বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

পানি নিয়ে প্রাণঘাতী খেলা

সাঈদুর রহমান রিমন

পানি নিয়ে প্রাণঘাতী খেলা

ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্যের কাছে জিম্মি এখন সারা দেশের মানুষ। মহাখালী পাবলিক হেলথ পরীক্ষাগার সূত্র জানায়, সারা দেশে বাজারজাত হওয়া বেশির ভাগ খাদ্যপণ্যই ভেজাল এবং স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটদের তথ্য হচ্ছে, বাজারে ভেজালমুক্ত খাদ্যসামগ্রী পাওয়াটাই কষ্টকর। ভেজালবিরোধী অভিযানকালে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রায়ই দেখেন, বাজারজাত করা ৭৮ ভাগ খাদ্যসামগ্রী ভেজাল ও বিষাক্ত কেমিক্যালের সংমিশ্রণে তৈরি।

ফলমূল, দুধ, মাছে বিষ, অন্যান্য খাদ্যপণ্যও ভেজালমুক্ত রাখা যায়নি। এমনকি যে পানির অপর নাম ‘জীবন’ তা-ও নিরাপদ থাকছে না। যত্রতত্র কারখানা বসিয়ে পুকুর-ডোবা এবং ওয়াসার পানি বিশুদ্ধকরণ ছাড়া বোতলজাত করেই ‘বিশুদ্ধ মিনারেল পানি’ বলে বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। প্লাস্টিক জার (বড় আকারের বোতল) ভরা পানি বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতে পৌঁছানোর মাধ্যমেও চলছে দূষিত পানির রমরমা ব্যবসা।

সেসব বোতল-জারের পানি জীবন রক্ষার পরিবর্তে নানা অসুখ-বিসুখের সৃষ্টি করছে। কিন্তু জীবন রক্ষাকারী পানি নিয়ে ‘প্রাণঘাতী খেলায়’ মত্ত নকল কারখানাগুলো বন্ধে বিএসটিআইর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা না থাকার অভিযোগ রয়েছে। মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে নকল ও ভেজাল কারখানার মালিক ধরা পড়লেও জরিমানা দিয়ে আবার তারা ব্যবসা নামক প্রতারণায় মেতে ওঠেন। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সূত্র জানায়, বাজারে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হওয়া ৭টি কোম্পানির বোতলজাত পানি পরীক্ষা করেও দেখা গেছে সেসবের কোনোটাই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এসব বোতল পানি তৈরির সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত নমুনা অনুসরণ করা হয়নি। প্রয়োজনীয় লেড, ক্যাডমিয়াম ও জিঙ্ক উপাদানের অস্তিত্ব মেলেনি। এ পানিতে আয়রন, পিএইচ, ক্লোরিন, ক্যালসিয়াম-ম্যাগনেসিয়ামও আছে নামকাওয়াস্তে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের পরীক্ষাগারে বোতলজাত পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ‘অতি নিম্নমানের পানি’ হিসেবেও চিহ্নিত হয়েছে। বিএসটিআই কর্মকর্তারা দেশের সর্বত্র নিম্নমানের পানি বাজারজাত হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেছেন, বেশির ভাগ পানি কোম্পানি নকল এবং ভুয়া। সারা দেশে বর্তমানে ২৮৭টি বৈধ পানি বোতলজাতের কারখানা থাকলেও শুধু রাজধানীতেই পানির জার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা তিন হাজারেরও বেশি। ওয়াসার উপ-মহাপরিচালক ড. ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ‘কোনো রকম অনুমোদন ছাড়াই ওয়াসার সরবরাহ লাইনের পানি গামছায় ছেঁকে বোতলে ভরে বাণিজ্য করা হচ্ছে।’

শরবত-জুস থেকেও সাবধান! : প্রচণ্ড গরমে তেষ্টা মেটাতে নগরীর ব্যস্ততম রাস্তায়, ফুটপাথে বা অলিগলির মোড়েই ‘আখের রস’ আর হরেক রকমের ‘শরবত’ বিক্রির দৃশ্য চোখে পড়ে। ঘৃতকুমারির পাতা, ইসুবগুলের ভুসি, ফলের টুকরো-রসসহ বাহারি সব পানীয় নানারকম জীবাণু সংক্রমিত করছে। বেশির ভাগ শরবতই তৈরি হচ্ছে দূষিত পানি দিয়ে। মাছ বাজারের ব্যবহূত বরফের সাহায্যে তৈরি হচ্ছে আখের রস। জাতীয় হূদরোগ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডা. আবদুল্লাহ জানান, ফুটপাথের শরবতে হেপাটাইটিস-ই ও হেপাটাইটিস-এ রোগ সংক্রমণের প্রবণতা রয়েছে। ব্যবহূত রং কিডনি ও লিভারেও জটিলতা সৃষ্টি করে। রেক্টিফাইড স্পিরিট ব্যবহার করে দেদার তৈরি হচ্ছে এনার্জি ড্রিংকস ও ফিলিংস জুস। এর আগে র‌্যাবের অভিযানে গাজীপুর, শ্রীপুর, কালিয়াকৈর এলাকায় ১০টি নকল জুস কোম্পানি সিলগালা করে দেওয়া হয়। তবু ওরা থামছে না।

মসলায় ভেজাল আরও বেশি : মসলায় ভেজাল আরও বেশি। অধিক মুনাফার জন্য একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী মসলায় কাপড়ের বিষাক্ত রং, দুর্গন্ধযুক্ত পটকা মরিচের গুঁড়া (নিম্নমানের মরিচ), ধানের তুষ, ইট ও কাঠের গুঁড়া, মোটর ডাল ও সুজি ইত্যাদি মেশাচ্ছেন। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, ভেজাল মসলা কিনে ক্রেতারা শুধু প্রতারিতই হচ্ছেন না, এতে তৈরি হচ্ছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। কারণ ভেজাল মসলায় মেশানো ক্ষতিকর খাদ্যদ্রব্য ক্যান্সার, কিডনি ও লিভারের রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী।

রাজধানীর শ্যামবাজার, কারওয়ানবাজার, মৌলভীবাজার, টঙ্গী ও মিরপুর এলাকার বিভিন্ন পাইকারি মসলার বাজার এবং ভাঙানোর কারখানায় এসব ভেজাল মেশানো হচ্ছে। তবে হোটেল-রেস্তোরাঁয় ভেজাল মসলা মেশানোর হার বেশি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর