেনতেম বিমানবন্দর এবং ইইউ ইনস্টিটিউশনের কাছের মালবিক মেট্রো স্টেশনে। এর মধ্যে কমপক্ষে একটি আত্মঘাতী হামলা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্থানীয় সময় সকাল আটটার দিকে জাভেনতেম বিমানবন্দরের প্রধান হল লক্ষ্য করে দুটি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এর এক ঘণ্টা পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইউপি) প্রধান ভবনের কাছে মালবেক মেট্রো স্টেশনে তৃতীয় বিস্ফোরণটি ঘটে। কর্মস্থলগামী মানুষকে নিয়ে কমিউটার ট্রেনগুলোর যাত্রার পরপরই এ বিস্ফোরণ ঘটে। মূলত গত নভেম্বরের পর থেকে গোটা ইউরোপে সতর্কতা জারি করা হয়। এর মধ্যে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা আরোপ ছিল ব্রাসেলসে। গত পরশু লন্ডনে ১০টি স্থানে জঙ্গি হামলা হতে পারে বলে ব্রিটেনে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়। কিন্তু গতকাল ব্রাসেলসে এই জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটল। আর এটি এমন সময় ঘটল যার চারদিন আগে প্যারিস হামলার প্রধান সন্দেহভাজন সালাহ আবদেসালামকে ব্রাসেলস থেকেই গ্রেফতার করা হয়। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা সালাহকে গ্রেফতারের সঙ্গে এই হামলার সম্পর্ক রয়েছে বলে ধারণা করছেন। তবে তাত্ক্ষণিকভাবে কোনো সংগঠন এর দায় স্বীকার করেনি। পৃথক পৃথক বিস্ফোরণের পর স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে বিমানবন্দরের হামলায় অন্তত ১৫ জন এবং মেট্রো স্টেশনের হামলায় অন্তত ২০ জনের প্রাণহানির খবর জানিয়েছে। ঘটনার পর দেশটিতে সর্বোচ্চ সন্ত্রাসী সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হামলার পর বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গোটা মেট্রো ব্যবস্থাও। সব স্থাপনা ও যান স্টেশনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। 

এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনার পর প্রত্যক্ষদর্শীরা তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমের কাছে। বিমানবন্দরে হামলার ঘটনায় ড্রায়েস ভ্যালাইর্ট নামের ৩০ বছর বয়সী একজন প্রত্যক্ষদর্শী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলকে বলেছেন, ‘প্রথম বিস্ফোরণের ১০ সেকেন্ডের মধ্যেই দ্বিতীয় বিস্ফোরণ ঘটে। পরের বিস্ফোরণটি ছিল আরও জোরালো। ১৮ বছরের কাছাকাছি বয়সী এক নারীকে দেখেছি একজন আহত মানুষকে উদ্ধার করতে। তার সারা শরীর ছিল রক্তে ভেজা। হামলাস্থলে প্রচুর রক্ত আর প্রচণ্ড ভীত মানুষদের দেখেছি আমি।’ জাস মৌজুন নামের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘সর্বত্র কেবল রক্ত আর রক্ত। সর্বত্র  কেবল আহত মানুষদের হাহাকার।’ ঘটনাস্থলে থাকা ?স্কাই নিউজের সাংবাদিক অ্যালেক্স রোজি বলেন, ‘ভবনটি নড়ছিল আমি টের পাচ্ছিলাম। প্রচুর ধুলা আর ধোঁয়া ছিল। যেদিক থেকে বিস্ফোরণের শব্দ এসেছে আমি সেদিকে এগিয়ে গিয়ে আতঙ্কিত লোকজনকে ছুটে বের হতে দেখেছি।’ এদিকে বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ব্রাসেলসবাসী বেশ কিছু দিন ধরে আঁচ করতে পারছিল সেখানে জঙ্গি হামলা হতে পারে। কিন্তু সেটা কখন সে বিষয়ে ধারণা ছিল না। ফলে অনেকে এ হামলাকে স্বাভাবিকভাবে নিয়েছে।  বেলজিয়ামের বিস্ফোরণকে সন্ত্রাসী হামলা আখ্যা দিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী চার্লস মাইকেল বলেছেন, ‘এটি একটি অন্ধ, সহিংস এবং কাপুরুষোচিত হামলা। এই হামলা আমাদের ইতিহাসের এক ভয়াবহ দিন। আমি সবাইকে শান্ত ও স্থির থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’ বোমা বিস্ফোরণের পর বিমানবন্দরে যাত্রীসহ সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সবাই এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা একটি ছবিতে ওই বিমানবন্দরের একটি ভবন থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বার্তা সংস্থা  বেলগাকে বলেছেন, বিস্ফোরণের আগ মুহূর্তে তারা বিমানবন্দরের ভিতরে আরবিতে চিৎ?কার করে কিছু বলতে শুনেছেন। এদিকে হামলার পর নিজেদের নিরাপত্তা জোরদারের ঘোষণা দিয়েছে ফ্রান্স ও ব্রিটেন। বিস্ফোরণের পর জরুরি  বৈঠকে বসেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ আর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি সবাইকে জঙ্গি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

ইউরোপের বিভিন্ন শহরে নিরাপত্তা : ব্রাসেলসে একাধিক বিস্ফোরণের পর ইউরোপজুড়ে অন্যান্য দেশগুলোও তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ফ্রান্সের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত এক হাজার ৬০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই হামলা থেকে এটা বোঝা যাচ্ছে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো কতটা জরুরি। জার্মানি এবং হল্যান্ড তাদের সীমান্তে নিরাপত্তা তল্লাশি জোরদার করেছে। এসব দেশ ব্রাসেলসের সঙ্গে বিমান ও ট্রেন যোগাযোগ আপাতত স্থগিত করেছে।

 এএফপি, বিবিসি, ডেইলি মেইল।

সর্বশেষ খবর