বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

ইউপিতে হাল ছেড়ে বিএনপি নেতারা ব্যস্ত পদ নিয়ে

মাহমুদ আজহার

ইউপিতে হাল ছেড়ে বিএনপি নেতারা ব্যস্ত পদ নিয়ে

আজ মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠেয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণা। এ ধাপেও অনেকটা হাল ছেড়েই দিয়েছে বিএনপি। বিএনপি নেতারা এখন ব্যস্ত কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির পদ-পদবি নিয়ে। নির্বাচনী মাঠ বাদ দিয়ে পদের টেনশনে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। অনেকেই ঢাকার পাশাপাশি লন্ডন মিশনেও ব্যস্ত। প্রচারণায় কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশে না পেয়ে ধানের শীষ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হতাশ। মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও আর ঝুঁকি নিতে নারাজ। নতুন করে মামলা-গ্রেফতার এড়াতে তারা প্রার্থীর পক্ষে কৌশলী ভূমিকা পালন করছেন। তবে প্রথম দুই ধাপের মতো ভোট ডাকাতির শঙ্কাও তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আছে। তাই ইউপি নির্বাচন নিয়ে ভাবনা নেই তাদের। উল্লেখ্য, তৃতীয় ধাপ থেকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিল বিএনপি। এ লক্ষ্যে সিনিয়র নেতাদের নেতৃত্বে বিভাগওয়ারী হাইপ্রোফাইলের ৯টি পর্যবেক্ষণ কমিটিও গঠন করা হয়। কেন্দ্র থেকে মাঠে যেতে তাদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়। নির্বাচনের প্রচারণার শেষ দিন আজ। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিকাংশ নেতাই মাঠে যাননি। কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে জেলা নেতাদের সমন্বয়ে কমিটিও গঠন করা হয়নি। গত ১২ এপ্রিল সেলের প্রধানদের আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে তাদের মাঠে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ চিঠিতে স্বাক্ষর করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগে গত ৮ এপ্রিল দলের সংশ্লিষ্ট এলাকার কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য, জেলা, উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কাছে একটি চিঠি দেন ইউপি নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মো. শাহজাহান। জানা যায়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগকে ক ও খ নামে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। ঢাকা-ক বিভাগে মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা হলেন ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ। ঢাকা-খ বিভাগের অধীনে টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ। এ বিভাগের দলনেতা চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক। চট্টগ্রাম বিভাগের-ক’র দলনেতা চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন। ক-বিভাগে চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি। খ’র দলনেতা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট হারুন আল রশীদ। খ-বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা উত্তর ও দক্ষিণ, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর। বরিশালের দলনেতা আরেক ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। খুলনায় শামসুজ্জামান দুদু, রংপুরে ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, রাজশাহীতে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সিলেটে ইনাম আহমেদ চৌধুরীকে দলনেতা করা হয়েছে। বিভাগভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সেলের সদস্য করা হয় সংশ্লিষ্ট বিভাগের সিনিয়র নেতা, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলা বিএনপির দুই শীর্ষ নেতাকে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘অবিলম্বে এলাকার  সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণাসহ নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবেন। সার্বিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, ক্ষমতাসীন দলের অন্যায় অত্যাচার, ভোট জালিয়াতি-ডাকাতি ও প্রভাব বিস্তারের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে নেতা-কর্মীদের সাহস জোগাতে হবে।

এসব কার্যক্রম সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতির সামনে তুলে ধরবেন। নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করাসহ  অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’

কিন্তু গত এক সপ্তাহেও গুটিকয়েকজন বাদে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা নির্বাচনী এলাকায় যাননি। এমনকি সংশ্লিষ্ট এলাকার সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও জেলা নেতারাও ঢাকায় অবস্থান করছেন। সবাই নিজেদের পদ-পদবির টেনশনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। মাঠপর্যায়ের কর্মী-সমর্থকরা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই নেতাদের। কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা বলেন, ‘নেতাদের কাছে ইউপি নির্বাচন এখন গৌণ বিষয়। কেন্দ্রীয় পদ-পদবির জন্য নেতারা মাঠে না গিয়ে ঢাকায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এ জন্য তৃণমূলের নেতাদের সমন্বয়ে মনিটরিং টিম গঠন করাও সম্ভব হচ্ছে না।’

ঢাকা বিভাগের মনিটরিং সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘চিঠি পেয়েছি। এখনো যেতে পারেনি। তৃতীয় ধাপে এলাকায় যাওয়ার আর সম্ভব নয়। চতুর্থ ধাপে চেষ্টা করব।’ রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুও চতুর্থ ধাপে এলাকায় যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য নেতাদের বক্তব্য একইরকম।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইউপি নির্বাচন নিয়ে বিএনপি হাল ছেড়ে দেয়নি। তবে যেভাবে সক্রিয় হওয়ার কথা ছিল, সেখানে হয়তো কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। এরই মধ্যে ধাপে ধাপে বিএনপির নির্বাহী কমিটি ঘোষণা হচ্ছে। অনেক কেন্দ্রীয় নেতা এখন ঢাকায়। এটাও একটা সমস্যা। কেন্দ্রীয় নেতাদের আরও গতিশীল হওয়া উচিত। আশা করছি, চতুর্থ ধাপ থেকে সবাই সক্রিয় হবেন।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর