বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

জঙ্গিবাদ বহুমাতৃক রূপ লাভ করেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

জঙ্গিবাদ বহুমাতৃক রূপ লাভ করেছে

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, দেশে জঙ্গিবাদ বহুমাতৃক রূপ লাভ করেছে। সাইবার ক্রাইম সামনে চলে আসছে। এ সংক্রান্ত মামলায় বিচারকদের বিচার কাজ করতে হয়। তিনি বলেন, সাইবার ক্রাইমের বিষয়ে বিচারকদের কোনো ট্রেনিং নেই। বিচারকদের জন্য ট্রেনিং ইনস্টিটিউট দরকার। যেখানে সাইবার সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ট্রেনিং নেওয়া যাবে। কেননা জঙ্গিবাদ কীভাবে মোকাবিলা করবে সেটা সরকারের রাজনৈতিক ইস্যু, কিন্তু আদালত জঙ্গিবাদ মোকাবিলা ইস্যুতে হিউম্যান রাইটসের সঙ্গে আপস করতে পারেন না। আদালত মানবাধিকার রক্ষায় দায়বদ্ধ। গতকাল ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারার বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানিতে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃতাধীন আপিল বিভাগের বিচারপতির বেঞ্চ শুনানি গ্রহণ করেন। একযুগ পরে এই আপিলের শুনানি শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১১ মে পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হয়েছে। রিটের পক্ষে ড. কামাল হোসেন এবং রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা শুনানিতে অংশ নেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারা ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন এসেছে সে সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। ১৯৭১ সালের পর বর্তমান সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো অবস্থানে রয়েছে। তাহলে কেন এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে না? প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা এ দেশের নাগরিক। আমারা একেবারে চোখ বন্ধ করে থাকতে পারি না। ২০০৩ সালে যখন হাইকোর্টের জুনিয়র বিচারপতি ছিলাম, তখন সাইফুজ্জামান বনাম রাষ্ট্র মামলায় পুলিশের শ্যোন অ্যারেস্ট নিয়ে নির্দেশনাসহ রায় দিয়েছিলাম। ওই সময় যদি পারি তাহলে এখন পারব না কেন? শুনানি শেষে ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এক যুগ আগে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা ও ১৬৭ ধারা সংশোধনে হাইকোর্ট রায় দেন। হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের নির্দেশনা এখনো বহাল। কিন্তু সরকার ওই রায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়নি। রায় বাস্তবায়ন করা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটত না। ১৯৯৮ সালের ২৩ জুলাই ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তৎকালীন সহকারী কমিশনার (এসি) আকরাম হোসেন। ওই বছরের ২৪ জুলাই মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে মারা যান রুবেল। এ ঘটনায় রুবেলের বাবা এসি আকরামসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা করেন। এ মামলায় ২০০২ সালে বিচারিক আদালত এসি আকরামসহ ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এরপর তৎকালীন সরকার রুবেল হত্যা তদন্তের জন্য বিচারপতি হাবিবুর রহমান খানের সমন্বয়ে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত শেষে কমিটি ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের পক্ষে কয়েকটি সুপারিশ করে। এ সুপারিশ বাস্তবায়িত না হওয়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) হাইকোর্টে রিট করে। ওই রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল এ ব্যাপারে কয়েক দফা নির্দেশনাসহ রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রচলিত বিধান ছয় মাসের মধ্যে সংশোধন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি ওই ধারাগুলো সংশোধনের আগে কয়েক দফা নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সরকারকে বলা হয়। এর বিরুদ্ধে আপিলে যায় রাষ্ট্রপক্ষ। আপিল আবেদনে বলা হয়, এ দুটি ধারা সংশ্লিষ্ট যে আইনে রয়েছে, তা যথেষ্ট ও সঠিক। এ জন্য আইন প্রণয়ন বা সংশোধনের প্রয়োজন নেই। ২০০৪ সালে আপিল বিভাগ সরকারের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন। তবে হাইকোর্টের ওই নির্দেশনাগুলো স্থগিত করেননি।

সর্বশেষ খবর