বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

সহকর্মীরাই হত্যা করে মুয়াজ্জিনকে

মসজিদের টাকার ভাগ নিয়ে দ্বন্দ্ব, গ্রেফতার ৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

সহকর্মীরাই হত্যা করে মুয়াজ্জিনকে

মসজিদ মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ ও দানের টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে খুন হন পুরান ঢাকার ইসলামপুরের ঝব্বু খানম মসজিদের মুয়াজ্জিন বিল্লাল হোসেন। তার সহকর্মীরাই মসজিদের ভিতর নৃশংসভাবে তাকে হত্যা করেন। এ মামলায় পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। এরা হলেন— মসজিদের সহকারী মুয়াজ্জিন মোশারফ হোসেন (২৩), খাদেম মো. হাবিবুর রহমান (২০), বিল্লালের বন্ধু হাফেজ সরোয়ার হালিম (২২) ও হাফেজ তোফাজ্জল হোসেন (২৩)। গ্রেফতার হওয়ার পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।

বিল্লালকে খুন করতে এর আগেও দুই দফা চেষ্টা হয়, তবে দুবারই বেঁচে যান ৫৭ বছর বয়সী এই মুয়াজ্জিন। ২৮ বছর ধরে বিল্লাল পুরান ঢাকার ইসলামপুরের ওই মসজিদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ৪ এপ্রিল মসজিদের সিঁড়িতে তার রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। গতকাল আদালতে হাজির করে হাবিব, মোশারফ ও তোফাজ্জলকে তিন দিন এবং সরোয়ারকে এক দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক পারভেজ হোসেন জানান, সরোয়ারকে হত্যাকাণ্ডের পরপরই ৫৪ ধারায় আটক করেছিল পুলিশ। মোশারফ হোসেনকে সোমবার রাতে নেত্রকোনায় তার গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তার দেওয়া স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে তোফাজ্জল এবং মঙ্গলবার রাতে নড়াইল থেকে হাবিবকে গ্রেফতার করা হয়। মসজিদ মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ ও দানের টাকার ভাগের লোভে খাদেম হাবিবের প্ররোচনা ও পরিকল্পনায় বিল্লালকে হত্যা করা হয়। মুয়াজ্জিন বিল্লাল মসজিদের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে থাকতেন। ৪ এপ্রিল ভোরে ফজরের সময় ইমাম নামাজ পড়াতে এসে সিঁড়িতে বিল্লালের লাশ দেখে থানায় খবর দেন।

গ্রেফতার মোশারফ জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন, খুনের সময় তিনি তৃতীয় তলায় নিজ কক্ষে ছিলেন। বিল্লালের চিত্কার শুনতে পেলেও ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তবে তার কাছ থেকেই হত্যা পরিকল্পনার বিষয়ে বিশদ তথ্য পাওয়া যায় বলে তদন্ত কর্মকর্তা জানান। মোশারফ পুলিশকে বলেছেন, ছয় মাস আগে ছয় হাজার টাকা মাসিক বেতনে তিনি ওই মসজিদে চাকরি নেন। আর খাদেম হাবিব ওই মসজিদে কাজ করছিলেন তিন বছর ধরে, তার বেতন মাসে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। খাদেমের কাজ করলেও হাবিব, বিল্লাল ও মোশারফকে এলাকার মানুষ মুয়াজ্জিন হিসেবে চিনতেন। পড়ালেখা শেষ না করায় হাবিবের পক্ষে কখনো প্রধান মুয়াজ্জিন হওয়া সম্ভব ছিল না। এ কারণে তার মধ্যে হতাশা ছিল বলে মোশারফ পুলিশকে জানিয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, বিল্লালকে হত্যা করতে পারলে মোশারফকে মুয়াজ্জিন বানানো হবে, আর মসজিদের আয়ের টাকা তারা ভাগ করে নেবেন— এমন লোভ দেখানোর পরই মোশারফ ওই পরিকল্পনায় রাজি হন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মোশারফ ও হাবিবের সঙ্গে বিল্লালের ধর্মীয় মতাদর্শেরও বিরোধ ছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। তবে টাকা ও ক্ষমতার লোভই এ হত্যার পেছনের মূল কারণ।

লালবাগ জোনের উপ-কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ গতকাল ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে চারজনকে গ্রেফতারের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ঝব্বু মসজিদের নিচের দুটি ফ্লোরে ৩৩টি দোকান থেকে প্রতি মাসে ৪২ হাজার টাকা ভাড়া আসে। এ ছাড়া মসজিদের দানবাক্স থেকেও আয় হয়। বিল্লাল বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েও বাড়তি রোজগার করতেন। মসজিদের কর্মীদের বেতন দেওয়ার পর অতিরিক্ত টাকা বিল্লাল নিজের অ্যাকাউন্টে জমা রাখতেন এবং বাইরের লোকের কাছে লাভে খাটাতেন। খাদেম হাবিব ও দ্বিতীয় মুয়াজ্জিন মোশারফ মসজিদে বিল্লালের এই একক আধিপত্য মেনে নিতে পারছিলেন না। এ কারণেই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।

মফিজ উদ্দিন বলেন, হাবিব, মোশারফ ও তোফাজ্জল কেরানীগঞ্জের একটি মসজিদে বসে বিল্লালকে হত্যার প্রাথমিক পরিকল্পনা করেন। বিল্লাল সুদের বিনিময়ে সরোয়ার হালিমকে টাকা দিয়েছিলেন। সরোয়ারও এ হত্যা পরিকল্পনায় যোগ দেন। বিল্লালকে মারার পর সরোয়ারের হাতে থাকা টাকা ভাগ করে নেওয়ার রফা হয়েছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর