বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

দুঃখ প্রকাশ করলেন সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুঃখ প্রকাশ করলেন সিইসি

কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। কয়েকটি জায়গায় ছোটখাটো কিছু ঘটনা এবং আহত-নিহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশও করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। গতকাল নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। প্রথম ধাপে ৭১২টি ইউনিয়ন পরিষদে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ হয়েছে। ভোট গ্রহণ শেষে বিকালে এ সংবাদ সম্মেলন করেন সিইসি। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, প্রথম ধাপে ৫৬টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সার্বিকভাবে এ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল। বিশেষ করে নারীদের উপস্থিতি ছিল বেশ স্বতঃস্ফূর্ত। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া এ নির্বাচন অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। তিনি বলেন, ‘নোয়াখালীতে দুই নির্বাচনী কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঝালকাঠিতে একজন মারা গেছেন। আহত-নিহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।’ এ সময় ছোটখাটো ও বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার জন্যও তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। ভোট নিয়ে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মতামত সম্পর্কে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘সবার দাবি ও মতামত থাকতে পারে, থাকবে। আমরা মনে করি অল্প কিছু জায়গায় অনিয়ম হয়েছে। আমরা এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেব। মামলা করব।’ সিইসি বলেন, ‘আমরা ইউপি নির্বাচনের বিধি সংশোধনে হাত দিয়েছি। ভবিষ্যতে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’ দলীয়ভাবে নির্বাচন সম্পর্কে সাংবাদিকদের সিইসি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দলীয়ভাবে হওয়া ভালো কি মন্দ তা বলার জন্য আরও সময় লাগবে। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘সার্বক্ষণিকভাবে ভোট মনিটর করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনাররা নির্বাচন মনিটর করেছেন। এ ছাড়া বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক নির্বাচন কাভার করেছেন। টিভির খবরও আমরা মনিটর করেছি। এতে আমরা উপকৃত হয়েছি। প্রথম ধাপে ৭১২টি ইউপিতে ভোট গ্রহণ হয়েছে।’ সার্বিকভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ভোটারদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি। এদিকে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ৭১২টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। এবার ছয় ধাপে দেশের নির্বাচনের উপযোগী ইউপিগুলোর ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। গতকাল ছিল প্রথম ধাপের ভোট। তবে প্রথম ধাপের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আজ হবে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের ১১ ইউপির ভোট এবং ২৭ মার্চ হবে কক্সবাজারের টেকনাফের দুটি ইউপির ভোট।

সিইসির টেলিকনফারেন্স : ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অন্তত চার জেলায় গোলযোগ ও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও প্রথম চার ঘণ্টায় ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ‘স্বস্তি’তে নির্বাচন কমিশন। চারজন নির্বাচন কমিশনার গতকাল সকাল থেকেই বিভাগভিত্তিক ইউপি ভোটের খবর নেন। বেলা ১২টার পর ভোট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে থাকা চার নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে টেলিকনফারেন্সে খবর নিতে দেখা যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদকে, যিনি আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের দ্বিতীয় তলায় অবস্থান করছিলেন। আর ওই নির্বাচন কমিশনাররা ছিলেন নিচতলায়। কাজী রকিবের কাছে ভোট পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ, জাবেদ আলী ও শাহনেওয়াজ।

ইউপি ভোট নিয়ে বেলা ১২টায় নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বলেন, ‘কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ ঘটলেও সব জায়গায় উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে। দিনশেষে ভোট পড়ার হার ৬০ শতাংশের বেশি হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। প্রথম চার ঘণ্টায় ভালো পরিবেশে ভোট হয়েছে। আবু হাফিজ বলেন, ইউপি নির্বাচনে সব সময়ই উত্তেজনা বিরাজ করে। তৃণমূলের এ ভোটে উপস্থিতিও ভালো হয়। এবার নারী ভোটারের উপস্থিতি বেশি থাকার তথ্য পেয়েছেন বলে জানান তিনি।

৫০ ইউপির ভোট বাতিলের দাবি বিএনপির : ৭১২ ইউপির প্রায় সব কটি নিয়ে অভিযোগ থাকলেও অনিয়মের কারণে অন্তত ৫০ ইউপির নির্বাচন বাতিল করে ইসিকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে অনুরোধ জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল বিকালে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল-নোমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের সঙ্গে দেখা করে। সেখান থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তারা। আবদুল্লাহ আল-নোমান বলেন, ‘ইসি যে সরকারের আজ্ঞাবহ, এ নির্বাচন যে তামাশার, সেটা জনগণকে দেখাতে আমরা নির্বাচনে এসেছি। জনগণ দেখেছে।’ ৭১২টি ইউনিয়নের মধ্যে বেশির ভাগেই কারচুপি ও দখল হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এসব ইউপির মধ্যে যেগুলোতে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয়েছে সেগুলো বেছে বেছে অন্তত ৫০টি ইউপির নির্বাচন বাতিল করতে পারে ইসি—সে ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত তৈরি হতে পারে। ফলে পরের ধাপে কেন্দ্র দখলের প্রবণতা কমে যাবে। ইসির প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। এ বিষয়ে আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে অনুরোধ করেছি।’ আবদুল্লাহ আল-নোমান বলেন, মানুষ যাতে নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ ও আস্থা হারায় সে জন্য নির্বাচন দলভিত্তিক করা হয়েছে। সরকার ভবিষ্যতে ভোটারবিহীন নির্বাচন করতে চায়। বিএনপির প্রতিনিধিদলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন যুগ্ম-মহাসচিব মো. শাহজাহান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সুজাউদ্দিন।

স্থগিত রয়েছে আরও পাঁচ ইউপির ভোট : প্রথম দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গতকাল ৭১২ ইউপিতে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। শেষ মুহূর্তে আদালতের নির্দেশে পাঁচটি ইউপির ভোট বন্ধ হয়। নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানান, এ ধাপে ৭৫২ ইউপির তফসিল হয়। সীমানা জটিলতা ও আদালতের আদেশে এ পর্যন্ত ২৭টি ইউপির তফসিল থেকে বাতিল করা হয়। প্রথম ধাপে ভোট রয়েছে ৭২৫ ইউপির। এর মধ্যে গতকাল ভোট হয়েছে ৭১২ ইউপিতে, ২৩ মার্চ ১১ ইউপি ও ২৭ মার্চ আরও দুই ইউপিতে ভোট হবে বলেন তিনি। সোমবার ইসির জনসংযোগ শাখা থেকে জানানো হয়েছিল, ২১৭ ইউপির ভোট হবে। শেষ সময়ে আদালতের আদেশে পাঁচটি (ভোলার লালমোহনের বদরপুর, রমাগঞ্জ, বোরহানউদ্দিনের বড়মানিকা, পক্ষিয়া ও চরফ্যাশনের চরমানিকা) ইউপির ভোট বন্ধ করা হয়। গতকাল সকালে এ পাঁচটি ইউপি তালিকা থেকে বাদ যায়। সোমবার বন্ধ হয় বোরহানউদ্দিনের রসুলপুর, বাঞ্ছারামপুরের সোনারামপুর, মহেশখালীর কালারমারছড়া ও সারিয়াকান্দির কাজলা ইউপির ভোট। এর আগে চর এক্করিয়া, আলিমাবাদ, লতা, গোবিন্দপুর, আন্দারমানিক, সৈয়দপুর, লর্ড হার্ডিঞ্জ, আমতলী, শ্রীরামকাঠি, আইয়ুপুর, নানুপুর, আইলহাস, নাগদহ, ধুলাসার, মুজিবনগর, হরিহরনগর, ভারড়া ও মূলঘর প্রথম ধাপ থেকে বাদ দেয় ইসি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর