বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

সাইবার ঝুঁকিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক

তথ্যপ্রযুক্তিতে দুর্বলতা সহায়তার প্রস্তাব বিশ্বব্যাংকের

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্ত চলমান অবস্থায় এবার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সাইবারঝুঁকির কথা তুলে ধরল বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি গত সপ্তাহে দেওয়া এক প্রতিবেদনে বলেছে, সরকার মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর সাইবারঝুঁকি সামলানোর পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) দক্ষতা বাড়াতে তারা সহায়তা করতে চায়। এ বিষয়ে সরকারকে একটি প্যাকেজ ঋণ সহায়তার প্রস্তাবও দিয়েছে সংস্থাটি।

সংস্থাটি বলেছে, এ খাতে সর্বমোট দেড়শ মিলিয়ন ডলার দিতে পারবে বাংলাদেশকে। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। ৬ এপ্রিল বিশ্বব্যাংক তাদের এ ধরনের প্রস্তাবসংক্রান্ত একটি বিশদ প্রতিবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেখানে তারা চারটি খাতে সহায়তার মোট অর্থ ভাগ করে দেওয়ার  প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ায় কারিগরি সহায়তা দেবে ১৫ মিলিয়ন ডলার, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে দেবে আরও ৭ মিলিয়ন ডলার, ৩ মিলিয়ন ডলার দেবে প্রকল্প বাস্তবায়ন সহায়তায় আর সবচেয়ে বেশি ১২৫ মিলিয়ন ডলার দিতে চাইছে সরকার মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর সাইবারঝুঁকি সামলানোর জন্য আইটি সক্ষমতা বাড়াতে।

বিশ্বব্যাংক তাদের প্রস্তাবপত্রে সরকারি ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন শাখার অটোমেশন প্রক্রিয়ার তথ্য তুলে ধরে বলেছে, এটি নিশ্চিত যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন সব ব্যাংকেরই তথ্যপ্রযুক্তিতে (আইটি) দুর্বলতা রয়েছে। এ মুহূর্তে ব্যাংকগুলোর অটোমেশন প্রক্রিয়াকেই ব্যবসার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। সাইবারঝুঁকি ও আইটি দুর্বলতা বোঝাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বরাত দিয়ে বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে রাষ্ট্রায়ত্ত আট ব্যাংকের অটোমেশনের (কোর ব্যাংকিং সিস্টেম) তথ্য তুলে ধরেছে। ওই তথ্য অনুযায়ী, সোনালী ব্যাংকের ১ হাজার ২০৭টি শাখার মধ্যে ৫০২টি, জনতার ৯০২টির মধ্যে ৫০৩টি, অগ্রণীর ৯৩০টির মধ্যে ৮১৬টি, রূপালীর ৫৫৪টির মধ্যে ২০৯টি, কর্মসংস্থান ব্যাংকের ২১২টির মধ্যে ২৮টি এবং বিডিবিএলের ৩৬টির মধ্যে ৩৬টি শাখা কোর ব্যাংকিং সিস্টেমের মধ্যে আছে। অটোমেশনে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। বিশ্বব্যাংক বলেছে, কৃষি ব্যাংকের ১ হাজার ৩০ শাখার মধ্যে মাত্র ৯৪টি কোর ব্যাংকিং কার্যক্রম নিশ্চিত করেছে। রাকাবের ৪০০-এর মধ্যে ১টি শাখাও কোর ব্যাংকিং নিশ্চিত করতে পারেনি। কোর ব্যাংকিং সিস্টেম হচ্ছে এমন একটি কম্পিউটারাইজড পদ্ধতি যার মাধ্যমে ব্যাংকের একটি শাখা অন্য শাখাগুলোর সঙ্গে নেটওয়ার্ক দ্বারা সংযুক্ত থাকে। ফলে একজন গ্রাহক ওই ব্যাংকের যে কোনো শাখা থেকে তার ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট হিসাব ও লেনদেন সম্পর্কিত তথ্য সহজে পেতে পারে। বিশ্বব্যাংক বলেছে, তাদের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, আর্থিক প্রক্রিয়া, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ, অভ্যন্তরীণ অডিট, অটোমেশন, ঋণ মনিটরিং এবং আদায় ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি সাইবারঝুঁকি সামলাতে যেসব নতুন যন্ত্র ব্যবহার হবে সেসব যন্ত্র বা মেশিন চালানোর জন্য ব্যাংকের জনবলকে প্রশিক্ষণ দেওয়া ও দক্ষতা বাড়ানোর ব্যাপারে সহায়তা করবে। এ ব্যাপারে অগ্রণী ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরকারি ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে অটোমেশন প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে। যত বেশি টেকনোলজির ব্যবহার হচ্ছে তত বেশি সাইবারঝুঁকির মাত্রা বাড়ছে। এটা ঠিক, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির আগে আমরা ব্যাংকিং খাতে সাইবারঝুঁকির বিষয়টি সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারিনি। এখন ব্যাংকিং খাতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আমরা সবাই গুরুত্ব দিচ্ছি। সেদিক থেকে বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবটি ভালো।’ তবে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের কর্মীদের প্রাযুক্তিক দক্ষতা বিবেচনা করে দেশের বুয়েটসহ যেসব আইটি বিশেষজ্ঞ সংস্থা আছে তাদের পরামর্শ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে মনে করেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান।

এদিকে বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সাইবারঝুঁকি মোকাবিলায় এ প্রকল্প সহায়তা প্রস্তাব দেওয়ার আগে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, রাষ্ট্র মালিকানাধীন ৯ ব্যাংকের আইটি বিভাগ এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল—বিসিসিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছে। ওই সময় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিশ্বব্যাংককে নিশ্চিত করেছে যে, সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম ও আর্থিক দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর সুশাসন নিশ্চিত করার বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

সর্বশেষ খবর