বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

চালকের ঘুমে প্রাণ গেল ১২ জনের

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

চালকের ঘুমে প্রাণ গেল ১২ জনের

দুই বাসের সংঘর্ষে দুমড়ে-মুচড়ে যায় সায়মুন পরিবহনের এই বাসটি —বাংলাদেশ প্রতিদিন

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালি বাজারের অদূরে ১৩ মাইল এলাকায় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে দুটি বাসের সংঘর্ষে দুই নারীসহ ১২ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৫৩ জন। তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে ২১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ঘটনার পর থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারাগঞ্জের ১৩ মাইল এলাকায় ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুরগামী তৃপ্তি পরিবহনের একটি বাস ও কুমিল্লা থেকে ছেড়ে আসা দিনাজপুরগামী সায়মুন পরিবহনের একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বাস দুটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই দুই নারীসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর মারা যান আরও দুজন। নিহতদের মধ্যে নয়জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন সায়মুন পরিবহনের সহকারী আকুল মিয়া (২৬), তৃপ্তি পরিবহনের সহকারী চন্দন রায় (২৫), নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের পাশারীপাড়া গ্রামের কৃষিশ্রমিক মোহাম্মদ আলী কালা মিয়া (৪৫), কৃষিশ্রমিক আবদুল মতিন (৪০), কৃষিশ্রমিক বাবু মিয়া (২৭), লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার মধ্যগুড্ডিমারী গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক একাব্বর আলী (৬৫), নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার লিটন মিয়া (২২), ডোমারের মিজানুর রহমান (৪০) এবং তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালি ফারুকীয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক জিন্নাত রেহেনা (৩৫)। নিহত মোহাম্মদ আলী কালা মিয়ার স্ত্রী ফেন্সি বেগম স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ছুটে আসেন। তিনি বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। তিনি জানান, তার স্বামীসহ এলাকার ১০-১২ জন শ্রমিক ধান কাটার কাজ করতে বগুড়ায় যাচ্ছিলেন। প্রতিবছর বোরো মৌসুমে তারা বগুড়ায় যান। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আ স ম বরকতুল্লাহ জানান, চিকিসাধীন ৫১ জনের মধ্যে ২১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের নিওরো সার্জারি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

সায়মুন পরিবহনের চালক দায়ী : সায়মুন পরিবহনের যাত্রীরা অভিযোগ করেন, চালক ঘুমে টলছিলেন। রাস্তায় অন্য গাড়িকে সাইড দিতে গিয়ে কয়েকবার দুর্ঘটনার উপক্রম হয়। সায়মুন পরিবহনের বাসের যাত্রী ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়া বলেন, ‘আমি ঠাকুরগাঁওয়ে যাওয়ার উদ্দেশে ঢাকার সায়েদাবাদে সায়মুন পরিবহনে উঠে চালকের পাশে ইঞ্জিনের ওপর বসি। কিছুক্ষণ পর দেখতে পাই চালক ঘুমে টলছেন। যাত্রীরা তাকে গাড়ি থামিয়ে চোখে পানি দিতে বলেন। ঢাকা থেকে রংপুর আসার পথে গাজীপুরে, বগুড়া ও রংপুর শহরের মডার্ন মোড়ে গাড়ি থামিয়ে তিনবার চোখে পানি দেন চালক। এ ছাড়া বাসের ছাদেও যাত্রী ভর্তি ছিল। চালক দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন।’

হতাহতদের অর্থ প্রদান : লাশ বাড়িতে নেওয়ার জন্য নিহতদের পরিবারের প্রত্যেককে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে পাঁচ হাজার এবং তারাগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার হাজার করে মোট ৯ হাজার টাকা দেওয়া হয়।

৯ লাশ হস্তান্তর : বিকাল ৫টায় নয়জনের লাশ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে রংপুরের পুলিশ সুপার আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন। তিনজনের স্বজন না আসায় তাদের লাশ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

এদিকে ঘটনার পরপরই পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি গোলাম মোস্তফা ফারুক, জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার ও পুলিশ সুপার আবদুর রাজ্জাক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ হেল বাকি জানান, এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর