বুধবার, ৩০ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

এবার বিদেশি কোচের বেতনের নামে অর্থ পাচার

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

এবার বিদেশি কোচের বেতনের নামে অর্থ পাচার

রিজার্ভের অর্থ লোপাটের তদন্ত শেষ হতে না হতেই এবার জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক দুই প্রশিক্ষকের (কোচ) বেতনের নামে অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে। চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে প্রাপ্য বেতনের অতিরিক্ত অর্থ গেছে জাতীয় ফুটবল দলের ডাচ্ কোচ লোডডিক ডি ক্রুইফ ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) একাডেমির প্রধান কোচ রেনে কোস্টারের অ্যাকাউন্টে। অগ্রণী ব্যাংকের একটি শাখা থেকে নেদারল্যান্ডসের হিসাবে এক বছরে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার ইউরো পাঠানো হয়। বিষয়টি অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে অতিরিক্ত অর্থ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে বাফুফে। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউ করপোরেট শাখায় পরিচালিত হিসাব নম্বর ৩৩০০১২২১ থেকে দুই ডাচ্ কোচের নেদারল্যান্ডসের ব্যাংক হিসাবে বেতন-ভাতা বাবদ ২০১৪ সালের ১ জুলাই হতে ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ২ লাখ ৪০ হাজার ইউরো পাঠানো হয়েছে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে। এখন বিষয়টি তদন্ত করতে ওই অর্থ পাঠানোর অনুমোদন-সংক্রান্ত কাগজপত্র সংগ্রহে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক। অভিযোগের বিষয়টি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে বেতন-ভাতার রেকর্ডপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদির মূল কপি পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে ২৪ মার্চ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন দুদকের উপসহকারী পরিচালক রাফী মো. নাজমুস সা’দাৎ। ৩০ মার্চের মধ্যে এসব কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। দুদক যে রেকর্ডপত্র চেয়েছে এর মধ্যে রয়েছে—বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক ফুটবল কোচ লোডডিক ডি ক্রুইফ এবং বাফুফে একাডেমির সাবেক প্রধান কোচ রেনে কোস্টারের সঙ্গে বাফুফের সম্পাদিত চুক্তিপত্র, বেতন-ভাতা অনুমোদনের কাগজপত্র, গত বছর ৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো চিঠি ও এ-সম্পর্কিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন এবং একই বছরের ১১ জুন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বাফুফের চিঠি ও এ-সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন। গতকাল বিকালে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঘটনাটি সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই নেই। তিনি বলেন, সাবেক দুই ডাচ্ কোচের বেতন-ভাতা যা দেওয়া হয়েছে এর সবই বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে। তার মতে, নিয়মের বাইরে তিনি কিছুই করেননি। জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক কোচ ডি ক্রুইফের মাসিক বেতন কত ছিল—এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি বাফুফে সভাপতি। এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি অফিসে গিয়ে খোঁজ নেওয়ার পরামর্শ দেন। অভিযোগ রয়েছে, দুই বছরের চুক্তিতে ২০১৩ সালের জুনে জাতীয় ফুটবল দলের দায়িত্ব নিলেও আলোচিত ডাচ্ কোচ ক্রুইফ ও তার সহকারী কোস্টার দায়িত্ব পালন করেছেন আসলে ১৬ মাস। এর মধ্যে এক বছরের বেতন-ভাতা আগেই পরিশোধ করা হলেও পরের বছরের বেতন-ভাতা নিয়ে বাফুফের সঙ্গে মনোমালিন্য তৈরি হয়। সমঝোতার মাধ্যমে দুই কোচের সর্বমোট ১৬ মাসের বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও পরে তাদের হিসাবে পুরো ২৪ মাসের বেতনের অর্থ স্থানান্তর করা হয়। আর এই সমঝোতার আড়ালেই অতিরিক্ত অর্থ নেদারল্যান্ডসে দুই কোচের হিসাবে পাচারের বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে দুদক। সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের জুলাই থেকে বাফুফের সঙ্গে পারিশ্রমিক নিয়ে মন-কষাকষি শুরু হয় দুই কোচের। একই বছরের সেপ্টেম্বরে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে দেশে ফিরে গিয়ে ফিফায় বিচার দেওয়ার হুমকিও দেন ক্রুইফ-কোস্টার। ফলে দুই বছরের চুক্তিতে দায়িত্ব নিলেও বাংলাদেশে মোট ১৬ মাস (২০১৩ সালের জুন থেকে ২০১৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত হিসাব ধরে) দায়িত্ব পালন করেন দুই কোচ। এর মধ্যে ১২ মাসের বেতন পরিশোধ করা হয় আগেই। বকেয়া থাকে চার মাসের বেতন। ওই সময় বাফুফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সমঝোতার মাধ্যমে বকেয়া চার মাসের বেতন দিলেই চলবে। চুক্তির বাকি আট মাসের বেতন আর দিতে হবে না। তবে ২০১৪ সালে বাফুফে বেতন ছাড়ের জন্য যে চিঠি দিয়েছিল যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে, তাতে চার মাসের বেতনের পরিবর্তে পুরো বছরের (১২ মাস) অর্থ ছাড় করার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। বাফুফের সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে ১ জুলাই ২০১৪ থেকে ৩০ জুন ২০১৫ পর্যন্ত ডাচ্ কোচ ডি ক্রুইফের প্রাপ্য বেতন এক লাখ ৪০ হাজার ইউরো এবং বাফুফে একাডেমির প্রধান কোচ রেনে কোস্টারের প্রাপ্য বেতন এক লাখ ইউরো— এই দুই লাখ ৪০ হাজার ইউরো কোচদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বৈদেশিক মুদ্রায় স্থানান্তর করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।

সর্বশেষ খবর