রবিবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

গোঁজামিল তদন্তে মুক্ত বোমাবাজরা

তুহিন হাওলাদার

গোঁজামিল তদন্তে মুক্ত বোমাবাজরা

রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে হাতেনাতে বোমাসহ গ্রেফতার হওয়া শতাধিক আসামি পুলিশের গোঁজামিল তদন্তের কারণে রেহাই পেয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই আদালতের নির্দেশে ইতিমধ্যে কারাগার থেকে ছাড়াও পেয়েছেন । এ ছাড়া আরও অর্ধশত বোমাবাজ মামলার অভিযোগ থেকে রেহাই পাওয়ার অপেক্ষায়। বোমাসহ গ্রেফতারকৃত এই আসামিদের পরিত্রাণ পাওয়ার পেছনে পুলিশের দুর্বল তদন্তকে দায়ী করছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। তারা জানান, হাতেনাতে গ্রেফতারকৃত অনেক বোমাবাজের বিরুদ্ধে মামলায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলেও বিচারের মুখোমুখি করা যাচ্ছে না। পুলিশের গোঁজামিল ও দুর্বল তদন্তের কারণে দুর্ধর্ষ অনেক আসামি বিচারের আগেই মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়ে যাচ্ছে। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আসামিদের অব্যাহতি পাওয়া বা না পাওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের ভূমিকাও প্রভাব ফেলে। এর কারণ আসামির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরেও পুলিশ যদি অব্যাহতি চায়, সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি পুনঃ তদন্তে পাঠানোর জন্য আদালতের কাছে আবেদন করতে পারে। মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, মিরপুর থানা এলাকার একটি মেস থেকে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি বিস্ফোরক ও পেট্রলবোমাসহ হাতেনাতে ১২ আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মিরপুর মডেল থানার এসআই কামাল হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন। এ মামলায় পুলিশ গোঁজামিল দিয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করায় বিচারের আগেই বোমাসহ গ্রেফতারকৃত পাঁচ আসামি অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়, মিরপুর মডেল থানার সেকশন-২, ব্লক-বি, রোড-২, বাসা নম্বর-১, দ্বিতীয় তলার মেস থেকে ১২ আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের সময় আসামিদের কাছ থেকে মজুদ করা বোতলভর্তি পেট্রল, পেট্রলবোমা, গান পাউডার, ককটেল, বিভিন্ন প্রকার জিহাদি বইসহ ১৭টি আলামত উদ্ধার করা হয়। পরে এই আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিস্ফোরক পরিদফতরের কাছে মতামত চাওয়া হয়। আলামত পরীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়, রাসায়নিক পরীক্ষায় শনাক্তকৃত ‘পেট্রল’ একটি অতি প্রজ্বলনীয় তরল পদার্থ। যা বোমা তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ‘নাইট্রো সেলুলোজ’ একটি বিস্ফোরক। যা দেশীয় ককটেল জাতীয় বিস্ফোরক তৈরির অন্যতম উপাদান ও পেট্রলবোমার শক্তি বৃদ্ধিতে ব্যবহূত হয়ে থাকে। এর পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর থানার এসআই মুসুদ পারভেজ গত বছরের ১৪ এপ্রিল বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে গোঁজামিল দিয়ে আদালতে আলাদা দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্র দুটিতে বোমাসহ হাতেনাতে গ্রেফতারকৃত ৫ আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়। পরে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দাখিল করা অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ঢাকার ১ নম্বর মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারক মো. কামরুল হোসেন মোল্লা পাঁচ আসামিকে অব্যাহতি দেন। অব্যাহতি পাওয়া পাঁচ আসামি হলো— এমদাদুল্লাহ, ফরিদ উদ্দিন, রাসেল আহম্মেদ, এ কে এম ফয়সাল কবির ও লাবু। এদের মধ্যে আসামি এমদাদুল্লাহ গ্রেফতারের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় এবং বাকি চার আসামি বিচারের আগেই মামলার অভিযোগ থেকে রেহাই পেয়ে মুক্ত আছে। এদিকে একই ঘটনায় করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের অপর মামলায় এ আসামিদের অব্যাহতির বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ২৪ মে দিন ধার্য করেছেন একই বিচারক। আদালত সূত্র জানায়, বোমাবাজদের মামলার তদন্তে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশ গোঁজামিল দিয়ে আদালতে দুর্বল অভিযোগপত্র দাখিল করে। এ ক্ষেত্রে অনেক মামলায় আসামির নাম, ঠিকানা ও বিবরণ সংক্ষিপ্ত করে দেখানো হয়। অনেক সময় অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আসামির ঠিকানা ইচ্ছা করে এদিক-ওদিক করে অভিযোগপত্রে দেখানো হয়। বলা হয়, আসামির বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি এবং নাম-ঠিকানা সঠিক নয়। তাই আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। কিন্তু এই আসামিদের গ্রেফতারের সময় মামলার জব্দ তালিকায় বোমা অথবা পেট্রলবোমা অথবা বোমা তৈরির কাঁচামাল ও বিস্ফোরকসহ গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে, আসামিদের কাছ থেকে বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। তাই বোমার উৎস এবং ঘটনার সঙ্গে অন্য যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার করতে এই আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। পরে রিমান্ড ফেরত প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। শেষ পর্যায়ে সেই তদন্ত কর্মকর্তাই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের সময় বলেন, আসামির নাম-ঠিকানা সঠিক নেই এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। তাহলে মাননীয় আদালতের বিচারক পুলিশ কর্মকর্তার কোন কথাটি বিশ্বাস করবেন। ফলে এই সুযোগ নিয়ে আসামি পক্ষ সহজেই রেহাই পেয়ে যায় মামলার অভিযোগ থেকে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলার অভিযোগের কথা গুরুত্বসহকারে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। পাশাপাশি হাতেনাতে বোমাসহ গ্রেফতারকৃত দুর্ধর্ষ আসামিদের যদি পুলিশ অব্যাহতির জন্য আবেদন করে, তবে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলাটি পুনঃ তদন্তে পাঠানোর জন্য আদালতকে জানানো হয়। তবে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়া বা না দেওয়ার বিষয়টি বিচারকের বিবেচনমূলক এখতিয়ার।  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমার কাছে সব বিষয়ে তথ্য থাকে না। এ বিষয়টি আইজি ভালো বলতে পারবেন।

সর্বশেষ খবর